স্টাফ রিপোর্টার::
সনামগঞ্জের শাল্লায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে ঘুষ দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় মামলার আসামি হয়েছেন বিপুল ভোটে নির্বাচিত বাহারা ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু। পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাল্লা উপজেলার এসও আব্দুল কাইউম বাদী হয়ে বৃহষ্পতিবার রাত ১টায় এই মামলা দায়ের করেছেন। শাল্লায় প্রতিবাদী হিসেবে পরিচিত তরুণ রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। উল্লেখ্য গত ৫ জানুয়ারি প্রায় ৬ হাজার বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু।
জানা গেছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়ে পিআইসির সঙ্গে ঘুষ লেনদেন হচ্ছিল বলে খবর পান নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু। সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পান কয়েকজন পিআইসির সঙ্গে উচ্চবাচ্য করছেন এসও আব্দুল কাইয়ুম। এসময় কার্যালয়ে ডুকে ইউপি চেয়ারম্যান ফসলরক্ষা বাধের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি না করার অনুরোধ করেন এসও আব্দুল কাইয়ুমকে। আব্দুল কাইয়ুমের বিরুদ্ধে গত তিন বছর ধরে পিআইসি গঠন ও অনুমোদনে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আছে। টাকার সঙ্গে হাওরের তাজা মাছও তিনি ঘুষ নেন এমন সংবাদ কার্টুনসহ পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছিল।
বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় এর জের ধরে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে পিআইসির কয়েকজনের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন আব্দুল কাইয়ুম। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চেয়ারম্যান নান্টু এসওর গায়ে হাত দেননি। তিনি উত্তেজিত পিআইসির লোকদের বারণ করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা এসময় আরো জানান, ক্ষুব্দ হয়ে এসও চেয়ারম্যানকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন এবং নিজের শার্ট ও শরিরের কাপড় নিজে নিজেই ছিড়ে ফেলেন। এক পর্যায়ে এসও অফিস কক্ষের চেয়ার টেবিল, আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিড়ে ফেলেন।
এসও আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আমি কোন দুর্নীতি ও ঘুষের সঙ্গে জড়িত নই। আমাকে মারধর করেছেন চেয়ারম্যান ও তার লোকজন। তাই আমি মামলা দায়ের করেছি।
অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু বলেন, আমি চিল্লাচিল্লি শুনে অফিসে ডুকে দেখি ঘুষ লেনদেন নিয়ে এসও সাহেব তর্কাতর্কি করছেন। আমি তাকে ঘুষ দুর্নীতি থেকে মুক্ত থেকে কৃষকের ফসলরক্ষায় সঠিকভাবে বাধে কাজ করার অনুরোধ জানাই। তিনি উল্টো আমাকে লাঞ্চিত করার চেষ্টা করেছেন। গালাগাল করে আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। পরে শুনি রাতে আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
শাল্লা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ শামসুদ্দোহা বলেন, আমাদের এসওকে মারধরের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষ দেখছে। এসও ঘুষ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কি না উর্ধতন কর্তৃপক্ষ দেখবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য সম্প্রতি শাল্লায় হাওরের ফসলরক্ষা বাধের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সভা সমাবেশে কথা বলেছেন বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু। গত ১২ জানুয়ারি তার নেতৃত্বে ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে ঘুষ দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ করেনে। সব চেয়ারম্যান মিলে লিখিত অভিযোগও করেন। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফসলরক্ষা বাধ নির্মাণ কমিটির উপজেলা সভাপতি আল মোক্তাদীর হোসেনকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হলেও সাধারণ সম্পাদক এসও আব্দুল কাইয়ুম এখনো বহাল তবিয়তে আছেন।