পীর ভাই আমার উপর ভরসা করতেন, আমার সাংবাদিকতার উপর উনার অগাদ আস্থা ছিলো! আমার সাংবাদিকতার গুরু এবং হাতেখড়ি, সেই সাথে গড়ে তোলার কারিগর প্রথিতযশা সাংবাদিক উজ্জ্বল মেহেদী, আর সাংবাদিক হিসাবে পুন:জন্ম দিয়েছেন পীর হাবিব ভাই!
আমি যখন স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ব্রিটেনে আসি, তখন চ্যানেল এস এর অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসাবে কাজ নিয়ে আসি। ব্রিটেনে থেকে বাংলা সাংবাদিকতা করবো এটা ধারনার মধ্যে ছিলো না। এখানকার পত্রিকা যেমন ৫৫ বছরের অধিক সময় ধওে প্রকাশিত সাপ্তাহিক জনমতের ডেডলাইনের দিন গিয়ে দেখতাম এক রুমে বসে ৭-৮ জন ঠাসাঠাসি করে কাজ করেন! ঢাকার সাংবাদিকতার সাথে এই পরিবেশ বেমানান! তাই এখানে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার কোন ভবিষত নেই এমনটাই মনে হতো! আর যারা টুকটাক বাংলাদেশের পত্রিকার জন্য কাজ করতেন তাদের মধ্যে একমাত্র সৈয়দ আনাস পাশা অনলাইন নিউজ বাংলানিউজডটকম থেকে কিছু অর্থ সম্মানী হিসাবে পেতেন! প্রথম আলো তখন পর্যন্ত কাউকে নিয়োগ দেয়নি, কিছুদিন লিডসের গোলাম কিবরিয়া ও লণ্ডনের তানভীর আহমেদ প্রথম আলোতে সংবাদ পাঠাতেন, তারাও সম্মানী পেতেন বলেই আমার ধারনা, কারন প্রথম আলো সব সময়ই যারা লিখতেন তাদের সম্মানী দিতো।
তাই এই বিলেত থেকে আর সাংবাদিকতা করবো না এমন সিদ্ধান্তে ছেদ পড়লো ২০১১ সালে একদিন পীর ভাইয়ের হঠাত ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারের নকে! বললেন বাংলাদেশ প্রতিদিনে নিউজ পাঠাও এখন থেকে! আমার বিলেত পর্বের সাংবাদিকতা শুরু করলাম আবার! ব্রিটেনে বসে তারেক রহমানের অনেক নিউজ আমি ব্রেক করেছি, ব্রেক করেছি ততকালীন হাসানুল হক ইনু হামলার আদ্যাপান্ত!
হাবিব ভাই বলতেন, তোমার সাংবাদিকতা অনেক ভালো, তুমি ঢাকায় কাজ করলে ভালো করতে! পীর ভাইয়ের এই মূল্যায়ন থেকেই আমার সম্পাদক নঈম নিজাম ভাইয়ের মূল্যায়ন। যেকোন সংবাদের ক্ষেত্রে তিনিও আমার উপর ভরসা করেন।
পীর ভাইয়ের নামের সাথে পরিচয় সাংবাদিকতা শুরু করার সময়ই, অগ্রজ সাংবাদিকদের মুখে।
আমরা সাংবাদিকতা করতাম পংকজ দা’র সুন্দরবন কুরিয়ারের অফিসে বসে। সেখানে প্রয়াত সাজু ভাই, মনসুর ভাই, পীর মিসবাহ ভাই, উজ্জ্বল ভাই, খলিল ভাইসহ আমরা কয়েকজন বসতাম। সেই আড্ডায় পীর ভাই উজ্জ্বল নাম! ঈদে সুনামগঞ্জ আসলে আমিও যেতাম বাসায় অগ্রজদের সাথে! গল্প শুনতাম ঢাকার মিডিয়ার! সেই গল্প থেকেই হয়তো মনের মধ্যে আকাংখা তৈরি হয় আরো বড় জায়গায় কাজ করতে হবে!
২০০২ সালে প্রথম আলোর ঢাকা অফিসে প্রদায়ক প্রতিবেদক হিসাবে কাজ শুরু করি। ঠিক এসময় দৈনিক নতুন ধারা পত্রিকার সূচনা হয়! পীর ভাই চীফ রিপোর্টার হিসাবে যোগ দেন, যুগান্তর ছেড়ে! এসময় সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের তখনকার সভাপতি সৈয়দ তাহের আলম মনসুর ভাইয়ের রেফারেন্স নিয়ে যাই পীর ভাইয়ের কাছে! চাকুরি হয় দৈনিক নতুন ধারায়। তবে পত্রিকাটি আর বের হয়নি।
ফিরে আসি লণ্ডন পর্বে, পীর ভাইয়ের যেমন সুনামগঞ্জে আড্ডা, তেমন আড্ডা ঢাকায়, তেমন আড্ডা নিউইয়র্কে, তেমন আড্ডা ল-নে! লন্ডনে আসেন ৭/৮ দিনের জন্য, হৈ হৈ করে মাতিয়ে যান সবাইকে! মধ্যরাতের আড্ডা ছাড়া পীর ভাইযের হয়না! বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রথম ৬ মাসের পর থেকেই একটা ভালো টাকা সম্মানীর ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় এখন গত ৩ বছরের অধিককাল ধরে এখানে বাংলাদেশ প্রতিদিন বের হয়। দায়িত্বে আমি, ভালো স্যালারী পাশাপাশি এই সম্মানের মূল্য আমার কাছে অনেক বেশী!
লণ্ডনের সাংবাদিকদের সাথে অসাধারণ সম্পর্ক ছিলো পীর ভাইয়ের! সেই যৌবন থেকে নিউজ কাভার করতে সরকারী দলের সাথে , কখনো স্বাধীন ভাবে সাংবাদিকতা করতে এসেছেন ব্রিটেনে! সখ্যতা গড়ে উঠেছিলো মহিব চৌধুরী ভাই, সৈয়দ নাহাস পাশা ভাই, নজরুল ইসলাম বাসন ভাই, নবাব উদ্দিন ভাই, বেলাল আহমেদ ভাই, মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী ভাই, সৈয়দ মনুসর আহমেদ ভাই, সৈয়দ আনাস পাশা ভাইয়ের সাথে। ফরিদ আহমেদ রেজা ও আহমদ ময়েজ হচ্ছেন উনার খালাতো ভাই। পরবর্তী প্রজন্মের সাংবাদিকদের মধ্যে স্নেহ করতেন মুহাম্মদ জুবায়ের ভাই। বলতেন, জুবায়েরকে চিনি সিলেট থেকে, মেধাবী সাংবাদিক, তাকে যুগান্তরে নিতে চেয়েছিলাম!
সাংবাদিক জুয়েল রাজের সাথে ছিলো যোগাযোগ।
বঙ্গবন্ধুর সাবেক সহকারী প্রেস সচিত, লণ্ডন প্রবাসী প্রয়াত সাংবাদিক আমিনুল হক বাদশা ভাই জীবিত থাকার সময় দেখা হলেই জিজ্ঞেস করতেন, পীরের খবর কি? মাঝে মধ্যে পীরের খবর কি জিজ্ঞেস করেই নিজের ফোন থেকে সরাসরি কল দিতেন বাংলাদেশে পীর ভাইয়ের ফোনে! কথা বলে বলতেন, মাসুম আমার সামনে বসা, কথা বলো!
লণ্ডনে আসলে আড্ডার ফাকে তিনি কাজও করতেন, আমাকে এ্যাসাইনমেন্ট দিতেন। সর্বশেষ ভারতীয় সাবেক কূটনৈতিক শশাংক ব্যানার্জীর দীর্ঘ সাক্ষাতকার নিয়েছিলেন লন্ডনে! সাথে ছিলাম আমি।
অন্তর ব্রিটেনে ব্যারিষ্টারী পড়ে গেলো, তার দায় দায়িত্ব কিছুটা আমার মামা শফির উদ্দিনের উপর, কিছুটা আমার উপর! এতোটাই ভরসার জায়গায় ছিলাম!
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাথে আমার সংস্লিষ্টতা ১২ বছর। এই ১২ বছরে আমার সাংবাদিকতার উপর ভরসা করেছেন, আমার সাংবাদিকতাকে পেশাদারিত্বের জায়গায় দাড় করিয়েছেন! সবচয়ে বড় প্রাপ্তি তিনি আমার উপর ভরসা করছেন!
আ স ম মাসুম: ইউরোপ ব্যুারো চীফ, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন