মোঃ মোশফিকুর রহমান স্বপন:
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় পাউবো’র অধীনে থাকা রুই বিল হাওর উপ প্রকল্প নামক হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজে মাটির পরিবর্তে নদীর চরের বালু দিয়ে কাজ করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
এ অভিযোগটি উঠেছে ওই প্রকল্পের ১৪৩ নম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মো. রফিক মিয়ার বিরুদ্ধে।
তিনি ওই বাঁধ মেরামত কাজে মাটির পরিবর্তে পাশের উবধাখালী নদীর চর থেকে একটি এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলণ করে তা ৪-৫ টি ড্রাম ট্রাক দিয়ে ওই বাঁধে এনে যেনতেন ভাবে বালু ফেলে বাঁধের মেরামত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এ অনিয়মের বিষয়ে ওই প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে থাকা সুনামগঞ্জ পাউবো’র উপ-সহকারি প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে বাধা নিষেধ করার পরও তা মানছেননা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রফিক মিয়া।
আর মাটির পরিবর্তে এভাবে বালু ফেলে বাঁধ নির্মাণ কাজ করা হলে চৈত্র মাসের প্রথম দিকেই উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির তোরে আগাম ফসলহানীর আশংকা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, বাঁধ সংলগ্ন হাওরে যাদের জমি রয়েছে এমন লোকজনের সমন্বয়ে প্রকল্প কমিটি করার কথা থাকলেও ওই প্রকল্প কমিটির সভাপতি মো.রফিক মিয়ার (পিআইসি) এ হাওরে কোনো জমি নেই, এমনকি সে এ এলাকার বাসিন্দা না হওয়া সত্ত্বেও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাকে প্রকল্প কমিটির সভাপতি করা হয়েছে বলেই সে বাঁধ নির্মাণ কাজে এ ধরনের অনিয়ম করে যাচ্ছে। এ ছাড়াও সময়সীমার আর মাত্র ৫ দিন বাকি থাকলেও এখনো পর্যন্ত ওই বাঁধ নির্মাণ কাজের অর্ধেক কাজও শেষ করতে পারেননি পিআইসি।
প্রকল্প সংলগ্ন গলইখালী গ্রামের কৃষক স্বদেশ চন্দ্র সরকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বান্দে আইছৈন যহন নিজেরাই ভালা কইরা দেইখ্যা যাইন, বালু মাটি দিয়ে কিভাবে বান্দের (বাঁধের) কাজ করা হচ্ছে। এইভাবে বান্দের কাজ করা অইলে আগাম বন্যার পানি আইয়্যা এই বান (বাঁধ) ভাইঙা আমরার সব শেষ অইয়্যা যাইব।
ওই বাঁধে মাটি ফেলার দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ড্রাম ট্রাক চালক বলেন, বাঁধের কাছাকাছি কোথাও মাটি না থাকায় প্রকল্পের সভাপতির নির্দেশেই আমরা পাশের নদীর চর থেকে বালু মাটি এনে ওই বাঁধ মেরামতের কাজ করছি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার থাল, কাইল্যানী, সোনামড়ল, গুরমা, গুরমার বর্ধিতাংশ, গোড়াডুবা, জয়ধনা ও ধানকুনিয়া হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ১৫৭টি প্রকল্প নির্ধারণ করেছে। ১৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজে প্রয়োজন হবে ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৮০০ ঘনমিটার মাটির। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি ৩০ লাখ ৪১ হাজার টাকা। পাউবো’র বেঁধে দেওয়া সময়সীমা অনুযায়ী গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে এসব প্রকল্পের কাজ শুরু করে চলতি মাসের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার কথা। এরমধ্যে উপজেলার মধ্যনগর থানা সদর ইউনিয়নের অধীনে থাকা রুই বিল হাওর উপ-প্রকল্প নামক ফসল রক্ষা বাঁধের প্রায় দেড় কিলোমিটার জায়গা মেরামত ও একটি ভাঙা স্থান ভরাট করতে পাউবো থেকে এ কাজের জন্য প্রায় ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর নিয়মবহির্ভূতভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি (পিআইসি) করা হয় পার্শ্ববর্তী চামরদানী ইউনিয়নের আলী আহাদপুর গ্রামের মো. রফিক মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে। তবে নিয়মানুযায়ী হাওরে যাদের জমি আছে এমন লোকজনদের সমন্বয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও ১৪৩ নম্বর প্রকল্প কমিটির সভাপতি মো রফিক মিয়ার ওই হাওরে কোনো জমি নেই, এমনকি তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা না হওয়া সত্তেও নিয়মবহির্ভূতভাবে তাকে ওই প্রকল্পের সভাপতি করা হয়।
বাঁধের কাজে কিছু বালু মাটি থাকার কথা স্বীকার করে ১৪৩ নম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি (পিআইসি) মো. রফিক মিয়া মোবাইল ফোনে বলেন, আমি তো এই প্রকল্পের নামে মাত্র সভাপতি (পিআইসি)। প্রকল্পের মূল মালিক হলেন, সাংবাদিক আতিক ফারুকীর বড় ভাই ও মধ্যনগর থানা আওয়ামীলীগের নেতা মাহাবুব ফারুকী। আপনারা যে বাঁধের কাজ দেখে গেছেন তা আমি মাহাবুব ফারুকীকে জানিয়েছি এবং তিনি আপনাদের সাথে কথা বলবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। তবে ভাই আমি গরীব মানুষ। দয়া করে এ ব্যাপারে কিছু লিখবেননা। আমি আপনার সাথে এসে দেখা করব।
উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব সুনামগঞ্জ পাউবো’র উপ সহকারি প্রকৌশলী মো.ইমরান হোসেন বলেন, ১৪৩ নম্বর প্রকল্পের নির্মাণ কাজে বালু দেয়ার বিষয়ে আমাদের এসও জাহাঙ্গীর সাহেব নিজে বাঁধে গিয়ে পিআইসিকে নিষেধ করে এসেছেন। এরপরও যদি মাটির পরিবর্তে বালু দিয়ে বাঁধের কাজ করা হয়ে থাকলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।
উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির হাসান বলেন, খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ###