বিশেষ প্রতিনিধি::
সরকারি হিসেবে সুনামগঞ্জের ১৪টি হাওরের ৫ হাজার ১০০ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। তবে বেসরকারি হিসেবে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার হেক্টর। কৃষি বিভাগের মতে প্রতি হেক্টরে ৬ টন ধান উৎপাদন হয়। হেক্টর প্রতি চালের ফলন হয় ৪ মে. টন। ডুবে যাওয়া হাওরের ফসলের আর্থিক মূল্য শত কোটির টাকার বেশি বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে গত ২ এপ্রিল টাঙ্গুয়ার হাওরের তাহিরপুর উপজেলার নজরখালি ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে এই হাওরের মধ্যনগর উপজেলা ও তাহিরপুর উপজেলার ১২০ হেক্টর জমির কাঁচা বোরো ধান তলিয়ে যায়। এ পর্যন্ত ১৪ টি হাওরের প্রায় ১৫ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যাদের কাঁচা বোরো ফসল পাহাড়ি ঢলে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। এছাড়াও সুনামগঞ্জ সদর উপজেরার ছোট কানলার হাওর, ছাতক উপজেলার পাগুয়ার হাওর, শাল্লা উপজেলার পুটিয়ার হাওর, কৈয়াবন হাওর, ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার থাল হাওর এবং দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরসহ ১৪টি হাওরের মোট ৫ হাজার ১০০ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে যায়। বেসরকারি হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার হেক্টর। তবে ডুবে যাওয়া হাওরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফসল নষ্ট হয়েছে দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরে। বৃহষ্পতিবার কালনী নদীর তীরের বৈশাখীর বাঁধ ভেঙ্গে এই ফসলহানির ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনটি ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রামের কৃষকের একমাত্র ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। শুক্রবার বিকেলে তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের টাঙ্গুয়ার হাওরের এরাইল্যাকোণা বাঁধ ভেঙ্গে কিছু ফসল তলিয়ে গেছে। এই বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের বাইরের বাঁধ এবং স্থানীয় কৃষকরা করেছিলেন বলে জানা গেছে।
এদিকে শুক্রবার সকালে বাঁধ ভেঙ্গে ফসল ডুবে যাওয়া দিরাই উপজেলার চাপতির হাওর পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ উপমমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। এসময় কৃষকরা তাকে বৈশাখী বাঁধের বদলে কচুয়া গ্রামের পাশের চারি কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বেরিবাধটি স্থায়ীভাবে করে দেওয়ার অনুরোধ জানান। বৈশাখী ফসলরক্ষা বাঁধের কোরে (বাঁধ ঘেঁষা গহীন গর্ত) প্রতি বছর বাঁধটিকে ঝূকিপূর্ণ রাখলেও যথাযতভাবে কাজ করা হয়না বলে মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন কৃষকরা। তাছাড়া প্রকৃত কৃষকের বদলে সিন্ডিকেট দিয়ে কাজ করে হাওরের বরাদ্দ লোপাট করা হয় বলেও অভিযোগ করেন তারা। কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে মন্ত্রী আগামীতে একটি প্রকল্পে এই চার কিলোমিটারকে অন্তর্ভূক্ত করে নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপস্থিত প্রধান প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেন।
এসময় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের উদ্দেশ্যে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা করে ডিসি সাহেব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ত্রাণ দিচ্ছেন। হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ত্রাণের বিষয়ে গত পরশু আমি জাতীয় সংসদে ত্রাণমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। গতকাল (বৃহষ্পতিবার) মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে কথা বলেছেন। উপমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত ও ফসলহারা কৃষকদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। আমি আজ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখে গেলাম। যারা বোরো ফসল হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরকে আমরা সহযোগিতা করব।
অন্যদিকে শুক্রবার দিনব্যাপী ডুবে যাওয়া বিভিন্ন হাওরের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন মহাপরিচালক বেনজির আলম, সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব চন্দ্র সোমসহ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।