ধন্যবাদ চন্দ্রসোনার থাল হাওরের সাহসী কৃষকবন্ধুকে। হাওরের দুর্নীতির এমন স্টষ্টভাষী কৃষকেই ‘অসহায় হাওর’ প্রত্যাশা করে।
তিনিই একমাত্র কৃষক ‘পেটে ক্ষিধা মুখে লাজ’ না রেখে দুর্নীতিগ্রস্থ পিআইসি’র লোকেদের নামসহ মন্ত্রীর সামনে তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন। তাঁর উপর আঘাত হতে পারে আমি জেলা “হাওর বাঁচাও আন্দোলন”র পক্ষে জেলা পুলিশ সুপার সাহেবকে ধরমপাশা উপজেলার এই কৃষকবন্ধু জনাব আব্দুল মালেককে প্রটেকশন দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। তারপর আর চিন্তা করতে হবে না এসপি সাব ‘খেতে বসলে বেড়াল তাড়াতে মানুষ একটি ছিটকি নিয়েই বসে, কিন্তু বাঘে হামলা করলে সেভাবেই তৈরি হয়। এবারে হাওরবাসী এসব ঠুনকো বিড়াল সমেৎ শত্রুদের প্রতিহত করার শক্তি নিয়ে নিজবলে বলীয়ান হয়েই রুখে দাঁড়াবে।
মধ্যনগরেও শাইলানী গ্রামের এক কৃষক জনাব আবুল হাসিম’র (01718-780974) উপর প্রত্যক্ষ আঘাতের ঘটনা ঘটেছে। ওসি, মধ্যনগরকে অনুরোধ করছি একটু তৎপর হয়ে বিষয়টির খুঁজ নিতে।
হাওরবাসীর এবারের শ্লোগান হোক “আর নয় প্রতিবাদ, এবার হবে প্রতিরোধ”। আমরাই একসময় ‘১৭ সনের হাওর বিপর্যয়ের পর উয়ান্তর না দেখে উন্নত চিন্তা করে জেলার সর্বস্তরের মানুষ হাওরপাড়ের কৃষকদের নিয়ে পিআইসি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সাথে আমরা জেলা প্রশাসন, জেলার পুলিশ প্রশাসনকে তদারকির অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু এখানেও হাসনের বিখ্যাত গানের কলি–‘বিলাই উন্দুরায় মিইল্যা এক টাইলে বাস করে’ ফলে এবারেও দেখছি এমনই হলো ভালো কিছু হলো না। কাজের ভালোমন্দ দেখতে গিয়ে নয়ছয়কারীদের সত্যঘটনা তুলে ধরে উল্টো আমার কৃষককেই হেনস্তা হতে হচ্ছে। আর কী করা যায় ? এবারে তদারকির জন্য আমার দেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে মাঝ ডিসেম্বর থেকে মধ্য মার্চ ৩ মাসের জন্য দায়িত্ব দেওয়ার অনুরোধ করতে হবে। ‘বাঙালী ডাণ্ডায় ঠাণ্ডা’ অপমানকর এ কথাটার প্রতি শ্রদ্ধা ছিলো না বেড়ায় যখন পিঠ ঠেকে যায় কী আর করা ?
তারপর থেকে জেলার হাওরের ৭২৯ টি বাঁধে পর্যায়ক্রমে ‘রাবার ড্যাম’ দেওয়া ও নদী খনন করে কান্দায় দু’টি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পায় ১৫০০ কিঃমিঃ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার প্রস্তাব করছি । দেখে দেখে দুর্বল জায়গাগুলির দু’পাশে সিসি ব্লক দিয়ে স্থায়ী ব্যবস্থা করতে হবে এখানেএ আর্মি সার্বিক তত্ত্বাবধান করবে। আমার একটি লেখায় ক্যালকুলেশন করে দেখিয়েছিলাম জেলার ৩২ টি নদীকে খনন করে ২৫ ফুট কাম্য নাব্যতায় নিয়ে গেলে ২০ বিলিয়ন ঘনফুট মাটি উঠবে। এই মাটি দিয়ে ৬ ফুট উচ্চতা ১০০ প্রশস্ত ৫৩১৩ মাইল দীর্ঘ বেড়িবাঁধ করা যায়। মাটিটাকে সম্পদ মনে করে সুনামগঞ্জের ২৮৮৮ টি গ্রামের চারপাশ ভরাট করে দেয়া যায়। উঁচুনিচু অনেক কান্দার অনাবাদি জমি উঁচু ও সমতল করে দেওয়া যায়। সাথে ১৮৯৬ টি ছোটবড় বিল খনন করে দিলে প্রায় নদীখননের সমপরিমান মাটি উঠবে। তাতে সুনামগঞ্জের বেড়িবাঁধগুলি করে কান্দাগুলি স্থায়ী ভরাট করে গাছ-বন লাগিয়ে দিলে হাওরের একটি স্থায়ী কাজ হতো। আজ ‘২২ সন পর্যন্ত হাওরের বাঁধ-বেড়িবাঁধে ৫০০/৫৫০ কোটি টাকা ব্যয় করেও হাওর-উন্নয়নের কোনো চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায় না। আর বেড়িবাঁধের মাটি আগামী দিনগুলিতে আর মিলবেও না। তখন নদীখননের মাটি ছাড়া আর মাটিও পাওয়া যাবে না। তাই বলছি এখনই নদী খননকে প্রাধান্য দিলে একসাথে দু’টি কাজই করা খুব জরুরী।
দেখুন প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় অথচ বর্ষার পর একটু মাটিও বেড়িবাঁধে থাকে না। কারণ ভেজা মাটি বসাতে দুরমুজ মারে না এমন কোনো ব্যবস্থাও নেই। জিজ্ঞেস করলে বলা হয এজন্য কোনো নির্দেশ নেই। আমরা কত বলেছি রোলার ব্যবহার করতে উত্তর হলো নির্দেশ নেই এত রোলার ডিপার্টমেন্টে নেই। কথা বলেছি এলজিইডি’ রোডস এন্ড হাইওয়ে’র সঙ্গে তারা বলে সমণ্বিত কাজ হলে রোলারের অভাব হবে কেন ! তাহলে হাওরে এই ফাঁকিবাজির কাজ করে প্রধানমন্ত্রীকে কি ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে না ? আগামী দিনে যে টাকাই বরাদ্দ হোক স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি, রোডসএন্ড হাইওয়ে, বিআইডব্লিটিএ এই চার ডিপার্টমেন্টকে একত্রিত করে সমণ্বিত পরিকল্পনায় হাওরের বাঁধ-বেড়িবাঁধের কাজ করতে রাষ্ট্রকে বাধ্য করার আন্দোলনে নামতে হবে।
তাই উল্লিখিত দাবি নামার ভিত্তিতে আমাদের গড়া আমার প্রাণের সংগঠন ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’কে সত্য কথা বলার জন্য কৃষকের প্রতি হাওরে যা চলছে তাকে ‘ভিক্ষা চাইনা, কুত্তা সামলাও’ চিন্তায় নিয়ে জেলার কেন্দ্রীয় কমিটি, জেলা কমিটি, উপজেলা ও আঞ্চলিক কমিটিসমূহকে কৃষকের পাশে থেকে আন্দোলনে মাঠে নামতে বিনীত অনুরোধ করছি। ‘১০-১৭ এপ্রিলের মধ্যে আবাও বন্যার ঝুঁকি আসছে’ সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের এমন আগাম সতর্কবার্তায় হাওরবাসী শঙ্কিত ও অসহায়ত্ব অনুভব করছে।
এ অবস্থায় হাওরে কৃষকের উপর নানা ঘটনা ঘটতেই পারে। ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে হাওররক্ষা বাঁধের নামে দায়সারা কাজ করেছে। বিপদ মূহুর্তে গ্রামের কৃষকদেরই যদি ডেকে বাঁধ পুনর্নিমাণ করতে হলো এত মোটা অংকের টাকা থেকে এই গ্রামবাসী কত টাকা পেল ? অদৌ পেল না ? কেন ? বৈশাখে একজন কামলার রোজিনাও তো ৮০০/১০০০ টাকা থাকে এলাকায়। এতবড় টাকা থেকে এঁদের বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করানো হলো। কেন এদের জন্য একটুকু টাকাও থাকলো না কেন ? এগুলি কে বিবেচনা করবে ? প্রধানমন্ত্রী ? প্রধানমন্ত্রী তো তাঁর কাজ তিনি করছেন হাওরের জন্য বিশাল বরাদ্দ দিয়েছেন যথাস্থানে বণ্টেনের জন্যও কি হাওরে বাঁধে এসে দাঁড়িয়ে থাকবে। এবারে সব পাওনা আদায় করে নিতে হবে।
ছবিতে দেখুন চাপাতির হাওরে ডুবে যাওয়া ধান কাউকে অভিযোগ না দিয়ে কৃষক কীভাবে নীরবে ধান তোলার কাজে লেগে গেছে। সামনে বড় বন্যার সতর্কতা আছে ঠিকই কিন্তু ছবিতে দেখুন এখনও হাওরে ধানের চেহারা কেমন রয়েছে। আধাপাকা ধান কেঁটে রাস্তার কাছে পর্যন্ত এনেছে মাত্র। গোলাজাত করতে কৃষক আরও কত কি অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে।আর এখনও কাঁচা ধানই মাঠে অবস্থান করছে রামতাড়না দিলেই তো আর ধান পেকে যাবে না। একটা অবস্থানে না গেলে ধান কেটেই কী হবে ধানে চাল তো হতে হবে কেটে ফেলুন বললেই তো কৃষক তাঁর এতদিনের কষ্টের ধন নষ্ট করে দিতে পারে না।