বিশেষ প্রতিনিধি::
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, হাওরের বোরো ফসলের ঝূঁকি কমিয়ে আনতে সরকার নতুন জাতের আগাম ফলনশীল ধান নিয়ে আসার চিন্তা করছে। বিনা এমন ধান বের করেছে যা বিঘাপ্রতি ৩৩ মন পাওয়া যায়। হাওরের কৃষক ২০-২৫ দিন আগে ফলন পায় সেই চেষ্টা করছেন বিনার বিজ্ঞানীরা। মন্ত্রী আরো বলেন, বেশি করে ধান লাগান। এখন মিনিটেই যন্ত্র ধান কেটে দিচ্ছে। আগামীতে এই মেশিনে ধান রোপনও করে দিবে।
শনিবার দুপুরে সুনামগঞ্জের দেখার হাওরে কম্বাইন হার্ভেস্টর দিয়ে ধান কাটা ও কৃষক মতবনিমিয়সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ ৪ আসনের এমপি এডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের এমপি শামীমা শাহরিয়ার, জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।
কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, এখনো হাওরের ফসল ঝূকিতে আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও উৎকণ্ঠিত। ফসলরক্ষা বাধের বিষয়ে যে ত্রটি বিচ্যুতি ও অনিয়ম আছে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলব। তিনি বলেন, আর মাত্র ১৫ দিন সময় পেলে সব ধান ঘরে তুলে নিতে পারবো। কৃষিতে সরকারের ভর্তুকিসহ নানা বিষয়ের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের নেত্রী কৃষক দরদী। তিনি কৃষকদের সস্তায় সার দিচ্ছেন। বিএনপির সময়ে কৃষকরা সারের জন্য, চেয়ারম্যান, মেম্বার, ইউএনওর পিছনে দৌড়াতেন। গত ১৩ বছরে সার ও বীজ নিয়ে কোন সমস্যা হচ্ছেনা। পৃথিবীর কোথাও টিএসপি সার ১৬ টাকা কেজি বিক্রি হয়না। বিএনপির আমলের ষাট টাকার সার ১৫ টাকা করেছি। টিএসপি ৮২ টাকার বদলে ২২ টাকা করেছি। কৃষকের জন্য আগামীতে ৩০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিবে সরকার। এখন ৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুতি দেওয়া হচ্ছে। আমাদের নেত্রী আগে চান কৃষক বাঁচাতে। তারপর অন্য কিছু।
হাওরের সংগ্রামী কৃষকদের অভিনন্দন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, হাওরের কৃষক সারা বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে বিরাট ভূমিকা রাখে। তাই এই ধান তলিয়ে গেলে সারাদেশের খাদ্য উৎপাদনে ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে। ইতোমধ্যে একটা হাওরেই বারো হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের ফসল সম্পূর্ণ পানির নিচে। এখনো যে অবস্থা সারা হাওরেই এটা হতে পারে।
মন্ত্রী বলেন, হাওরের ধান দ্রুত কেটে আনতে আমরা ৭০ ভাগ ভর্তুকিতে কম্বাইন হার্ভেস্টর দিচ্ছি। আগে যেখানে সারাদিন কাস্তে হাতে কৃষকদের ধান কাটতে হতো এখন সেখানে মিনিটের মধ্যে অনেক ধান কাটা হয়ে যায়। আমরা এই খাতে ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছি। কৃষকদের ধান কাটার চিন্তা করতে হবেনা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আপনারা বেশি করে ধান লাগান। যে ধান এখন মেশিনে কাটছে সেই ধান আগামীতে মেশিনই লাগিয়ে দেবে।
মন্ত্রী আরো বলেন, এক সময় বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতির দেশ ছিল। ভিক্ষার ঝূলি নিয়ে সাহায্যের জন্য যেতে হতো। বিএনপির সময়ে তাদের অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, দেশে এত ধান উৎপাদনের দরকার নেই। দেশ খাদ্য উৎপাদনে এগিয়ে গেলে, স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়ে গেলে বৈদেশিক সহায়তা মিলবেনা। কিন্তু আমাদের নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ভিক্ষুকের জাতির কোন সম্মান নাই পৃথিবীতে। আমরা বিএনপির মতো ভিক্ষার মনোভাব নিয়ে হাত বাড়াইনা। সরকারও ভিক্ষার মনোভাব নিয়ে দেশ চালায়না।
এর আগে মন্ত্রী দিরাই উপজেলার চাপতির হাওর পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দেন। পরে বিনা উদ্ভাবিত ধান কাটা পরিদর্শন করেন মন্ত্রী।