আবু হানিফ চৌধুরী::
শাহ আবদুল করিমের ভক্ত জাহানারা বেগম রচিত গানের বই ‘কাজল ধোয়া জল’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকাল পাঁচটায় দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে একুশে পদক প্রাপ্ত প্রয়াত বাউল স¤্রাট শাহ আবদুল করিমের বাড়িতে আনুষ্ঠানিক ভাবে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন ভাটিবাংলা বাউল একাডেমি ও গবেষনা কেন্দ্রের সভাপতি ও শাহ আবদুল করিমের ভাগ্নে গীতি কবি শাহ আবদুল তোয়াহেদ। গীতি কবি শাহ আবদুল তোয়াে দের সভাপতিত্বে এবং জিয়াউর রহমান লিটনের সঞ্চলনায় মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন,শাহ আবদুল করিমের ভাব শিষ্য বাউল শিল্পী রণেশ ঠাকুর,ভাটিবাংলা বাউল একাডেমি ও গবেষনা কেন্দ্রর সাধারণ সম্পাদক লেখক দোলন চৌধুরী, সাংবাদিক আবু হানিফ চৌধুরী, প্রশান্ত সাগর দাস, ইউপি সচিব শুভ দাস, কন্ঠ শিল্পী বিউটি চক্রবর্তী, উষা তালুকদার দোলা, উর্মী চক্রবর্তী,দু:খু মিয়া প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গীতিকবি জাহানারা বেগম। আবাসিক প্রকৌশলী মো: আওলাদ হোসেনের সহযোগীতায় ও জিয়াউর রহমান লিটনের সম্পাদনায় ঢাকা থেকে আদিগন্ত প্রকাশন গত বই মেলায় জাহানার বেগম রচিত ‘কাজল ধোয়া জল’গানের বইটি প্রকাশ করে। মোড়ক উন্মোচন শেষে উপস্থিত শিল্পীগন গান পরিবেশন করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গীতি কবি জাহানারা বেগম।
একুশে পদকপ্রাপ্ত বাউল স¤্রাট শাহ অবদুল করিমের একজন পরম ভক্ত জাহানারা বেগম। উনার সংস্পর্শে এবং প্রেরনাই তার মনপ্রান গানের জগতে জেগে উঠেছে। ছোটবেলা থেকেই শাহ আবদুল করিমের গান জাহানারা বেগমকে ভাবিয়ে তুলে। শাহ আবদুল করিমের ভাবনায় মজে হঠাৎ একদিন উদাসী মনে ছুটে যান শাহ আবদুল করিমের বাড়ি উজান ধল গ্রামে। সেই দিন শাহ আবদুল করিমের ভক্তিমুলক কথা আর আদর্শের সাথে নিজেকে জড়িয়ে শান্ত করেন জাহানারা বেগম। শাহ আবদুল করিমকে মুর্শিদ ভজে পরম ভক্তের আশীর্বাদ গ্রহন করে নেন জাহানারা বেগম। নিদারুন অভাব অনটনের মাঝে বড় হন তিনি। মাত্র তিন বছর ছয় মাস স্কুলে যাওয়া সম্ভব হয় তাঁর। জীবন শিক্ষায় শিক্ষিত জাহানারা বেগম নারী জীবনের অনেক না বলা কথা, প্রেম-বিরহ-নারী বিচ্ছেদ,দেশেরগান- মানুষের গান ও ভক্তিমুলক গানসহ নারী জাগরনের গান নিয়ে গানের বই কাজল ধোয়া জল রচনা করেছেন জাহানারা বেগম।
নারীরা পরিবারের জন্য,সমাজের জন্য কত কাজইনা করে। কিন্তু শ্রমের উপযুক্ত মর্যাদা পায় না। এখানেই জাহানারা বেগমের যত দু:খ। তিনি গানে বলেছেন,‘আমি নারী হইয়া ঠেকলাম ভবে/জীবন মুল্যহীন,আমি পরের অধীন/–নাইরে শক্তি নাইরে মুক্তি নাইরে অধিকার/বুকের ভিতর চাপাকান্না করে হাহাকার—।’
নারীদের দু:খ কষ্ট দেখলে জাহানারা বেগমের মন কাঁদে । সবকিছু মুখে বলা যায় না. তাই অবসরে গান লিখেন তিনি। এ পর্যন্ত পাঁচশতাধিক গান লিখেছেন । তিনি লিখিছেন,‘আমরা বঞ্চিত লাঞ্চিত একদল নারী/ রক্তঝরা আঘাত সহে,শাড়ির আঁচলে গা ডাকিয়ে / মুক্তির সংগ্রাম করি—।’
শত লাঞ্চনা-বঞ্চনা, বাধা-বিপত্তি, কুসংস্কার কোন কিছুই জাহানারা বেগমকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি সফলতার পাশাপাশি, পেয়েছেন সম্মান। ২০১০ সালেরর ৮ মাচ আতœনির্ভরশীল সফল নারী হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কাছ থেকে সম্মাননা ক্রেষ্ট গ্রহন করেন তিনি। তিনি তার স্বপ্নকে কাজের মাধ্যমে কিভাবে বাস্তবায়ন করেছেন, নিজেকে কিভাবে আত্মনির্ভরশীল নারী হিসেবে দাড় করিয়েছেন এবং এর স্বীকৃতি পেয়েছেন, তারই বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে বাস্তবধর্মী কাহিনী নিয়ে ‘সিঁড়ি’ নামে বই রচনা করেছেন। বইটি ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়। এলজিআরডি ভবন ঢাকায় বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
২০১৪ সালে নারী দিবস উপলক্ষ্যে দ্বিতীয় উপন্যাস“ ধূপ পুড়া গন্ধ’ বইটি প্রকাশ হয় উনার। ঢাকায় এলজিইডি ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চেšধুরী।
জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হওয়ার পাশাপাশি পেয়েছেন জয়িতা’র সম্মান। তবুও দু:খের শেষ নেই তার। মাঝেমধ্যে মনে দ:খ ভর করে। নারীর প্রতি অবহেলা; বঞ্চনায় মন কাঁদে-তাই তিনি লিখেছেন,‘আমি গ্রাম বালিকা বধূরে, আমার মনে বড় ব্যাথা/আচঁলে বান্দিয়া রাখি, দ:খের অনেক কথা/ এই বয়সে পিতা-মাতা, কেন দিল শাদি/ ফুল দেখিয়া হাসি আমি, চাঁদ দেখিয়া কাঁিদ—।’