বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় ১ হাজার ৩১০ টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় ১ হাজার ১৪৭ জন খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য খামারিরা সহজ শর্তে সরকারি ঋণ ও প্রণোদনা দাবি করেছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে গত ১২ দিনের বন্যায় সুনামগঞ্জের ৪টি উপজেলার খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ছাতক দোয়ারাবাজার উপজেলার খামারিরা। তাছাড়া সুনামগঞ্জ সদর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার খামারিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সূত্র মতে ৪টি উপজেলার ১৭৪ হেক্টর আয়তনের খামার পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় প্লবিত হয়ে, বাধ ভেঙ্গে মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় ১৬৮ টন মাছ ও ৫০ টন পোনা ভেসে গেছে। এছাড়াও অবকাঠামোগত ক্ষতিও হয়েছে খামারিদের।
জানা গেছে সদর উপজেলার ৫০জন খামারির ৬৫টি পুকুর, ছাতক উপজেলার ৬৪০ জন খামারির ৭৫০টি পুকুর, দোয়ারাবাজার উপজেলার ৪১০ জন কৃষকের ৪৩৫টি পুকুর এবং শান্তিগঞ্জ উপজেলার ৪৭ জন কৃষকের ৬০টি পুকুরের মাছ ও পোনা ভেসে গেছে বানের জলে। এতে তাদের বিপুল ক্ষতি হলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা কোন খোঁজ খবর নেননি বলে জানান খামারিরা।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইবরাহিমপুরের খামারি মুসলিম উদ্দিন বলেন, আমার ৯টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মতো। এখন কিভাবে এই ক্ষতি সামাল দিবো এই চিন্তায় অস্তির আছি। আমাদেরকে বিশেষ বিবেচনায় ও সহজ শর্তে ঋণ দিলে হয়তো ঘুরে দাড়াতে পারবো।
একই গ্রামের খামারি মিজানুর রহমান বলেন, আমার চারটি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৮ লাখ টাকার মতো। এই টাকা ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করেছিলাম। মাছ ভেসে যাওয়ায় এবং নতুন করে পূজি না থাকায় খামার এখন বন্ধের পথে।
হাসননগরের খামারি রফিকুল ইসলাম কালা বলেন, আমি ক্ষুদ্র খামারি। আমার তিনটি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। মৎস্য বিভাগের কেউ খোজ নেয়নি। কখনো কোন ক্ষতিপূরণও পাইনি। তিনি বলেন, আমি এনজিও থেকে ঋণ এনে পুকুর ভারা করে চাষ করেছিলাম। এখন আমি পথে বসে গেছি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল ম-ল বলেন, বন্যায় আমাদের প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মাছ, পোনাসহ অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংশ্লিষ্টদের দিয়ে প্রাথমিক ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করেছি। এই তালিকা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হবে।
এদিকে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতক ও সুনামগঞ্জ শহরের প্লাবিত ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট থেকে পানি নেমে গেছে। গত দুইদিন ধরে পানি দ্রুত নেমে যাচ্ছে।