মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী, দোয়ারাবাজার থেকেঃ
দেশ সেরা ১২ জনের একজন অজোপাড়া গাঁওয়ের দরিদ্র এক কৃষকের সন্তান অদম্য মেধাবী নুরুল। অষ্টম শ্রেণি অতিক্রম করে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা তার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা’ ২০১৭ প্রতিযোগিতায় উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ট হয়ে জাতীয় পর্যায়ে সে সারা দেশের ৮ বিভাগের ৯৬ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে শ্রেষ্ট হয়েছে। সে দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সমুজ আলী স্কুল ও কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নিজেই বায়ো গ্যাস প্ল্যান তৈরী করে এ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পদ্ধতি আবিস্কার করেছে। নিজের বাড়ীতে বায়োগ্যাস প্ল্যান তৈরী করে এ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে চমক দেখিয়েছে সে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা’ ২০১৭ বিজ্ঞান বিভাগে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্টত্বের স্বাক্ষর রেখেছে নুরুল। ওই প্রতিযোগিতায় উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে মেধা বিকাশের অন্যন্য নৈপুন্য দেখিয়েছে সে। প্রতিযোগিতায় তার বিষয় বস্তু ছিল বিজ্ঞান। অনন্য মেধার অধিকারী নুরুল পরিবারের লোকজন সহ তার শিক্ষকদের কাছে এখন গর্বের পাত্র। উপজেলার সব ক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমুজ আলী স্কুল ও কলেজের মেধাবী ওই শিক্ষার্থীর এমন কৃতিত্বে গর্বিত উপজেলার সর্বস্তরের মানুষও।
নুরুলে পিতা আফিজ আলী গ্রামের একজন সাদাসিদে পরিশ্রমী মানুষ। বয়োবৃদ্ধ বয়সে উপনীত হয়ে অন্যের ক্ষেত খামারে কাজ করে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনিই পরিবারের একমাত্র রোজগারী। তার বড় পরিবারে আর্থিক সংট প্রকট। রাত দিন মাথার গাম পায়ে ফেলে দিন মজুরী করে পরিবারের খরছ যোগান দিয়ে দুই ছেলে কে লেখাপড়া করাচ্ছেন। তার পরেও অদম্য পিতার বুক ভরা আশা নুরুল কে নিয়ে। লেখাপড়ায় মনযোগী মেধাবী নুরুল কে নিয়ে মা বাবার অনেক স্বপ্ন। সে একদিন বড় হয়ে লেখাপড়া করে নিজের অদম্য মেধাকে কাজে লাগিয়ে দেশের জন্য কিছু করবে। ছোট্র ছেলে নুরুল বায়ো গ্যাস প্ল্যানের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন পদ্ধতি আবিস্কার করেছে। এটা শিক্ষক ও মা বাবার জন্য কম বড় কথা নয়। সারা দেশের মেধাবীরদের সঙ্গে লড়ে সে জাতীয় পর্যায়ে দেশ সেরা মেধাবী শিক্ষার্থীর সনদ পেয়েছে।
সম্প্রতি নুরুলের বাবা আফিজ আলী নিজের মেধাবী সন্তান কে নিয়ে গর্বে আবেগে আপ্লোত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, আমি গরীব মানুষ। দিনমজুরীই আমার সম্বল। আর কিছু না থাকলেও ছেলে যাতে মেধার বিকাশ ঘটাতে পারে সে চেষ্টা করে যাবো। কিন্ত পরিবারের অস্বচ্ছলতার করাল গ্রাসে নিমজ্জিত থেকে কিভাবে সন্তাানের উচ্চ শিক্ষার খরছ যোগান দেবেন। কত দূর সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারবেন জানা নেই ওই অদম্য ওই পিতার।
প্রতিষ্ঠান অধ্যক্ষ সলিলেন্দু কুমার তালুকদার বলেন, নুরুল আমাদের গর্বের সন্তান। তার প্রখর মেধা কাজে লাগিয়ে সৃজন শীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে দেশ সেরা হয়েছে। অত্যন্ত নিখুঁত ভাবে নিজে বায়োগ্যাস প্ল্যান তৈরী করে বিদ্যুৎ উৎপাদন পদ্ধতি আবিস্কার করেছে। আশা করি ভবিষ্যতে সে তার মেধাকে কাজে লাগিয়ে নিজের ও প্রতিষ্ঠানের সুনাম বয়ে আনবে।
উল্লেখ্য, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা খুঁজতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশ ব্যাপি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে শুরু হয় ‘সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ’ প্রতিযোগিতা ২০১৭। উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা শেষে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা শেষ হয়। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচিত দেশসেরা ১২ জন মেধাবীকে পুরস্কার ও সনদ প্রদান করা হয়।