বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জে ইলা কিয়ামতি বইন্যা দেখিনি। হাইঞ্জাবেলা আইয়া মাইঝরাইতে সব ভাসাইয়া নিছে। তুফানের বেগে পানি বাইরা মানুষরে রাইতের মধ্যে বেফানা করি লিছে এভাবেই বন্যার তীব্রতা নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার হবতপুর গ্রামের ওয়াহিদ মিয়া (৫৫)। তিনি স্ত্রী ও তার চার সন্তান নিয়ে বাড়িতেই কোমরপানিতে ছিলেন। শুক্রবার সকালে পাশের সড়কের উচু অংশে পরিবারকে নিয়ে আছেন। ওই গ্রামে এখনো কোন ত্রাণ যায়নি বলে জানান তিনি।
শুধু ওয়াহিদ মিয়াই নয় এই অঞ্চলের প্রবীণ ও অভিজ্ঞজনরা জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ শহরের গোড়াপত্তন হয়েছে প্রায় দেড়শ বছর আগে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের যে রেকর্ড সংরুিক্ষত আছে তাতে এমন ভয়াবহ সর্বগ্রাসী ও সসর্বব্যৗাপী দুর্ভোগের কোন ইতিহাস নেই। তাই সুনামগঞ্জে এর চেয়ে বড়ো বড়ো বন্যা কখনো হয়নি বলে অভিমত দিয়েছেন তারা।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোহনপুর গ্রামের মওলানা আব্দুল মুক্তাদীর (৭৫) বলেন, ১৯৭৪ সনে একবার বন্যা হয়েছিল। আমি তখন কিশোর। সেই বন্যায় আমাদের গ্রামের সব বাড়িঘরে পানি ওঠেনি। কিন্তু এই বন্যায় একটি ঘর পানি ওঠার বাকি থাকেনি। সব বাড়িঘর্ েকোমরপানি ছিল। তিনি বলেন, এক রাতেই ¯্রােতের মতো বেগে পানি বেড়েছিল। মানুষ এটা দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। যারা এটা দেখেনি বা সুনামগঞ্জের এবারের বন্যার চিত্র দেখেনি তারা কখনো কল্পনাও করতে পারবেনা বন্যার ভয়াবহতার কথা। তিনি বলেন, শুনেছি শহর ও শহরতলির মানুষজন ত্রাণ পাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের গ্রামে কেউ ত্রাণ নিয়ে আসেনি। কারো ঘরে খাবার নেই। বাজারেও সরবরাহ নেই। মানুষ খুব কষ্টে আছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মুরাদ মিয়া (৭০) বলেন, সিলেট সুনামগঞ্জ সড়কের পাশে আমাদের গ্রামটি সবচেয়ে উচু। আমার এই দীর্ঘ জীবনে কখনো আমার বাড়িতে পানি ওঠেনি। কিন্তু এ বছর শুধু আমি নই আমাদের প্রতিটি বাড়িতে পানি ওঠেছে। মানুষের ধান ভেসে গেছে। গবাদিপশু মরে গেছে। খুব অসহায় আছে মানুষ।
সুনামগঞ্জের তরুণ গবেষক কল্লোল তালুকদার চপল বলেন, আমাদের সুনামগঞ্জ শহর গড়ে ওঠার প্রায় ১৫০ বছরের রেকর্ড পাওয়া যায়। সেসব ইতিহাসে সবগুলো প্রকাৃতকি দুর্যোগের প্রসঙ্গ আছে। যেখানে এলাকা ভিত্তিক দুর্ভোগ হতো। কিন্তু এমন ভয়াবহ দুর্যোগ যাতে জেলার সকল মানুষ অসহায় হয়েছেন তেমন দুর্যোগের কোন ইতিহাস নেই। তাই বলা যায় এটাই সুনামগঞ্জের সর্বকালের ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
হাওর বাচাও আন্দোলনের সহসভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, আমি এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কখনো দেখিনি। আমার চেয়ে বয়সের সিনিয়র যারা তারাও দেখেননি। সত্যিকারের অর্থে এটি প্রলয়ঙ্করি বন্যা। এখন পানি কিছু কমলেও বিলম্বে কমছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের অপরিকল্পিত সড়ক ও রাস্তাঘাটের কারণে এখন পানি মেঘনায় গিংে পড়তে পারছেনা। তিনি বলেন, এই অকল্পনীয় বন্যা মোকলোয় কেবল প্রশাসন নয় কারই প্রস্তুতি ছিলনা। তাই এখনো দুর্ভোগে মানুষ। ত্রাণ পাচ্ছেনা। আশ্রয় পাচ্ছেনা। বেশিরভাগ মানুষের ঘরবাড়ি ডুবে আছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জেলার অভিজ্ঞনরা জানিয়েছেন ১৯৭৪ সনে একাবার বড়ো বন্যা হয়েছিল। এরপরে সরকারি স্থাপনা উচু করা হয়। কিন্তু এবার সেই রেকর্ডও ভঙ্গ করে ভয়াবহহ বন্যায় জেলার প্রায় ৯০ ভাগ মানুষের ঘরবাড়ি স্থাপন্ াও রাস্তাঘাট ডুবে গিয়েছিল। এখন এমন বন্যা মোকাবেলায় নতুন করে ভাবতে হবে।