স্টাফ রিপোর্টার ::
দেশবরেণ্য সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত। গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন সাংবাদিক ও গবেষক অ্যাড. রনেন্দ্র তালুকদার পিংকু।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লেখক ও গবেষক সুখেন্দু সেন।
সাংবাদিক অণীশ তালুকদার বাপ্পুর সঞ্চালনায় প্রধান অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত। তিনি বলেন, সাংবাদিক রনেন্দ্র তালুকদার পিংকু অনেক গুণী মানুষের লেখা নিয়ে পীর হাবিবুর রহমান স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। পীর হাবিব সাধারণ আড্ডাপ্রিয় ভালো মনের মানুষ ছিলেন। কিভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায় তিনি সেই চিন্তাই করতেন। তিনি যখন অসুস্থ ছিলেন, ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনার জন্য কিছু করা যায় কিনা। তিনি বলেছিলেন, আমার জন্য কিছু করতে হবে না। সুনামগঞ্জের কয়েক জনের নাম উল্লেখ করে বলেছিলেন, তাদের জন্য কিছু করতে। সাংবাদিক পীর হাবিব মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু এই দুই জায়গায় কখনো আপস করতেন না। হাবিব ভাইয়ের গুণগুলো কাছে টানতো। তিনি একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বে সুনামগঞ্জকে পরিচিতি করে দিয়েছেন। লেখনির মাধ্যমে সুনামগঞ্জের সমস্যা সম্ভাবনার কথা তুলে ধরতেন। তাঁর ভেতরে একটা আদর্শ লালন করতেন। ভেতরের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের কাজ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পীর হাবিবের অগ্রজ ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ স¤পাদক অ্যাড. মতিউর রহমান পীর বলেন, সম্প্রতি আমরা ভয়াবহ বন্যা পেরিয়েছি। হাবিব থাকতে সুনামগঞ্জে বন্যা হয়েছিল। বন্যা পরবর্তী সাবেক অর্থমন্ত্রী নৌকাবাইচে সুনামগঞ্জে আসবেন। এমন খবর সে জানতে পেরে নিউজ করেছিল। “অর্থমন্ত্রী আপনি সুনামগঞ্জে যাবেন না”। নৌকাবাইচের ঢেউয়ে মানুষের বাড়িঘরের ক্ষতি হবে। তাঁর এ নিউজের পর অর্থমন্ত্রী প্রোগ্রাম বাতিল করেছিলেন। পীর হাবিব মানুষের কথা ভাবত, বুঝতো। সে চাইতো মানুষ সুকুমার বৃত্তিতে বেড়ে উঠুক। সে চাইত সুনামগঞ্জের মানুষ ভালো থাকুক। হাবিব শহরে আসলে যেতে চাইত না। এ শহর এখনও অনেক সভ্য, মানুষের সংস্কৃতিমন অনেক গভীরে। হাবিবের অতৃপ্ত বাসনা ছিল সুনামগঞ্জ ভাল থাকুক। আমরা যদি সুনামগঞ্জের কথা ভাবি, ভালো কাজ করি তাহলেই তাঁর আত্মা শান্তি পাবে।
দৈনিক সুনামকণ্ঠের প্রকাশক ও স¤পাদক বিজন সেন রায় স্মারকগ্রন্থ থেকে পীর হাবিবকে নিয়ে লেখকদের লেখার কিছু লাইন তুলে ধরে মূল্যায়ন করে বলেন, রনেন্দ্র তালুকদার পিংকুকে প্রথমে ধন্যবাদ জানাই। ৩২ জন লেখকের লেখা নিয়ে সমৃদ্ধ স্মারকগ্রন্থে বের করেছেন। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীসহ অনেক গুণী লেখক লিখেছেন। এই স্মারকগ্রন্থ পড়ে প্রিয় হাবিব স¤পর্কে প্রজন্ম অনেক কিছু জানতে পারবে। হাবিব ছিল আমাদের সুনামগঞ্জের স¤পদ। ক্ষুরধার লেখনির মাধ্যমে তিনি সুনামগঞ্জের সুনাম বয়ে এনেছেন।
দৈনিক সুনামগঞ্জের ডাক প্রকাশক ও সম্পাদক অধ্যক্ষ শেরগুল আহমেদ বলেন, সুনামগঞ্জকে যারা দেশ বিদেশে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন পীর হাবিব অন্যতম। টকশোতে প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করতেন। সাংবাদিক পীর হাবিবকে সুনামগঞ্জবাসী আরো বড় পরিসরে স্মরণ করা উচিত। প্রবাসে থেকে পিংকু স্মারকগ্রন্থ বের করেছেন। এজন্য ধন্যবাদ জানাই। সুনামগঞ্জের সকল সাংবাদিক ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাঁর স্মরণে কিছু করা উচিত।
সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ স¤পাদক দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী বলেন, হাবিব যেভাবে খোলোয়াড় ছিল, সেভাবে লেখনি ছিল। রিপোর্টার থেকে কলামিস্ট এবং জাতীয় পত্রিকার নির্বাহী স¤পাদক। সুনামগঞ্জে আসলে সবার খোঁজখবর নিত। ঢাকায় কেউ গেলে সহযোগিতা করত। সুনামগঞ্জের অনেক মানুষের চিকিৎসার খরচ দিয়েছে। নানাভাবে সহযোগিতা করেছে।
সভাপতির বক্তব্যে লেখক ও গবেষক সুখেন্দু সেন বলেন, আমরা একে একে অনেককে হারিয়েছে। পীর হাবিব দেখতে দেখতে অনেক উচ্চ স্থলে পৌঁছে গিয়েছিল। হাবিব টগবগে আবেগী যুবক, সৃজনশীল মানুষ। দেশ বিদেশ গিয়েছেন সুনামগঞ্জকে সঙ্গে নিয়ে। আমরা বেদনাহত তাঁর স্মৃতি স্মরণ করি। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি। হাবিবকে নিয়ে রনেন্দ্র তালুকদার পিংকুর প্রচেষ্টার জন্য ভালোবাসা ও ধন্যবাদ জানাই।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ স¤পাদক অমল কর, সাবেক পৌর প্যানেল মেয়র মনির উদ্দিন মনির, অধ্যাপক জমশিদ আহমদ, প্রভাষক মশিউর রহমান, রাখু রাজ চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রশিদ আহমদ, মুনায়েম পীর, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য সেলিনা আবেদীন, সুবিমল চক্রবর্তী চন্দন প্রমুখ।