বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ জেলা যুবদলের সহ-সভাপতির দায়েরকৃত মামলার তালিকাভূক্ত আসামি না থাকার পরও সুনামগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সেলিম আহমদকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে তাকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। এদিকে গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে তাহিরপুরে স্মরণকালের সবচেয়ে বৃহৎ সমাবেশ করে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন সেলিম আহমদ। এ ঘটনায় নিজ দলের কয়েকজন শীর্ষ জনপ্রতিনিধি ক্ষুব্দ ছিলেন তার ওপর এমন কথা জানিয়েছেন স্বজনরা। যুবদল নেতার মামলায় শ্রমিক লীগ সভাপতি সেলিম আহমদকে মামলায় জড়ানো ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা মামলাটিকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ আখ্যায়িত করে অবিলম্বে তাকে মামলা থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে সুনামগঞ্জ জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি সুনামগঞ্জ শহরের হাসননগর এলাকাবার বাসিন্দা অলিউর রহমান একজন ঠিকাদার। তিনি নানা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ব্যবসায়ী দ্বন্ধ নিয়ে সেলিম আহমদের চাচাতো ভাই তারেক আহমদের সঙ্গে তার ব্যবসার বিরোধ ছিল। তাছাড়া সম্প্রতি বিআইডব্লিউটিএর টোল টেক্স নিয়ে তারেক আহমদ ও তার স্বজনদের সঙ্গে অলিউর রহমান ও তার ঘনিষ্ট কয়েকজনের অন্তদ্বন্ধ ছিল। এর জের ধরে গত ১১ আগস্ট তাহিরপুর থানায় তারেক আহমদকে প্রধান আসামি করে তার চার ভাইয়ের বিরুদ্ধে অপহরণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগপত্র মামলা দায়ের করেন যুবদল নেতা অলিউর রহমান। এই মামলায় ৭-৮ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি দেখানো হয়। তবে মামলার বিবরণে কোথাও জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সেলিম আহমদের নাম বা ইঙ্গিতে তার সম্পৃক্ততার কথা ছিলনা। যার ফলে মামলায় তাকে জড়িয়ে গ্রেপ্তার ও কারাগারে প্রেরণের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীরা। এ ঘটনাকে ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে মামলা থেকে সেলিম আহমদে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা জানান, গত কয়েক বছর ধরে সুনামগঞ্জ-১ নির্বাচনী এলাকায় দলীয় সভা সমাবেশসহ নানাভাবে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষদের সহায়তা করছেন সেলিম আহমদ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহায়তা, অসহায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রদান, হতদরিদ্রদের সহায়তা, হাওরের বাঁধ নির্মাণে সহায়তা, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা, সরকারি ফান্ডে বন্যার্তদের আর্থিক সহায়তা দানসহ নানাভাবে সমাজসেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন। গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে তাহিরপুরে স্মরণকালের বৃহৎ শোক সমাবেশ করেন তিনি। এতে দলের কয়েকজন নেতা ক্ষুব্দ হন। তারা আগামীতে তিনি সুনামগঞ্জ-১ আসনে প্রধান প্রতিদ্বন্ধি হতে পারেন এই আশঙ্কা করেও তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছেন বলে জানান সেলিম আহমদের বড় ভাই বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের রাজনৈতিক জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল উৎকণ্ঠিত। তাই তারা বিএনপির সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে তাকে ফাঁসিয়েছে। তাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।
জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মুবিন আহমদ বলেন, এটা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা। যুবদল নেতার সঙ্গে ভিড়ে আমাদের দলের একজন শীর্ষ জনপ্রতিনিধি সেলিম আহমদের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে মিথ্যা মামলায় তাকে তালিকাভূক্ত আসামি না হওয়ার পরও গ্রেপ্তার করিয়েছে। আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাই।
মামলার বাদি যুবদল নেতা অলিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সেলিম আহমদকে কেন মামলায় যুক্ত করা হয়েছে তাহিরপুরের পুলিশ জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞেস করেন। আমি এখন টায়ার্ড কথা বলতে পারবনা।’
সুনামগঞ্জ জেলা যুবদলের সভাপতি আবুল মনসুর শওকত বলেন, অলিউর রহমান যুবদলের রাজপথের সক্রিয় নেতা। তিনি সহসভাপতি হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।
সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে সেলিম আহমদকে আটক করা হয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে মামলার স্বার্থে তাকে আটক করা প্রয়োজন। তাছাড়া মামলার বাদি কোন রাজনৈতিক দল করে এটা বিবেচ্য বিষয় নয়। যে কেউ আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।