বিশেষ প্রিতিনিধি::
২০২০ সালের ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তুলে পুলিশের মামলায় কারাবরণকারী ঝুমন দাসকে ফেইসবুকে একটি পোস্ট দেওয়ার ঘটনায় থানায় তুলে নিয়ে ১২ ঘন্টা পর ডিজিটাল আইনে মামলা দিয়েছে শাল্লা থানা পুলিশ। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ঝুমনের গ্রামের বাড়ি শাল্লা উপজেলার নোয়াগাও গ্রাম থেকে তাকে শাল্লা থানা পুলিশ নিয়ে এসে রাত পোনে দুইটায় মামলা দেয়। ৩১ আগস্ট বুধবার দুপুরে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালতে ১৬৪ ধারায় ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়ার কথা স্বীকার করেন ঝুমন। পরে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেয়।
শাল্লা থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ঝুমনের ফেইসবুক আইডি থেকে গত ২৮ আগস্ট একটি উস্কানীমূলক পোস্ট করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকারও করেছে। এই পোস্টের কারণে ইসলাম ধর্মাবলম্বিদের অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে। এ ঘটনায় পুলিশ তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেছে।
প্রসঙ্গত ২০২০ সালের ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তুলেছিলেন ঝুমন দাস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সমালোচনা করায় ২০২০ সালের ১৭ মার্চ ঝুমনের গ্রাম নোয়াগাও গ্রামে হেফাজতে ইসলামের ব্যাজ মাথায় দিয়ে ‘হেফাজতের একশন, মামুনুলের একশন, বাবু নগরীর একশন’ স্লোগান দিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের হাজারো মানুষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা, লুটপাট ও ভাংচুর করেছিল। তারা ৮৮টি বাড়িঘর, ৫টি মন্দিরসহ বাড়িঘরে লুটপাট করে। এ ঘটনায় দেশ বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। জাতীয় সংসদেও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলে এসে ঝুমন দাসের পরিবারসহ গ্রামবাসীর প্রতি সহমর্মিতা জানায়। বিএনপিসহ অন্যান্য দলও আসে গ্রামে।
নোয়াগাওয়ে হামলার পর দেশ বিদেশের মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের লোকজন এসে গ্রামবাসীর প্রতি সংহতি জানিয়ে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের বিচার দাবি করেন। ঘটনাস্থলে ছুটে যান র্যাবের প্রধান, পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী। সরকারের পক্ষ থেকেও ক্ষতিগ্রস্তদের টিন ও নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। তবে পুলিশ এ ঘটনায় ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি মামলা দায়ের করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করে। প্রায় ৬ মাস জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে আসেন ঝুমন। অপরদিকে পুলিশ ও ঝুমনের গ্রামের একজন জনপ্রতিনিধি প্রায় দেড় হাজার লোকের বিরুদ্ধে ভাংচুর, লুটপাট ও হামলার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় বিভিন্ন সময়ে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন আছে। নোওয়াগাও গ্রামে হামলার ঘটনায় পুলিশ হেডকোয়ার্টারের প্রতিনিধিদল দায়িত্বে অবহেলার জন্য তৎকালীন পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানসহ ১১ পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিবেদন দেয়। শাল্লা থানার ওসিকে বরখাস্ত ও দিরাই থানার ওসিকে বদলি করা হয়।
আবারও সেই প্রতিবাদী যুবক ঝুমন দাসকে একই অভিযোগে আটক করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।