বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে এবারও বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন গেলবারের বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি নূরুল হুদা মুকুট। তার সমর্থকরা ইতোমধ্যে মাঠে প্রচারণায় নেমে গেছেন। তারা স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়সহ একান্তে আলাপ-আলোচনাও সেরে ফেলছেন। এদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পাবলিক প্রসিকিউটর জেলায় সজ্জ্বন খ্যাত এডভোকেট ড. খায়রুল কবীর রোমেন ও তার সমর্থকরাও তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। শেখ হাসিনা মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে যারা প্রার্থীতা দিয়ে প্রচারণা চালাবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে জেলা পরিষদের গত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের দ্বন্ধের জেরে এসময় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক নূরুল হুদা মুকুট চেয়ারম্যান প্রার্থী হন। তার সঙ্গে নির্বাচনী প্রচার, প্রচারণা ও সমাবেশ মাতিয়ে রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান ও সহ-সভাপতি পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলুল। ওই নির্বাচনে সুনামগঞ্জ জেলার আওয়ামী লীগের চারজন সংসদ সদস্য ও একজন সংরক্ষিত সংসদ সদস্য বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে একযোগে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। তারপরও বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন বিদ্রোহী প্রার্থী নূরুল হুদা মুকুট। তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী ব্যারিস্টার এম এনামুল কবীর ইমনকে ৩৬২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। নূরুল হুদা মুকুট ১২১৪ ভোটের মধ্যে ৭৮২ ভোট পেয়েছিলেন। ইমন পেয়েছিলেন ৪২০ ভোট।
এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে তোরজোড় শুরু হলে দলীয় মনোনয়নের জন্য তৎপরতা শুরু করেন নূরুল হুদা মুকুট। তিনি আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারনী মহলসহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করে মনোনয়ন লাভের চেষ্টা করেন। তার সঙ্গে নির্বাচনে লড়তে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সহ-সভাপতি ড. খায়রুল কবীর রোমেন, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট শামসুন্নাহার রব্বানী শাহানা, আওয়ামী লীগ নেতা তারিক হাসান দাউদ।
কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আমানত হলের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি খায়রুল কবীর রোমেন। তার বাবা এডভোকেট আব্দুর রইছ ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সহচর ও তার নেতৃত্বাধীন সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তিনি আমৃত্যু জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মাতা সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আমৃত্যু সভাপতি ছিলেন। তার ছোট ভাই ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক নূরুল হুদা মুকুট দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষুব্দ হয়ে ওঠেছেন তার সমর্থকরা। জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের অনেক দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ তার পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্টেটাস দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তাকে সমর্থন দিয়েছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্টেটাস দিয়ে দলের শৃঙ্খলাবিরোধী ও আদর্শবিরোধী লোকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন বলেন, গত নির্বাচনে যেসব বিদ্রোহীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন নেত্রী কাউকে মনোনয়ন দেননি। এটি দলের শৃঙ্খলার জন্য খুবই জরুরি। তৃণমূলের নেতা হিসেবে আমরা নেত্রীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে এবারও নেত্রী হুশিয়ারি দিয়েছেন যারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন করবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী নূরুল হুদা মুকুট বলেন, আমি গত ৪০ বছর ধরে মানুষের সঙ্গেই মাঠে কাজ করছি। তৃণমূলে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার কাজ করছি। তৃণমূলের নেতাকর্মী ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এবারও নির্বাচনে আসতে আমাকে চাপ দিচ্ছেন। তাদের ভালোবাসা ও সমর্থনে আমি এবারও মনোনয়ন জমা দিয়ে নির্বাচনে লড়ব।