বিশেষ প্রতিনিধি::
‘কুস্তি ফেডারেশন’ নামে স্বঘোষিত কমিটি করে কুস্তি খেলতে আগ্রহী গ্রামের কাছ থেকে হুমকি দিয়ে চাঁদা তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে কথিত কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতির বিরুদ্ধে। টাকা না দিলে খেলার ‘আমিন’ (খেলার পরিচালক) দেওয়া হবেনা এমন হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। এই খবরে স্বঘোষিত কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুসছে কুস্তিগীর গ্রামের লোকজন।
জানা গেছে সম্প্রতি ফেইসবুকে নিজেকে ‘সুনামগঞ্জ জেলা কুস্তি ফেডরেশন’ সংগঠনের সভাপতি হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করেন জামালগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি নূরুল হক আফিন্দি। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম ঘোষণা করেন তার নিকটাতœীয় বিএনপি নেতা আব্দুল মালেকের। এভাবে নিজের পছন্দের লোকদের দিয়ে একটি কমিটি ঘোষণা করে নিজেকে কুস্তি ফেডারেশনের সর্বেসর্বা হিসেবে ঘোষণা করেন কুস্তি ফেডারেশনের ঘোষনা দেন তিনি। ৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করে প্রতিটি সদস্য গ্রামের প্রতি চাঁদা নির্ধারণ করে দেন। কোন সংগঠন ছাড়াই কাউকে কোন চাঁদা না দিয়ে ঐতিহ্যবাহী কুস্তি খেলা পরিচালিত হয়ে আসলেও হঠাৎ স্বঘোষিত কমিটি করে চাদা নির্ধারণ করায় ক্ষুব্দ হয়ে ওঠেছেন কুস্তিপ্রিয় মানুষজন।
জানা গেছে গতকাল ১৫ অক্টোবর সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোহনপুর গ্রাম ও জামালগঞ্জ উপজেলার বিছনা গ্রামের মধ্যে কুস্তি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলার আগে রাতে মোহনপুর গ্রামের ইউপি সদস্য মো. নূরুল আমীনের কাছে ৩ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে নূরুল হক আফিন্দি। টাকা না দিলে খেলায় ‘আমিন’ দেওয়া হবেনা এমন হুমকিও দেন তিনি। ইউপি সদস্য নূরুল আমিন তার এই হুমকির জবাবে জানান, অতীতে যেভাবে তার গ্রাম এলাকার অন্যান্য গ্রামের সঙ্গে সম্প্রীতি বজায় রেখে কোন ফেডারেশন ছাড়াই কুস্তিখেলা চালিয়ে আসছে এখনও তারা সেভাবেই এলাকাবাসীকে নিয়ে খেলা পরিচালনা করবে। এ জন্য কোন স্বঘোষিত সভাপতিকে চাঁদা দিবেনা।
জয়নগরবাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাণীপুর গ্রামের সৈদুল আমীন বলেন, কুস্তি আমাদের প্রাণের খেলা। কোন সংগঠন ছাড়াই মুরুব্বীদের নেতৃত্বে যুগ যুগ ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই খেলা পরিচালনার জন্য কমিটি করে চাঁদা নির্ধারণ করে চাদার জন্য হুমকি দেওয়া হবে এটা মেনে নেওয়া যায়না। কোন ফেডারেশন করতে হলে সবাইকে নিয়ে করলে সুন্দর হবে। না হলে পকেট কমিটিকে কেউ কখনো গুরুত্ব দেবেনা।
মোহনপুর গ্রামের ইউপি সদস্য নূরুল আমীন বলেন, শুক্রবার গভীর রাতে আমার মোবাইলে ফোন করে কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি পরিচয় দিয়ে ৩ হাজার টাকা চাদা দাবি করেন নূরুল হক আফিন্দি। আমি জানিয়েছি আমার গ্রাম কাউকে চাঁদা দিয়ে অতীতে কুস্তি খেলেনি। এলাকাবাসী অতীত থেকে যেভাবে ভাইয়াপি কুস্তিখেইড় চালিয়ে আসছে আমরা সেভাবেই খেলা করবো। এলাকাবাসীকে নিয়েই আমরা গতকাল কুস্তিখেলা শেষ করেছি।
কাঠইর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সরকারের প্রাচীন ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদ। সমাজিক, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদকে ঘিরে হয়। কুস্তি খেলা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। সব মানুষ আনন্দ করেন। কুস্তির জন্য সংগঠন করতে হলে ইউনিয়ন পরিষদ বা গণম্যান্যদের নিয়ে করলে ভালো হতো। আর কুস্তির জন্য চাঁদা দিতে হবে অতীতে আমরা এমন ঘটনা শুনিনি।
গৌরারং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী বলেন, কুস্তি ফেডারেশন হয়েছে আমরা কিছু জানিনা। স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত পরিষদ হিসেবে আমরাই সামাজিক, সাংস্কৃতিক, খেলাধুলাসহ সব কাজে সহযোগিতা ও পৃষ্টপোষকতা দিয়ে থাকি। এখন আমাদের না জানিয়ে কি উদ্দেশ্যে নিয়ে এটা তারা করেছে তারা বলতে পারবে। তবে আমি শুনেছি তারা নিজেরা শুধু সংগঠনই করেনি চাদা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এমন চাদাবাজিতো মেনে নেওয়া যায়না।
জামালগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, কুস্তি ফেডারেশন নামে কোন সংগঠন আছে আমরা জানিনা। সুদূর অতীত থেকে আমাদের হাওর এলাকার ঐতিহ্যবাহী কুস্তিখেলা কোন সংগঠন ছাড়াই গ্রামীন মুরুব্বি ও যুবকদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সুশৃঙ্খলভাবে চলে আসছে। এখন সংগঠন শুরু করেই বাধ্যতামূলক চাঁদা দিতে হবে এটা মেনে নেওয়া যায়না।
সুনামগঞ্জ জেলা ক্রিড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী বলেন, কুস্তি ফেডারেশন নামে কোন সংগঠন আমি চিনিনা। কুস্তিখেলা গ্রামীণ খেলা হলেও এখন শহরের মানুষও শরিক হচ্ছেন। কোন সংগঠন ছাড়াই চলে আসছে। আমাদের স্থানীয় ক্রিড়াকে সমৃদ্ধ করে চলা এই খেলায় বিধিবদ্ধ কাঠামো করার চিন্তা করছি আমরা। আমরা নিয়মিত ক্রিড়া সংস্থার আয়োজনে প্রায় প্রতি বছরই কুস্তি খেলার আয়োজন করে আসছি। জেলা কমিটির ব্যানারে আগামী ৩০ অক্টোবর খেলা ডেকেছি।
অভিযুক্ত নূরুল হক আফিন্দি মোহনপুর গ্রামের ইউপি সদস্যের কাছে চাঁদা চাওয়ার ঘটনা স্বীকার করে বলেন, সংগঠন পরিচালনার জন্য টাকা চাওয়া হয়েছে। সংগঠন চালাতে হলে টাকাতো লাগবেই। তাছাড়া কুস্তির জন্য কিছু নিয়ম কানুনতো করতে হবেই।