বিশেষ প্রতিনিধি::
সরকারি টাকায় সরকারি ভূমিতে উপজেলা পরিষদের নির্ধারিত স্থানে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তার ভাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রোকনের ম্যুরাল নির্মাণের প্রতিবাদে ক্ষুব্দ হয়ে ওঠছে মধ্যনগর এলাকাবাসী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির সঙ্গে দুই ভাইয়ের ছবি সম্বলিত ‘ত্রয়ী ম্যুরাল’ স্থাপনার প্রতিবাদে গতকাল ১ নভেম্বর মঙ্গলবার মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর উপজেলাবাসীর পক্ষে স্মারকলিপি দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেত্রী। দুই ভাইয়ের ছবি সম্বলিত এই স্থাপনাকে ধৃষ্টতাপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর ছবি অক্ষুন্ন রেখে দুই ভাইয়ের ছবি অপসারণের দাবি জানিয়েছেন তারা। ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে এডিবির অর্থায়নে ১০ লক্ষ টাকায় এই স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।
স্মারকলিপি ও মধ্যনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারাদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মহান মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রতিটি উপজেলা চত্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপিত হয়েছে। নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলায় সেই ম্যুরাল নেই। এই ম্যুরালা না করে ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে এডিবির অর্থায়নে ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দে মধ্যনগর উপজেলা পরিষদের নির্ধারিত সরকারি মালিকানাধীন স্থানে ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রোকন একটি ম্যুরাল নির্মাণের কাজ বাস্তবায়ন করছেন। ‘ত্রয়ী নামের’ এই ম্যুরাল স্থাপনায় প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি রয়েছে। নিচে একই স্থাপনায় সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তার ভাই মোজাম্মেল হোসেন রোকনের ছবি সম্বলিত স্থাপনাটি নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। কাজ শুরুর পরই এটি দেখে ক্ষুব্দ হয়ে ওঠেন স্থানীয়রা। তারা জানান সরকারি টাকায়, সরকারি ভূমিতে এমন স্থাপনায় নির্লজ্জের মতো এমন ছবি ব্যবহার করে তারা মধ্যনগর উপজেলাবাসীকে হেয় করেছেন। ম্যুরাল নির্মাণে তারা প্রতিবাদ করলেও এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্দেশে কাজটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়। তাছাড়া ম্যুরাল নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণ না করে এমপি ও তার ভাইয়ের ছবি দিয়ে ম্যুরাল নির্মাণকে ধৃষ্টতাপূর্ণ বলছেন স্থানীয়রা। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ম্যুরালকে বিকৃত করে এমপি ও তার ভাইয়ের যৌথ ম্যুরাল প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করা হয়েছে বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে। আলাদা উপজেলার বাসিন্দা হয়ে অন্য উপজেলার দুই ভাইয়ের ম্যুরাল মধ্যনগর উপজেলাবাসীর রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানকে কটাক্ক করা হয়েছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ম্যুরাল অক্ষন্ন রেখে দুই ভাইয়ের ছবি অপসারণ করার জন্য স্মারকলিপিতে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। পাশাপাশি এই স্থানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনের দাবি জানান তারা।
মধ্যনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাজেদা আহমেদ স্মারকলিপি প্রদান করে বলেন, নিজের ছবি দিয়ে এমপি সাহেব ও উনার ভাই সরকারি ১০ লক্ষ টাকায় ম্যুরাল করছেন। এটা আমাদের মধ্যনগরের রাজনৈতিক ঐতিহ্যকে অবজ্ঞা করার শামিল। আমরা সাতদিনের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি অক্ষুন্ন রেখে দুই ভাইয়ের ছবি অপসারণসহ যারা অনুমতি না নিয়ে তাদের ছবি ব্যবহার করে স্থাপনা নির্মাণ করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
মধ্যনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ সরকার বলেন, সরকারি টাকায় দুই ভাইয়ের ছবি দিয়ে এমন স্থাপনা আমাদের হতবাক করেছে। যেখানে আমরা এখনো জাতির জনকের ম্যুরাল করতে পারিনি সেখানে দুই ভাইয়ের ছবি দিয়ে ম্যুরাল আমাদের আহত করেছে। অবিলম্বে এই ম্যুরাল থেকে দুই ভাইয়ের ছবি অপসারণ করতে হবে।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, নবনির্মিত ম্যুরালটি ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ বাস্তবায়ন করছে। আমি আজ একটি স্মারকলিপি পেয়েছি। যেখানে এমপি মহোদয় ও উনার ভাইয়ের ছবি অপসারণের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির হাসান পলাশ বলেন, এডিবির অর্থায়নে ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ‘স্বাগত তোরণ’ নামে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
ধর্মপাশা উপজেলা চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রোকনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি। তার ভাই সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের মোবাইল ফোনে দিলে তিনি বলেন, আমি সংসদের ভেতরে আছি। এখন কথা বলা যাবেনা।