বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার লাউড়েরগড় সংলগ্ন শাহ আরেফিনের মাঝারের পাশে আখক্ষেতে ২০১২ সনে কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় চার জনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-, প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা এবং আরেকটি ধর্ষণের ঘটনায় এক জনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও গাড়িতে এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্ঠার ঘটনায় চালককে ১৪ বছর সশ্রম কারাদ- ও ২০ হাজার টাকা জরিমানার রায় প্রদান করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলার নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই পৃথক তিনটি মামলার রায় ঘোষণা করেন।
আদালতের দায়িত্বশীলরা জানান, জেলার বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার দীগেন্দ্র বর্মন ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী একটি এনজিওতে চাকুরী করতেন। ২০১২ সালের ৩১ আগস্ট দুপুরে অফিসের কাজে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সদরে আসেন তিনি। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলে আসামী আনোয়ার হোসেন তাকে জোর করে মোটরসাইকেলে তুলে বেড়ানোর কথা বলে তাহিরপুর সীমান্তের শাহ্ আরেফিন মোকামের পাশে নিয়ে যায়। মোকামের পাশের আখক্ষেতে নিয়ে ভয় দেখিয়ে তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এসময় হঠাৎ করে পাশে থাকা আসামী শয়ফুল্লাহ, সাইদুর রহমান ও শফিকুল তাদেরকে ঘেরাও করে। একপর্যায়ে আসামী আনোয়ার হোসেনকে বেঁধে ওই ছাত্রীকে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে তারা। আসামী সেলিম, আনোয়ারুল আজিম আকাশ, মাফিনুর গণধর্ষণের ভিডিও চিএধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। পরে থানায় মামলা দায়ের হয়। আসামী শফিকুল, শয়ফুল্লাহ ও ছাইদুর রহমান ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ চার্জশীট দাখিল করে। মামলা চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষ আট জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করেন। সাক্ষ্য প্রমাণাদি পর্যালোচনা করে আদালত আসামী আনোয়ার হোসেন খোকন, শয়ফুল্লাহ, ছাইদুর রহমান ও শফিকুলকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- এবং এক লাখ জরিমানার সাজা প্রদান করেন। জরিমানার টাকা ভিকটিম ক্ষতিপূরণ হিসাবে পাবে। রায় ঘোষণার সময় আসামীগণ উপস্থিত ছিল।
অন্যদিকে, দুই বছর আগে দিরাইয়ে চলন্ত বাসে কলেজ শিক্ষার্থী তরুণিকে নির্যাতনের আলোচিত ঘটনার অপরাধীকেও বৃহস্পতিবার কারাদ- দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর দিরাই শহরের মজলিশপুর গ্রামের ওই শিক্ষার্থী সিলেটের লামাকাজী থেকে নিজ বাড়ি আসার সময় বাসে উঠেন। গাড়িটি দিরাই সড়কের মাথায় এলে তিনি বাস থেকে নামার চেষ্টা করেন। এসময় চালক শহিদ মিয়া কৌশলে তাকে নামতে না দিয়ে বাস চালাতে থাকে। ওই তরুণিকে পুনরায় দিরাই নিয়ে নামিয়ে দিবে জানায় চালক। গাড়ীতে আর কোন যাত্রী ছিল না। গাড়িটি কাঠইর ব্রীজ পার হওয়ার পর চালক হেলফারকে গাড়ি চালাতে দিয়ে তরুণির পাশের সীটে জোরপূর্বক বসে পড়ে এবং তার ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পেছনের সীটে বসে। মেয়েটি তার ভ্যানিটি ব্যাগ আনার জন্য গেলে চালক তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। মেয়েটি আত্মসম্মান রক্ষায় জোর করে দরজার কাছে এসে লাফ দিয়ে পড়ে যায়। পরে অন্যরা এসে আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান এবং তার আত্মীয় স্বজনকে খবর দেন। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলে, আসামী ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ চার্জশীট দাখিল করে। শেষে রাষ্ট্রপক্ষ নয় জন জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করে। সাক্ষ্য প্রমাণাদি পর্যালোচনা করে আদালত বৃহস্পতিবার শহিদ মিয়াকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদ- এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এই জরিমানার টাকা ভিকটিম পাবেন। রায় ঘোষণার সময় আসামীগণ উপস্থিত ছিল।
সুনামগঞ্জের ছাতকের আরেকটি চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের ঘটনায় আসামী ইকবাল হোসেনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- এবং এক লক্ষ টাকা জরিমানা এবং আসামী জয়নাল আবেদীনকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদ- এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানার রায় দিয়েছেন একই আদালত। অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদ-ের আদেশ দেন।
ছাতকের মোহনপুর গ্রামে ২০১২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১১ টায় বাড়ি থেকেই আসামী ইকবাল হোসেন আসামী জয়নাল আবেদীনের সহযোগিতায় অপহরণ করে সিলেট নিয়ে যায় তরুণিকে। ওখানে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণ করা হয়। পরে নির্যাতিতা থানায় এসে মামলা দায়ের করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করে। রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলায় চার জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করে। সাক্ষ্য প্রমাণাদি পর্যালোচনা করে আদালত আসামীদেরকে এই সাজা প্রদান করেন।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে নারী ও শিশু আদালতের পিপি নান্টু রায় বললেন, তিনটি রায়েই রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ্ট, নির্যাতিতা বাদীগণ ন্যায় বিচার পেয়েছেন। রায় ঘোষণার সময় বাদীপক্ষের কাউকে আদালত প্রাঙ্গণে দেখা যায় নি।