বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে সরকারি টাকায় নির্মিত ১০ লাখ টাকার ম্যুরালের ডিজাইন পরিবর্তন করে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তার ছোট ভাই ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুকনের ছবি সংযুক্ত করায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় মধ্যনগর উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
সরকারি টাকায় নির্মাণাধীন ম্যুরালের ডিজাইন পরিবর্তন করে নিজেদের ছবি সংযুক্ত করায় স্থানীয় এমপি রতন ও তার ছোট ভাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রুকনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ তিন দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের মধ্যনগর উপজেলা শাখার আহ্বায়ক ও বংশিকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ।
তিন দফা দাবিতে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্মাণাধীন ম্যুরাল থেকে সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তার ছোট ভাই ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুকনের ছবি দ্রুত অপসারণ করতে হবে। সরকারি অর্থায়নে নির্মিত এই স্থাপত্যকর্মের মূল ডিজাইন পরিবর্তনের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা। এবং সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তার ভাই ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুকনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন স্মরকলিপি পাওয়ার বিষটি নিশ্চিত করে বলেন,‘ মধ্যনগরে নির্মাণাধীন ম্যুরালের ডিজাইন উপেক্ষাসহ নানা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন উপজেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক। স্মারকলিপিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এলজিইডির ধর্মপাশা উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরিফ উল্লাহ খান চলতি বছরের ২৩ জুনে দেওয়া চিঠিতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ধর্মপাশার মেসার্স রানা ট্রেডার্সকে ৯ লাখ ৯৯ হাজার সাতশ ২৪ টাকা চুক্তিমূল্যে ত্রিশ দিনের মধ্যে মধ্যনগর ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে ম্যুরাল নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দিয়েছিলেন। ওই ম্যুরালের ডিজাইনে একপাশে বঙ্গবন্ধু ও আরেকপাশে কেবল প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ছবি থাকার কথা ছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তার ছোট ভাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুকনের ছবি যুক্ত করা হয়েছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রানা ট্রেডার্সের পরিচালক মো. ইজাজুর রহমান রানা গণমাধ্যমকে বলেছেন,‘ কাজটি তিনি করেন নি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাহেব তার লাইসেন্সটি নিয়ে চুন্নু মিয়া নামের ধর্মপাশার একজনকে দিয়ে কাজটি করিয়েছেন।’
চুন্ন মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন,‘উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেবের নির্দেশে ম্যুরালের ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে। নেত্রকোণার আরও অনেক উপজেলায় এভাবে করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের সাথে কথা বলতে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিক কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
এমপি রতনের ছোট ভাই ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুকন বলেন,‘ এক জনের লাইসেন্স দিয়ে আরেকজন কাজ করার সুযোগ নেই। এসব মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। ম্যুরালের ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়নি। আমাদের পাশের নেত্রকোনা, কমলাকান্দা, মদনে একই ডিজাইনে ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছে। সেখানের ম্যুরালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী মহোদয় ও বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে। ম্যুরালটির দুই পাশের একদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের ছবি রয়েছে, অন্যদিকে শুধু বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে। ’
ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির হাসান বললেন,‘ ম্যুরালের ডিজাইন পরিবর্তনের বিষয়টি তিনি জানেন না। এটি এডিপির বরাদ্দে প্রায় ১০ লাখ টাকায় নির্মাণ করা হয়েছে। এই ডিজাইন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের করা। ডিজাইন পরিবর্তন করতে হলে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ডিজাইন পরিবর্তনের অনুমোদন নিতে হবে। ওখান থেকে অনুমতি পাওয়া গেলেই কেবল ডিজাইন পরিবর্তন করা যায়। ডিজাইন পরিবর্তনের বিষয়ে গতকাল রবিবার পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের কোন নির্দেশনা আসেনি।’