হাওর ডেস্কঃ
মানিক রহমান। জন্ম থেকেই দুই হাত নাই। দুই পা থাকলেও একটি লম্বা ও অন্যটি খাটো। অদম্য ইচ্ছা শক্তি থাকায় সে সুস্থ ও স্বাভাবিক অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মতোই পা দিয়ে লিখে এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে বাবা-মা ও শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ উপজেলা বাসীর মুখ উজ্জল করেছে শারীরিক প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থী মানিক রহমান। অদম্য মেধাবী মানিক রহমান এ বছর ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। পাঁ দিয়ে লিখেও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় তার হাতের লেখা মাধুর্যপূর্ণ ।
সোমবার দুপুরে নিজের ল্যাপটপ পা দিয়ে চালিয়ে পরীক্ষার ফল গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হওয়ার পর মানিকের গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়ার খবর শুনে সকলেই মুগ্ধ।
এই শারীরিক প্রতিবন্ধী মানিক রহমানের বাড়ী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামে ওষধ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ও মা প্রভাষক মরিয়ম বেগমের ছেলে। বাবা-মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমে মানিক রহমানের দুটো হাত নাই, একটি পা অন্যটির চেয়ে অনেকাংশে খাটো। কিন্তু কখনও পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পড়েনি। বাবা-মা ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় নিজের আত্মবিশ্বাস ও মনোবলকে পুঁজি করে সে পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি ও জেমসসিতেও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছেন মানিক রহমান। পা দিয়ে লেখাই ভাল রেজাল্ট নয়, সে পা দিয়ে মোবাইল চালানো এবং কম্পিউটার টাইপিং ও ইন্টারনেট ব্যবহারেও পারদর্শী মানিক রহমান। তাই মানিক রহমান ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে সকালের দোয়া কামনা করেন। বাবা-মায়ের বড় ছেলে মানিক রহমান। তার দুটো হাত না থাকলেও পড়ালেখা থেকে কখনও পিছিয়ে পড়েনি এই লড়াকু সৈনিক মানিক। তাকে কঠোর পরিশ্রম করা শিখিয়েছেন তার পরিবার। লড়াকু সৈনিক মানিক রহমান ২০১৬ সালে জছিমিঞা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসিতে গোল্ডেন এ-প্লাস পায় এবং ২০১৯ সালে ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও প্রতিবন্ধী মানিকের বাবা মিজানুর রহমান ও মা মরিয়ম বেগম জানান, আমার দুই ছেলে । মানিক বড়। ছোট ছেলে মাহীম ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বড় ছেলে মানিক প্রতিবন্ধী এটা আমরা মনে করি না। জন্ম থেকেই তার দুটো হাত না থাকলেও ছোট থেকে আমরা তাকে পাঁ দিয়ে লেখার অভ্যাস করিয়েছি। সমাজে অনেক সুস্থ ও স্বাভাবিক ছেলে-মেয়েদের চেয়েও মানিক পিএসসি ও জেএসসিতে ভাল রেজাল্ট করেছে। এটা আমাদের গর্ব। সবাই আমার ছেলেটার জন্য দোয়া করবেন সে যেন সুস্থ সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকতে পারে। সে এইচএসসি পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করে তার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে।
মানিক রহমান বলেন, আমার দুটো হাত না থাকলেও আল্লাহ রহমতে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছি। আমি এর আগে জেএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ-প্লাস পাই। সে আরও বলেন, আমি এইচএসসি পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করে প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারি এবং ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।
ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধি হওয়ার পরেও মানিক রহমান অন্যান্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে ভাল ফলাফল করায় আমরা মুগ্ধ। সে জীবনে অনেক বড় হোক এ দোয়াই করি।