স্টাফ রিপোর্টার::
সাত বছর পর নতুন নেতৃত্ব পেল সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ। তৃণমূলের কর্মীবান্ধব এবং রাজপথের সাহসী নেতা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুটকে সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট রাজনৈতিক সহচর ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রায়াত হোসেন বখতের কনিষ্ট ছেলে সাবেক ছাত্রনেতা নোমান বখত পলিনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান ও পুরানা আওয়ামী লীগার খ্যাত ‘বখত’ পরিবার জেলার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বড়ো ফ্যাক্টর। জেলা শহরসহ তৃণমূলে রয়েছে এই পরিবারের বিশেষ প্রভাব। অন্যদিকে গত তিন দশক ধরে আওয়ামী লীগের সাহসী ও কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন নূরুল হুদা মুকুট। জেলার সর্বত্র রয়েছে তার নিবেদিতপ্রাণ কর্মীবাহিনী। তাঁদের নেতৃত্বে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ রাজপথে আবার সরব হবে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে তাদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে বলে আশাবাদী তৃণমূল। গ্রুপিং কোন্দলে না গিয়ে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি পালন করলে সুনামগঞ্জের রাজনীতিতে রাজপথ আওয়ামী লীগের দখলেই থাকবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। নবনির্বাচিত প্রভাবশালী দুই নেতা এখন থেকে দ্বন্ধ কোন্দলে না গিয়ে তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করে রাজপথ আওয়ামী লীগের দখলে রাখার অঙ্গিকার করেছেন তারা।
জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন নূরুল হুদা মুকুট। এরপর থেকেই সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতায় পরিণত হন। ১৯৯৭ সনের জেলা কমিটিতে তিনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন। ২০১৬ সনের কমিটিতে তাকে সিনিয়র সহ-সভাপতি করা হয়। জেলা পরিষদের টানা দুটি নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন। সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারি তাকে সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি। নূরুল হুদা মুকুটের প্রতিটি উপজেলায়ই রয়েছে বিশ্বস্থ কর্মীবাহিনী। কর্মীদের বিপদে আপদে পাশে থাকায় তিনি তাদের কাছে জনপ্রিয়। গত সম্মেলন থেকেই তাকে আওয়ামী লীগের মূল নেতৃত্ব দেওয়ার দাবি ছিল তৃণমূলের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ছিটকে পড়লেও এবার তাকে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
নোমান বখত পলিন শহরের পুরানা আওয়ামী লীগার খ্যাত ‘বখত’ পরিবারের কনিষ্ট সন্তান। তার বাবা হোসেন বখত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহচর। ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তার তিন সন্তান সুভাষ বখত, মনোয়ার বখত নেক ও শাহজাহান বখতকে নিয়ে তিনি মুুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে অক্লান্ত কাজ করেছেন হোসেন বখত। নোমান বখত পলিনের ভাই প্রয়াত মেয়র মনোয়ার বখত নেক আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার আরেক ভাই প্রয়াত মেয়র আয়ূব বখত জগলুল ছিলেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের জিএস, ছাত্রলীগের সেক্রেটারি, জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি এবং আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য। পলিন বখত নিজেও সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ ও কলেজ ছাত্রলীগে নেতৃত্ব দিয়েছেন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে কিশোরকাল থেকেই ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা হিসেবে রাজপথে সোচ্চার ছিলেন তিনি। পুরানা আওয়ামী লীগার খ্যাত ‘বখত’ পরিবারের সদস্য হিসেবে জেলার সর্বত্রই তার পারিবারিক গ্রহণযোগ্যতা ও প্রভাব আছে।
তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান, অতীতে আওয়ামী লীগের যতগুলো কমিটি হয়েছে তার মধ্যে সেরা নেতৃত্ব বাছাই করা হয়েছে মুকুট-পলিনকে। জেলার জনপ্রিয় ও সাহসী নেতা হিসেবে তারা ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি পালন করলে রাজনীতির রাজপথ তাদের দখলেই থাকবে।
সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সরকারি কৌশুলী এডভোকেট আক্তারুজ্জামান আহমাদ সেলিম বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করেছেন। তারা দ্বন্ধ-কোন্দল ভুলে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ নিয়ে রাজপথে থাকলে রাজপথ আওয়ামী লীগের দখলেই থাকবে। জাতীয় নির্বাচনেও ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ বিরাট ভূমিকা রাখতে পারবে।
শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন চৌধুরী বলেন, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শন সুদূরপ্রসারী। সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তারই প্রমাণ।
নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন বলেন, আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রেখে রাজপথ দখলে রাখার লক্ষ্য আমাদের। আমরা এক থাকলে কোন শক্তি আমাদের সঙ্গে পারবেনা। সুনামগঞ্জকে আবারও জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘাটি হিসেবে রূপান্তরিত করতে চাই।
নতুন কমিটির সভাপতি নূরুল হুদা মুকুট বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার ছায়াতলে গত তিরিশ বছর ধরে আছি। তিনি যে দায়িত্ব দিয়েছেন আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রেখে সেই দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবো।