1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

অগ্নীঝরা স্বাধীনতার মাস শুরু

  • আপডেট টাইম :: বুধবার, ১ মার্চ, ২০২৩, ২.২৪ পিএম
  • ১৫৩ বার পড়া হয়েছে

হাওর ডেস্ক:
বাঙালি জাতির না পাওয়ার আক্ষেপ ঘোচানো, রক্তস্নাত পিচ্ছিল পথ পেরিয়ে গৌরবগাথা রচনার মাস মার্চের প্রথম দিন আজ। মানবস্ফুলিঙ্গ, বেদনা ও ত্যাগের মাস। এ মাসেই পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন এক অর্জনের অভ্যুদয় ঘটেছিল। এ মাসের ৭ তারিখেই রেসকোর্সের ময়দানে সুউচ্চ কণ্ঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে ঘোষিত হয়েছিল স্বাধীনতার বারুদমাখা ভাষণ। ২৫ মার্চ লেখা হয়েছিল বাংলা ও বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন, হাজার বছরের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য, যার নাম বাংলাদেশ। এই মাসের প্রতিটি দিনই বাঙালি জাতির কাছে স্মরণীয়, অনুপ্রেরণা আর শক্তির উৎস।

ব্রিটিশ শাসনের শিকল ভেঙে বাঙালি জাতি পাকিস্তান নামের হানাদারদের জাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয় দীর্ঘদিন। তবে শুরু থেকেই এ দেশের শোষিত, নিপীড়িত, অধিকারবঞ্চিত মানুষ স্বাধিকারের জন্য লড়াই করে আসছিল। মহান ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ছিল জাতিসত্তার স্বরূপ অন্বেষার একেকটি মাইলফলক। সত্তরের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে নানা ষড়যন্ত্র ও টালবাহানা করছিল। তবে স্বাধিকার আদায়ের দীর্ঘ পরিক্রমার চূড়ান্ত রূপ পেয়েছিল এই মার্চ মাসেই।

১৯৭১ এর মার্চের ১ তারিখ ছিল সোমবার। দুপুর ১টা ৫ মিনিটে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে ৩ মার্চ ঢাকায় আহূত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে অধিবেশন বাতিলের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ক্রোধে, ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, অধিকারহীন মানুষ ফেটে পড়ে বিক্ষোভে।

এদিন হোটেল পূর্বাণীতে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির সভায় ৬ দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্রের খসড়া প্রণয়নের কাজ চলছিল। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণায় বিক্ষুব্ধ মানুষ হোটেল পূর্বাণীর সামনে এসে সমবেত হয়ে স্লোগানে স্লোগানে চারদিক প্রকম্পিত করে তুলছিল। তখন বঙ্গবন্ধু হোটেলের সামনে এসে সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় হোটেল পূর্বাণীতে এক সংবাদ সম্মেলন ডাকেন এবং বৈঠক করেন। সংবাদ সম্মেলনে অসহযোগ আন্দোলনের প্রাথমিক কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং বলেন, ৬ মার্চ পর্যন্ত সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল আর ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

এদিন ঢাকার বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা বিমানবন্দর এবং পিআইয়ের মতিঝিল অফিসের কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অফিস ছেড়ে চলে যান। ফলে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে প্রদেশের বিভিন্ন রুটে এবং আন্তঃদেশীয় রুটে বিমান চলেনি।

এদিকে, রাতে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল এ এম ইয়াহিয়া খান ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক শাসনকর্তা লে. জেনারেল সাহেবজাদা এম এয়াকুব খানকে প্রদেশের বেসামরিক শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। গভীর রাতে ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক প্রশাসক এক নতুন আদেশ জারি করে সংবাদপত্রে দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কোনো খবর বা ছবি প্রকাশ না করার নির্দেশ দেন।

১৯৭১-এর ৭ মার্চ সাবেক রেসকোর্স ময়দান বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেওয়া এই ঐতিহাসিক ভাষণের সময় মুহুর্মুহু গর্জনে উত্তাল ছিল জনসমুদ্র। লাখো কণ্ঠের একই আওয়াজ উচ্চারিত হতে থাকে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। কেঁপে ওঠে ইয়াহিয়ার মসনদ পর্যন্ত। ভীত হয়ে পড়েন গদি রক্ষায়। তবে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে অদ্ভুত এক উন্মাদনা। স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকা জাতি প্রস্তুতি নেয় স্বাধীনতা যুদ্ধের।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য যে আগুন জ্বলে উঠছিল, সে আগুন যেন ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। এরপর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয়দফা এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সিঁড়ি বেয়ে একাত্তরের মার্চ বাঙালির জীবনে নিয়ে আসে নতুন বার্তা। ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানিরা বাঙালির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্দ করে দেওয়ার লক্ষ্যে ‘অপারশেন সার্চলাইট’ নামে বাঙালি নিধনে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি সৈন্যরা গ্রেপ্তার করে তার বাড়ি থেকে। এর পরের ঘটনাপ্রবাহ প্রতিরোধের ইতিহাস। তবে এর আগেই বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করে যান নতুন একটি মানচিত্রের অভ্যুদয়ের যাত্রার কথা। আর সেই শাণিত ভাষণেই দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা শুধু দেশমাতৃকাকে ভালোবেসে শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা হয়। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে জাতি লাভ করে স্বাধীনতা। বিশ্বমানচিত্রে রক্তলাল একটি দেশের অভ্যুদয় ঘটে। যার নাম বাংলাদেশ।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!