স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সনে জাতিসংঘ কনভেনশনে স্বাক্ষর করলেও এখনো আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়নি। এটা দুঃখজনক। অথচ পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশ তাদের আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের আদিবাসীরা সার্বিক ক্ষেত্রে বৈষম্যের স্বীকার উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, আদিবাসীদের উন্নয়নে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে।
বুধবার বিকেলে তাহিরপুর উপজেলার চানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্ব আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ উপলক্ষে আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটি চানপুর বাজারে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করে। র্যালিটি বাজার প্রদক্ষিণ করে চানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এসে আলোচসভায় মিলিত হয়। আলোচনাসভা শেষে আদিবাসী সম্প্রদায়ের তরুণ তরুণি-শিশু-কিশোর তাদের নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক উপস্থাপনায়।
আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সূষমা জাম্বিলের সভাপতিত্বে ও সায়মন সাংমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাদাঘাট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. জুনাব আলী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মুজিবুর রহমান, আদিবাসী নেতা ইলিমেন্ট হাজং, সাংবাদিক শামস শামীম, ইউপি সদস্য স¤্রাট মিয়া প্রমুখ।
প্রধান অতিথি অধ্যক্ষ মো. জুনাব আলী বলেন, আদিবাসীরা নানা ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। তবে আগের চেয়ে তারা এখন অনেকটা সচেতন হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদেরকে দাবি আদায়ে সোচ্চার হতে হবে।
বিশেষ অতিথি প্রধান শিক্ষক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রেখে চলছেন। এভাবে আমরা বাঙ্গালি-আদিবাসী মিলে-মিশের সম্বপ্রীতির সঙ্গে আজীবন বসবাস করতে চাই।
বিশেষ অতিথি ইলিমেন্ট হাজং বলেন, আমরা উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার। উন্নয়নকর্মকা-ে আমাদের মতামত কখনো নেওয়া হয়না। আমরা এই দাবিতে এবং সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের অনেক হতাহত হয়েছে। তারপরও আমাদের স্বীকৃতি মিলেনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক কালের কণ্ঠ ও একাত্তর টিভির সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক শামস শামীম বলেন, সহজ-সরল-নির্লোভ এবং সৎ জীবনের প্রোজ্জ্বল সম্প্রদায় হলো আদিবাসী। যারা আদিকাল থেকে নিজেদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্রবজায় রেখে বসবাস করছেন। রাষ্ট্রে সমান ভোটাধিকারপ্রাপ্ত এই সম্প্রদায় রাষ্ট্রীয় রীতি-নীতি-নাগরিক কর্তব্য পালন করলেও কর্মক্ষেত্রে তারা বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার। তাদের জীবন ও সম্পদ এখন হুমকিতে। আর্ত সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে আঘাত আসায় তাদের অনেকেই এখন দেশান্তরি হচ্ছে। তাই রাষ্ট্র ও সরকারকে তাদের প্রতি আন্তরিক হতে হবে। পশ্চাদপদ এই সম্প্রদায়ের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে।
আলোচনাসভা শেষে আদিবাসী সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণিদের মধ্যে রূপা দীব্রা, ডলি দীব্রাসহ তরুণিরা নাচ ও গান পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতা করেন এলাকার বিশিষ্ট আদিবাসী নারী নেত্রী মেরিনা দীব্রা।