ধর্মপাশা প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার ছয়টি হাওরের বোরো জমির ধান খেতে সপ্তাহ দেড়েক সময় ধরে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এতে করে ওই দুটি উপজেলার কৃষকেরা বোরো ধানের ফলন কম হওয়ার আশঙ্কায় তাঁদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
ধর্মপাশা ও ম্যধনগর উপজেলার বেশ কয়েকজন কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলায় ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে। এই দুটি উপজেলায় ৩১হাজার ৮৫০হেক্টর বোরো জমিতে ব্রি ২৮,২৯.৮৮,৮৯,৯২.এবং বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে মধ্যনগর উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়নের বড় ঘোড়াডোবা হাওর ,ছোট ঘোড়াডোবা হাওর, চামরদানী ইউনিয়নের কাইলানী হাওর ও একই ইউনিয়নের সোলেমানপুর গাঙ্গেরচর হাওর এবং ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের ধারাম ও সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের সোনামড়ল হাওরের বোরো জমির ব্রি ২৮ ও ব্রি ২৯ ধানে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে ।এ নিয়ে কৃষকেরা হাওরের বোরো ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কায় কৃষকেরা
শঙ্কায় রয়েছেন।
ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের ঘুলুয়া গ্রামের বাসিন্দা ও ধারাম হাওরপাাড়ের কৃষক বাবর আলী (৭০) বলেন, আমরার গ্রামের সামনে ধারাম হাওরে আমি আট একর বোরো জমিতে ব্রি ২৮ ও ২৯ধানের আবাদ করছি। ১০/১২দিন আগে আমার ১২কাঠা (১কাঠা=৮শতক) জমির ধানের মধ্যে রোগ অইছে। রোগের নাম কী জানি না। খেতের ধানগাছ গুলা আগুনের পুইরা যাওয়ার মত দেহা যাইতাছে। ধানের ভিতওর চাউল নাইগা। এই রহম রোগ অইলে কিতা করন লাগবো এইডা লইয়া উপজেলা কৃষি অফিস থাইক্যা কেউ আইয়া কুুনু পরামর্শ দিছইন না।
একই উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের সুখাইড় গ্রামের বাসিন্দা ও ৪নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কৃষক বাবুল মিয়া (৫০)। তিনি বলেন, আমাদের ইউনিয়নের সোনামড়ল হাওরে আমার ১০হাল (১২কিয়ারে ১হাল,১কিয়ার =৩২শতক জমি আছে। এই হাওরে থাকা জমিতে আমি ব্রি ২৮,ব্রি ২৯ ও হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ করছি। ৮/১০দিন আগে ১ হাল ব্রি ২৮ ও ব্রি ২৯ধান খেতের পাতায় এক ধরণের দাগ দেহা দিছিল। দুই তিন দিন যাইতে না যাইতেই পাতার রং আগুনের পোড়ার মতো অইয়া গেছিল। আমি কৃষি অফিসের লোকজনদের কথা মতো ওষুধ দিছি। কিন্তু কুনু কাম অইছে না। ১০হাল জমির মধ্যে এক হাল জমির ফুরাডাই নষ্ট অইয়া গেছে। ধানের ভিতরও কুনু চাউল নাইগ্যা। ওষুধ দেওয়ার পরে বৃষ্টির অওয়ায় ওষুধে কুনু কাম করে নাই । ১০হাল জমির মধ্যে চাইর হাল জমিতে আমি ওষুধ দিছি। একই গ্রামের কৃষক নবরঞ্জন দাস (৪৮) বলেন.সোনামড়ল হাওরে আমার ১০কিয়ার জমি আছে । আমি ব্রি ২৮ ও ৮৯জাতের ধানের আবাদ করছি। তিন কিয়ার জমিতে ব্লাস্ট রোগ অহনের তিনদিনের মাথায় আমি ওষুধ দেওনে এই রোগ কইমা গেছিল। নতুন কইরা আবার এই রোগ দেহা দিতাছে। রোগ বালাই অইয়া ধানের ক্ষতি অহনে ইবার ধানের ফলন কম অইবো।
মধ্যনগর উপজেলার বড় ঘোড়াডোবা ও ছোট ঘোড়াডোবা হাওরে ২১কিয়ার (১কিয়ার =৩২শতক) জমিতে ব্রি ২৮ ও ব্রি ২৯জাতের ধানের আবাদ করেছেন উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়নের জমশেরপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক পলাশ চন্দ্র সরকার (৪০)। তিনি বলেন , এই দুটি হাওরের ১৮কিয়ার ব্রি ২৮জাতের ধান খেতের ব্লাস্ট সংক্রমণ হয়েছে। এই জমিগুলাতে কোনোরহম কাছি লাগানি যাইতোনা। ব্লাস্ট রোগে আমার ধান খেতের চরম সর্বনাশ কইরালছে। এই বিফদ কাইট্টা কীভায় যে উঠবাম তা উফুর ওয়ালাই জানে।
মধ্যনগর উপজেলার চামরদানী ইউনিয়নের সুলেমানপুর গ্রামের গ্রামের বাসিন্দা কাইলানী ও সুলেমানপুর গাঙ্গেরচরম হাওর পাড়ের কৃষক হাবিবুল ,মহসীন ও আল আমিন বলেন, এই দুটি হাওরে আমাদের ২০থেকে ২৫কিয়ার জমির ব্রি ২৮ ও ব্রি ২৯ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। এই রোগ প্রতিরোধে সরকারি ভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
মধ্যনগর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ধর্মপাশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্না বলেন, আবহাওয়াগত কারণে এই দুটি উপজেলার বেশ কয়েকটি হাওরের যৎ সামান্য জমিতে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। আমরা মাস খানেক আগে থেকেই এই দুটি উপজেলার কৃষকদেরকে ধানের রোগ বালাই ও পোকা দমন রোধে কী কী করণীয় এ নিয়ে জনসচেতনা সৃষ্টির লক্ষে তাঁদেরকে নিয়ে সভা করেছি এবং তাদের মধ্যে লিফলেট বিতরণও করেছি। তিনি আরও বলেন, ব্লাস্ট নিয়ে আসলে ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করার মতো এখনো কিছু হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। প্রতি এক কিয়ার (৩২শতক) জমিতে ৫০গ্রাম ছত্রাক নাশক পাউডার ও ৬৪লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে ব্লাস্ট সংক্রমন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত জমিতে স্প্রে করতে হবে। এই রোগটি যেহেতু সংক্রমিত তাই যে জমিতে ব্লাস্ট রোগ সংক্রমণ হবে সেই জমির আশপাশেও খেতেও স্প্রে করতে হবে।