হাওর ডেস্ক::
তহবিল সংকটের কারণে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তা আরো ২০ শতাংশ কমাতে হবে। গতকাল শুক্রবার জাপানের রাজধানী টোকিওতে এক সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতিবিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার টম অ্যান্ড্রুজ এ আশঙ্কার কথা জানান। একই সঙ্গে তিনি মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে জাপানের প্রতি আহ্বান জানান।
মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় জাপানে ১০ দিনের সফরে যান জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার অ্যান্ড্রুজ। সফর শেষে টোকিওতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন।
তহবিল সংকটের কারণে গত মার্চেই রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা ১৭ শতাংশ কমিয়েছে জাতিসংঘ। অনতিবিলম্বে তহবিল না পেলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে আরো ২০ শতাংশ খাদ্য সহায়তা কমাতে হবে। এতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করেছেন টম অ্যান্ড্রুজ।
তিনি বলেন, নতুন করে ২০ শতাংশ সহায়তা কমানোর ফলে আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গাপ্রতি দৈনিক বরাদ্দ ২৭ মার্কিন সেন্টে (প্রায় ২৮ টাকা ৬৬ পয়সা) নেমে আসবে।
জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ বলেন, রোহিঙ্গা অভিভাবকরা তাঁকে বলেছেন যে সহায়তা কাটছাঁটের প্রভাব শুধু ক্ষুধা ও অপুষ্টিই সৃষ্টি করবে না, আশ্রয়শিবিরে উত্তেজনা ও সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াবে।
অ্যান্ড্রুজ বলেন, গত বছর সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির ছাড়ার জন্য তাদের ও সন্তানদের জীবন মানবপাচারকারীদের হাতে সঁপে দিয়েছেন। বিপজ্জনক স্থলপথে ও সাগরে চলাচলের অযোগ্য নৌকায় কয়েক শ প্রাণহানি ঘটেছে।
অ্যান্ড্রুজ বলেন, ‘খাদ্য সহায়তা কমানোর ফলে আমরা প্রায় নিশ্চিতভাবেই আশা করতে পারি যে ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে পালাতে রোহিঙ্গারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে।’
টোকিওতে সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ডু্রজ জাপান সরকারকে মিয়ানমারের অবনতিশীল সংকট মোকাবেলা করতে এবং দেশটির সামরিক জান্তার ওপর চাপ বাড়াতে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সংকটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ ব্যর্থ হচ্ছে। আর এই ব্যর্থতা মিয়ানমারের লাখ লাখ মানুষের জীবনকে ধ্বংস করছে।’
ইউক্রেনে হস্তক্ষেপের জন্য রাশিয়ার ওপর জাপানের নিষেধাজ্ঞার উদাহরণ দিয়ে অ্যান্ড্রুজ মিয়ানমারেও একই ভূমিকা নিতে টোকিওকে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমি জাপানে এসেছি। কারণ আমি বিশ্বাস করি যে সংকট সমাধানে জাপানের একটি অপরিহার্য ভূমিকা আছে।’
মিয়ানমারের ক্রম অবনতিশীল পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে অ্যান্ড্রুজ বলেন, মিয়ানমারের সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং তাঁর দেশের জনগণের বিরুদ্ধে বর্বরতা ও নিপীড়নের সঙ্গে তাদের বিরোধিতার ব্যাপারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।
অ্যান্ড্রুজ আরো বলেন, নির্বিচারে আটক, নির্যাতন এবং গ্রামগুলোতে পরিকল্পিত হামলা জান্তার বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামরিক বাহিনী বারবার মিয়ানমারজুড়ে বেসামরিক জনগণকে আক্রমণ করছে এবং মিয়ানমারের জনগণের বিরুদ্ধে আক্ষরিক অর্থেই যুদ্ধ করেছে।
টম অ্যান্ড্রুজ জাপানকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং তার অর্থায়নের মূল উৎসর ওপর লক্ষ্যবস্তু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার আহ্বান জানান। তিনি মিয়ানমারের সামরিক সদস্যদের জন্য জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচি বন্ধ করারও আহ্বান জানান।
টম অ্যান্ড্রুজ জাপান সরকারকে মিয়ানমারে আসন্ন নির্বাচনকে স্বীকৃতি না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। হিরোশিমায় আসন্ন জি৭ শীর্ষ সম্মেলনকে মিয়ানমারের পরিস্থিতি বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে জাপানের সামনে বড় সুযোগ বলেও তিনি অভিহিত করেন।