হাওর ডেস্ক::
মিয়ানমারের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা, কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮১ জনে দাঁড়িয়েছে।
দেশটির ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর বাসিন্দারা তাদের ভেঙে পড়া ঘরবাড়ি মেরামত করার চেষ্টা করছেন ও ত্রাণ সহয়তার জন্য অপেক্ষা করছেন।
রোববার ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২১০ কিলোমিটার বাতাসের বেগ নিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ক্ষতবিক্ষত রাখাইনে আঘাত হানে মোখা, এতে রাজ্যের রাজধানী সিত্তুয়ের ঘরবাড়ির ছাদ উড়ে যায় এবং শহরটি জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়।
স্থানীয় নেতাদের বরাত দিয়ে দেশটির ইরাবতী সংবাদপত্র জানিয়েছে, রাখাইনের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের গ্রাম বু মা ও নিকটবর্তী খায়ুং দোকে কার এ অন্তত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম এমআরটিভির খবর অনুযায়ী, রাখাইনের রাজধানী সিত্তুয়ের উত্তরে ছোট শহর রাথেডাং এ একটি বৌদ্ধ মঠ ধসে ১৩ জন নিহত হয়েছেন আর পাশ্ববর্তী গ্রামে একটি ভবন ধসে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
বু মার গ্রাম প্রধান কারলো বলেন, “মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে, কারণ এখনো শতাধিক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।”
নিকটে দাঁড়িয়ে থাকা আবুল হোসেন (৬৬) জানান, কবরে তার কন্যার জন্য দোয়া করে আসলেন, মঙ্গলবার সকালে ওর মৃতদেহ পেয়েছিলেন।
“আমার শরীর ভালো যাচ্ছিল না, তাই ঘূর্ণিঝড়ের আগে আমাদের অন্য কোথাও যেতে দেরি হচ্ছিল। আমরা যখন বের হবো বলে ভাবছিলাম, তখনই জলোচ্ছ্বাস আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়,” বলেন তিনি।
“গ্রামের খালে তার লাশ খুঁজে পাই। তাকে কবর দিয়ে এলাম,” কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন তিনি।
গ্রামের অন্য বাসিন্দারা সাগরতীরে গিয়ে জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া পরিবারের সদস্যদের খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন।
সিত্তুয়ের কাছে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের দাপাইং শিবিরে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ে শিবিরটি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেখানে কোনো ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি।
শিবিরটির নেতা বলেন, “সেতুগুলো ভেঙে পড়ায় কেউ শিবির ছেড়ে যেতে পারছেন না। আমাদের সাহায্য দরকার।”
স্থানীয় নেতা ও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওন তাও গি গ্রামে ছয়জন ও ওন তাও চাই গ্রামে একজন নিহত হয়েছেন।
সোমবার দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম পাঁচ মৃত্যুর কথা জানালেও বিস্তারিত আর কিছু জানায়নি।
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাখাইনে লাখ লাখ রোহিঙ্গার বাস। কিন্তু নির্যাতিত এই সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে নিজেদের নাগরিক বলে স্বীকৃতি দিতে মিয়ানমারের কোনো সরকারই রাজি হয়নি। গত কয়েক বছরে সামরিক বাহিনীর প্রাণঘাতী দমনপীড়নের মুখে মিয়ানমারের ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়ে আছে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক দপ্তর ওসিএইচএ জানিয়েছে, ঝড়ের আগে থেকেই রাখাইনের প্রায় ৬০ লাখ মানুষের মানবিক সহায়তা দরকার ছিল, এদের মধ্যে জাতিগত হানাহানিতে অভ্যন্তরীণভাবে উদ্বাস্তু হয়ে পড়া প্রায় ১২ লাখ মানুষও আছেন।
এর আগে ২০০৮ সালে মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় নার্গিসের তাণ্ডবে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল, তারপর থেকে মোখা দেশটিতে আঘাত হানা অন্যতম শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়।