স্টাফ রিপোর্টার:
সুনামগঞ্জে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আবারও ৬টি মামলায় আলোচিত রায় দিয়েছেন। এই আদালতে দায়ের করা পৃথক ছয়টি মামলায় একজনকে মৃত্যুদ-, একজনকে যাবজ্জীবন, অন্য আরও দুজনকে পাঁচ ও এক বছরের কারাদ- দিয়েছেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় দুইটি মামলার আসামীকে খালাস দেওয়া হয়েছে। বুধবার বিকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই রায় দেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার খিদিরপুর গ্রামের আব্দুল মালেক এর ছেলে শাহ্ আলম (৩৫) বিয়ের পর থেকেই স্ত্রী জাহানারা বেগমকে যৌতুকের দাবিতে মারপিট করতো। একপর্যায়ে স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় শাহ্ আলম। কিছুদিন পর বাবাকে সঙ্গে নিয়ে আর মারপিট করবে না অঙ্গীকার করে জাহানারাকে বাড়ি নিয়ে যায় সে। কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার নির্যাতন শুরু হয় জাহানারার উপর। ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ সকাল ৯টায় যৌতুক দাবি করে শাহ আলম স্ত্রী জাহানারাকে মারপিট শুরু করে। মারপিটের এক পর্যায়ে জাহানারা মারা যান। বিষয়টি বুঝতে বাড়ি সংলগ্ন খরচ গাছে নিয়ে জাহানারার মরদেহ ঝুলিয়ে রাখে শাহ্ আলম। আশপাশের লোকজন নির্মমতার বিষয়টি বুঝতে পেরে লাশ নামিয়ে শাহ্ আলমের বসত ঘরের দরজার সামনে নিয়ে রাখে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে আসামী মো. শাহ আলমের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করে পুলিশ। আদালত পরে সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনা করে আসামী শাহ আলমকে মৃত্যুদ- প্রদান করেন।
ছাতক থানার অপর আরেকটি ধর্ষণ মামলায় উপজেলার ছৈলা গ্রামের আশিক মিয়ার ছেলে ধর্ষক নেছার মিয়াকে (৩৩) যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- এবং অতিরিক্ত আরও এক লাখ টাকা জরিমানার রায় দেন আদালত। জরিমানার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাবেন নির্যাতিতা। মামলায় উল্লেখ করা হয় ২০১১ সালের আট অক্টোবর রাত ১১টায় ঘর থেকে ডেকে নিয়ে নির্যাতিতাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে নেছার মিয়া। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ মামলার তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করে। সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনা করে আদালত বুধবার আসামী নেছার মিয়াকে দ-াদেশ প্রদান করেন।
ধর্মপাশার নোয়াবন্দ গ্রামের আব্দুস সোবহানের ছেলে রহম আলী (৪৯) টিভি দেখানোর উসিলায় ঘরে ডেকে নিয়ে ছয় বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে। এই ঘটনায় মামলা দায়ের হলে পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট দাখিল। পরে আদালত স্বাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনা করে বুধবার রহম আলীকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদ-ের আদেশ প্রদান করেন।
ছাতকের রনসি গ্রামের সামছুল ইসলামের ছেলে সুলেমান মিয়া (৩০) তার স্ত্রীকে দেড়লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে মারপিট করেন। স্ত্রী এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করে। শেষে সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনা করে আদালত সুলেমান মিয়াকে এক বছরের সশ্রম কারাদ-ের আদেশ প্রদান করেন।
আরও দুটি নারী শিশু নির্যাতনের মামলা প্রমাণিত না হওয়ায় দিরাইয়ের ভাটি ধলের সায়েক মিয়া (২৬) ও একই উপজেলার সিকন্দরপুরের তালাল মাহমুদকে (৩১) বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দম ট্রাইব্যুনাল আদালতের পিপি অ্যাড. নান্টু রায়।