1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

সুনামগঞ্জ বৃক্ষমেলা: শোভাবর্ধনকারী বৃক্ষের আশানুরূপ বিক্রি, বৃক্ষ চিনলো শিশুরা

  • আপডেট টাইম :: সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০২৩, ৯.৫৬ এএম
  • ৯১ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি::
‘পাতাগুলো মাদারের ডুমুরের সোঁদা গন্ধ বাংলার শ্বাস/বুকে নিয়ে তাহাদের জানিবনা পরথুপী মধুকুপী ঘাস’ প্রকৃতিঘনিষ্ট নির্জন কবি জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলার এই পঙতিটা মনে পড়লো রোববার সুনামগঞ্জ বৃক্ষমেলায় ঢোকে। রৌদ্রজ্জ্বোল বিকেলের ডানায় চড়ে ভাসছিল মেঘঘন সন্ধ্যা। সন্ধ্যার আবির, সজ্জিত বৃক্ষমেলার ঢালপালায় লুটোপুটি খাচ্ছিল। নানা বয়সের বৃক্ষপ্রেমীরা ঘুরছিলেন এই স্টেল সেই স্টলে। শিশুরাও দোলছিল প্রজাপতি হয়ে, মেলা ক্যাম্পাসে। পূর্ণ সোঁদাগন্ধ না পাওয়া গেলেও নাগরিক পরিবেশে প্রাণ ও প্রকৃতির এমন আয়োজনে দেহমনচোখে আরাম খুঁজেছেন নানা বয়সের মানুষ।
২৫ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষমেলা শুরু হয়েছে। মেলায় ফলজ, বনজ, শোভা বর্ধনকারী, ওষদীসহ অন্তত সাড়ে তিনশ প্রজাতির পসড়া সাজানো ছিল ২৬টি স্টলে। নার্সারি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল বিক্রি বাট্টাও মন্দ ছিলনা।
সপ্তাহব্যাপী শুরু হওয়া বৃক্ষমেলা শেষ হচ্ছে আজ সোমবার। সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বনবিভাগের আয়োজনে ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বৃক্ষ মেলা শুরু হয়েছিল। অন্যান্য মেলার মতো তেমন লোকসমাগম ও বিক্রিবাট্টা না হলেও বৃক্ষপ্রেমি, প্রকৃতি ও প্রাণঘনিষ্ট মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। অনেকে শিশুদেরকে মেলায় নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ফলজ, বনজ, ওষুধীসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষের সঙ্গে। শিশুরাও মনের আনন্দে ঘুরে বেড়িয়েছে একখ- সবুজ বনায়নের ভেতর। আশার বাণী শুনিয়েছেন আয়োজক ও নার্সারি মালিকেরা। তারা জানিয়েছেন বনজ, ফলজ ও শোভা বর্ধনকারী বৃক্ষের বিক্রিবাট্টা হয়েছে ভালো। তবে অন্যান্য বৃক্ষও কমবেশি বিক্রি হয়েছে। গত ৫ দিনে প্রায় ১৬ লক্ষ টাকার বৃক্ষ বিক্রি হয়েছে মেলায়। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে শোভা বর্ধনকারী বৃক্ষ।
মেলার আয়োজক ও নার্সারি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে মেলায় ২৬টি স্টল অংশ নিয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে শোভা বর্ধনকারী বৃক্ষ। পরে বনজ ও ফলজ বৃক্ষ। এছাড়াও ওষধীসহ অন্যান্য বৃক্ষেরও কমবেশি বিক্রি হয়েছে। গত ২৫ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত শোভা বর্ধনকারী বৃক্ষ বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ২৫টি, ফলজ ৫ হাজার ২৬৫ টি এবং বনজ ৫ হাজার ২৪২টি। শহুরে নাগরিকরা স্থানের অভাবে শোভা বর্ধনকারী বৃক্ষ সংগ্রহতেই সুখ খুঁজেছেন। গ্রামের ছায়া সুনিবীর পরিবেশে বেড়ে ওঠা নাগরিকরা সেই স্মৃতি হাতড়েই শোভাবর্ধনকারী বৃক্ষ ক্রয় করেছেন কথা বলে জানা গেছে।
মেলায় শিশু পুত্রকে নিয়ে সন্ধ্যায় এসেছেন উন্নয়নকর্মী মশিউর রহমান ও তার স্কুল শিক্ষক স্ত্রী রানু বেগম। তারা শোভা বর্ধনকারী বৃক্ষসহ ফলজ বৃক্ষের দরদাম করছিলেন। ফলজ বৃক্ষ টব বা ড্রামে কিভাবে পরিচর্চা করতে হবে জানছিলেন। রানু বেগম বলেন, আমার ছেলেকে নিয়ে এসেছি বৃক্ষ দেখাতে। নাগরিক শিশুরা প্রকৃতিঘনিষ্ট হওয়ার সুযোগ পায়না। বৃক্ষের নামও জানেনা। এখানে এসে বাস্তবে অনেক ধরনের বৃক্ষকে দেখাতে পেরেছি। বৃক্ষের প্রতি তার আগ্রহ বেড়েছে। শিশুরা বৃক্ষপ্রেমি হলে প্রাণ ও প্রকৃতি, পরিবেশ-প্রতিবেশ সুরক্ষিত হবে।
ইবরাহিমপুরের এনাম উদ্দিন ঘুরছিলেন মেলায়। তিনি বলেন, কয়েকটি বনজ ও ফলজ বৃক্ষ কিনলাম। মেলায় পছন্দের বৃক্ষের সমাহার থেকে পছন্দ করে বৃক্ষ কেনার সুযোগ থাকে। তাই অনেকে ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও ঢু মেরেছেন। বৃক্ষ কিনেছেন।
শহরের স্টেডিয়ামের গ্যালারির নিচে আর এইচ এম নার্সারি দীর্ঘদিন ধরে বৃক্ষ বিক্রি পেশায় আছে। তাদের প্রতিষ্ঠান ১৯৯৮ সন থেকে এই পেশায় জড়িত। তাদের কাছে প্রায় সাড়ে তিনশ প্রজাতির দেশি, বিদেশি ফলজ, বনজ, শোভা বর্ধনকারী, ওষধীসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ রয়েছে। বৃক্ষমেলা উপলক্ষে সজ্জিত করা হয়েছে তাদের স্টল। স্টলের সামনে সারি সারি বৃক্ষের পসড়া।
পরিচালক মিঠু রায় জানান, মেলায় বিক্রির চেয়ে প্রদর্শনীটাই বড়ো। আমরা মানুষকে বৃক্ষের সঙ্গে পরিচয় করাই। নতুন প্রজন্ম চিনতে পারে বৃক্ষ। মানুষকে বৃক্ষপ্রেমে উদবুদ্ধ করতে এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ-প্রাণ প্রকৃতি বিষয়ে সচেতন করতে মেলা বড়ো ভূমিকা রাখে। তাছাড়া বিক্রিবাট্টাও কম বেশি। তিনি জানান, তার নার্সারি এবার মেলাতে সবেচেয়ে বেশি বিক্রি করেছে ফলগাছ ও আর শোভা বর্ধনকারী বৃক্ষ।
মোমেন নার্সারির মোমেন মিয়া কেবল বনজ আর ফলজ বৃক্ষ নিয়ে শাদামাঠা ভাবে স্টল সাজিয়েছেন। তিনি জানান, তার ফলজ ও বনজ বৃক্ষ ভালো বিক্রি হয়েছে। বারো মাসী কাঠাল, কুলবড়ই, আমগাছ বেশি বিক্রি হয়েছে। তিনি জানান, বৃক্ষহীন শহরের অনিকেত নাগরিকদের মধ্যে বৃক্ষপ্রেম লক্ষ্য করা গেছে। তারা ফলজ বৃক্ষকে টবে ও ড্রামে কিভাবে পরিচর্চা করা যায় সেটা জানার চেষ্টা করেছেন। আমরা সাধ্যমতো তাদের পরামর্শ দিয়েছি।
মেলা আয়োজক কমিটির কর্মকর্তা সুনামগঞ্জের রেঞ্জার সাদ উদ্দিন বলেন, মেলায় গত ৫ দিনে আশানুরূপ বিক্রি হয়েছে। ফলজ, বনজ ও শোভা বর্ধনকারী বৃক্ষই বেশি কিনতে দেখা গেছে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের। অনেকে শিশুসহ সপরিবারে ঘুরেও সবুজের আদর নিয়ে গেছেন। আগামীকাল সোমবার মেলা শেষ হবে বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!