1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

আমার দেখা বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম।। সুশান্ত দাস

  • আপডেট টাইম :: সোমবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৩, ৭.৪১ পিএম
  • ৭৬ বার পড়া হয়েছে

রেকর্ড বলছে ২০২৩সালের ১১আগস্ট দুপুর ২.৪১। মোবাইলে কথা বলে বাসার ঠিকানা জেনে নেই। দেখা হবে ভাবনায় অপেক্ষার পালা অস্থির। এর আগে কখনো দেখা হয়নি। তবে মোবাইলে অনেক দিন অনেক সময়, সময়-অসময়ে কথা বলেছি। অনুমতি নিয়ে মু্ক্তিযোদ্ধা গবেষকদের সাথে যোগসূত্র করিয়েছি। সেদিন তাঁর ঢাকার-বাসস্থান পাড়াতে,সিএনজি হতে নামা মাত্র দুপুরের আযান পড়লো,ইচ্ছে করে নামাজের সময়টুকুর একটু পরে কল দিতে না-দিতেই উনি কল বেক করে বললেন ‘কোথায় তুমি’? প্রতি উত্তরে বললাম আমি তো মনেহয় আপনার বিল্ডিং এর নীচে। ওকে উপড়ে উঠে আসো। লিফ্টে উপড়ে ওঠে নির্দিষ্ট দরজা লক্ষ্য করতেই তিনি বলে উঠলেন তুমি সুশান্ত ? আমাদের কমরেড দাদার পুত্র? হ্যা বলে কদমবুচি করলাম। গায়ে জড়িয়ে ধরে বুকে বুক মিলিয়ে কোলাকুলি করলেন। তিনি আর কেউ নন গতকাল ২৯ অক্টোবর প্রয়াত আমাদের ভাটির হাওরের গৌরব প্রফেসর নজরুল ইসলাম। আমাদের নজরুল চাচা। মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় সৈনিক। ছিলেন শাল্লা সংগ্রাম কমিটির অন্যতম সদস্য। ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চের জনসভায় যার উপস্থিতি ছিল। বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে তিনি নিজ এলাকা শাল্লায় যান। এলাকায় মানুষকে সংঘটিত করেন। জন্ম ১৯৪৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার আটগাঁও গ্রামে। তিনি ছাত্র জীবনে ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনাকালে, তখন তিনি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের টিয়ার সেলে আঘাতপ্রাপ্ত হন।

এই অকুতোভয় সৈনিক সম্পর্কে সালেহ চৌধুরী তাঁর ‘ভাটি এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ, আমার অহংকার’(পৃ/২৫৩)বইয়ে লেখেন- “সহযোদ্ধা হিসেবে আটগাঁওয়ের নজরুল ইসলামকে কাছে পাওয়া আমার জন্য ছিল ভাগ্যের ব্যাপার। নজরুল ছিল ছাত্রলীগের কর্মী। আমার পরিচয় এক কালে ছাত্র ইউনিয়ন করে তখন কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থক। নজরুলের আমার সঙ্গে অতটা ঘনিষ্ঠ হওয়ার কথা ছিল না। সে কিন্তু এই এলাকার (দিরাই- শাল্লা) যুদ্ধে আমাকে অপরিহার্য মনে করে আমাকে সাহায্যের দায়িত্ব নিজেই কাঁধে তুলে নেয়। আমি বিশ্বাস করি, সে আমার সঙ্গে যুক্ত না থেকে স্বাধীনভাবে যুদ্ধ করলে অনেক বেশি খ্যাতি ও গৌরব অর্জন করতে পারত”।

প্রফেসর নজরুল ইসলামকে কিভাবে খোঁজে পাই তা এখনো সঠিক ভাবে মনেকরতে পারছি না। তবে বাংলার মাটি ঢাকায় যখন গণজাগরণ উত্থাল এর আংশিক ঢেউ দ্বিতীয় বাংলা বলে খ্যাত বিলেতের লন্ডনেও এসে লেগেছিল। অপরদিকে ৭১-এর ভাটি বাংলা ও মুক্তিযোদ্ধা কমরেড শ্রীকান্ত দাশকে খোঁজতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক-গবেষকদের তাড়নায়
তাঁর খোঁজ নিতে হয়েছিল। কমরেড শ্রীকান্ত দাশ সম্পর্কে জানতে গিয়ে প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেছিলেন “মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন স্থানে অপারেশন করার জন্য প্রয়োজন হতো নানা তথ্য-উপাত্ত। আর সেগুলো দেশের ভেতরে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করার জন্য কোমর বেঁধে মাঠে নামতেন শ্রীকান্ত দাশ। সেগুলোর ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হতো অপারেশন পরিকল্পনা। আর নির্দিষ্ট সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের গাইড করে নিয়ে যেতেন অকুতস্থলে। যুদ্ধও করতেন। ১৯৭১ সালে আনন্দপুরে আমাদের একটি ক্যাম্প ছিল। শ্রীকান্ত দাশকে সেখানে দেখেছি কিছুদিন”(মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী সংগ্রামী কমরেড শ্রীকান্ত দাশ,পৃঃ৮৭/৮৮)।
শুধু তাই নয় লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধের ভাটির হাওরের অনন্য দলিল “ ১৯৭১ চোরের গাঁওয়ের অশ্রুত আখ্যান “ এর ‘ভালবাসা ও আশীর্বাদ’ নামে মুখবন্ধ। তিনি লেখককে সাধুবাদ জানিয়েছেন অন্ত্যজ শ্রেণির অবদানকে লোকচক্ষুর আলোয় নিয়ে আসার জন্য।

লেখক, সাংবাদিক সালেহ চৌধুরীর মতে ১৯৭১ সালে আমাদের পোষাক বলতে ছিল একটা হাফপ্যান্ট আর তার ওপরে সেলাই ছাড়া লুঙ্গি এবং গেঞ্জি বা শার্ট। নজরুলের পরনে থাকতো পুলিশ ইন্সপেক্টরের বাসায় পাওয়া বুশশার্ট। এতে ছিল বড় বড় অনেকগুলো পকেট। তবে ৭১নয়, সেদিন ১১ আগস্ট শুক্রবারে দুপুরের প্রার্থনা শেষ করে আমাদের রিসিভ করতে পড়নে দেখতে মিলে বড় বড় কোটার চেগ লুঙ্গি ও সাদা টিশার্ট সহ মাথায় রিলিজিয়াস টুপি। খুব কোমল সুরে কথা বললেন। কেমন আছেন জানতে চাইলে বললেন ভাল না, শরীরটা ভাল না। ভাটি এলাকা,হাওর-বাওর,মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনেক আলোচনা শোনতে না শোনতে বলে ফেললাম আমি আসচ্ছি একটু কৃতজ্ঞতার বোঝা কমাতে! মুশকি হেসে বললেন কী? বলতো কী? আমি বললাম আপনার দেওয়া সাক্ষাৎকার লিপিবদ্ধ হওয়ায় তার সৌজন্য কপি আপনার হাতে পৌঁছে দিতে। বললেন বাহ! ডাকলেন উনার স্বপত্নী চাচী আম্মাকে। ডাকলেন বড় ছেলেকে। আমারও সংগে ছিল বানিয়াচুং এর আরেক মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান শিক্ষক পার্থবাবু। দুপুরের দীর্ঘক্ষন আড্ডায় চাচীম্মার খুব চাপাচাপিতে ভাত না খেয়ে বাঁচলেও হরেক রকমের খাবারে একটু একটু মুখ দিতেই হলো। যদিও বাহিরে অত্যধিক দাবদাহ তাপমাত্রায় দেহ-শরীরের মানান এর বিরুদ্ধেই করতে হইছিল।

মধ্যদুপুরের আড্ডার একপ্রান্তে অনেক কিছুর মাঝে প্রশ্ন ছুঁড়লে ‘ দেখুন আপনারা দেশের জন্য অস্ত্র ধরেছেন, যুদ্ধ করেছেন,দেশ স্বাধীন করেছেন নিজ হাতে। আর তখন যারা পাকিদের মদদপুষ্ট হয়ে লুটেপুটে খেয়ে, আপনি/আপনাদের মতো হাওরে শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো দাতব্য সেজে মিশে যেতে চায় সেখানে কষ্ট হয়না? উত্তরে বললেন অবশ্যই কষ্ট হয়! খারাপ লাগে ! কয়েক সেকেন্ড একটু নিশ্চুপ এর মাঝে মুশকি হেঁসে দিলেন। বললেন দেখো আমরা যে যা যতোটুকুই বলি বা না-বলি না কেন মনে রেখো কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে পবিত্র। এই কলমের কালি দিয়েই ইতিহাস কথা বলে। লেখকরা কখনো এই কলমের কালিকে অপিত্র করেন না।

শেষ বিধায় বেলা নজরুল চাচা,চাচীম্মা উনার বড় ছেলে সকলেই লিফট পর্যন্ত এগিয়ে দিলে চাচা বলছিলেন এবার কিন্তু খেয়ে গেলা না,পরের বার এসে বলতেই সাথে সাথে বলে ফেললাম কোন সমস্যা নেই চাচা,পরের বার আসলে নিশ্চই হবে। আজ চাচা নেই পরের বার পরেই থেকে গেল।

আমাদের বীরপুত্র নজরুল চাচা আত্মত্যাগ,বীরত্ব আর অর্জনের ইতিহাসে স্বর্নাক্ষরে থাকবেন তাই জাফর ইকবাল স্যারের ভাষায় লেখাটি ইতি টানলাম।
“মানুষের যতোগুলো অনুভূতি আছে তারমাঝে সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি হচ্ছে মানুষের ভালবাসা। আর এই পৃথিবীতে যা কিছু ভালবাসা সম্ভব তার মাঝে সবচেয়ে তীব্র ভালবাসাটুকু হতে পারে শুধু মাত্র মাতৃভূমির জন্যে। যারা কখনো নিজের মীতৃভূমির ভালবাসাটুকু অনুভব করেনি তাদের মতো দুর্ভাগা আর কেউ নেই। আমাদের খুব সৌভাগ্য আমাদের মাতৃভূমির যে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল তার ইতিহাস হচ্ছে গভীর আত্মত্যাগের ইতিহাস, অবিশ্বাস্য সাহস ও বীরত্বের ইতিহাস এবং বিশাল এক অর্জনের ইতিহাস। যখন কেউ এই আত্মত্যাগ,বীরত্ব আর অর্জনের ইতিহাস জানবে, তখন সে যে শুধু দেশের জন্য একটি গভীর ভালবাসা আর মমতা অনুভব করবে তা নয়, এই দেশ,এই মানুষের কথা ভেবে গর্বে তার বুক ফুলে উঠবে”।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!