বিশেষ প্রতিনিধি::
বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের মধ্যেই সুনামগঞ্জের সব উপজেলায় নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠ গরম রেখে এখন সর্বশেষ মনোনয়ন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। অনেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহও করেছেন। নির্বাচন প্রশ্নে হঠাৎ বিএনপি নীরব থাকলেও তলে তলে তারাও প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সচেতন মহলের ধারণা। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই মূল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে বলে মনে করছেন তারা।
জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার মোট ভোটার ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৫৬৯। এর মধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৯ জন। নারী ভোটার ৯ লাখ ৫২ হাজার ৭৭৭ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ৭০১টি। নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছে।
সরেজমিন হাওরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনের আমেজ বিরাজ করছে। শ্রমিক, কৃষক, দিনমজুর, শিক্ষক, ছাত্র, সরকারি চাকুরিজীবিসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষেরা সময় পেলেই নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করছেন। নানা কৌশলে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন এলাকায় ব্যানার ফেস্টুন সাটালেও আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যানার ও ফেস্টুনে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন ভোটারদের। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠঘাট চষে বেড়িয়ে, শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের নামে গণসংযোগ করে এখন মনোনয়ন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। গতকাল আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রির পর অনেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তাদের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণাও চালাচ্ছেন নেতাকর্মীরা।
এদিকে দলনিরপেক্ষ সাধারণ মানুষ ভোট বর্জন নয়, তারা চান ভোট হোক। ভোটে সব দল অংশগ্রহণ করুক। তাদের প্রত্যাশা নির্বাচন কমিশন নিরেপক্ষতার সাথে নির্বাচন সম্পন্ন করুক। এই প্রত্যাশা রেখেই হাওরবাসী ভোটের জন্য প্রস্তুত। সচেতন ভোটাররা ভোটযুদ্ধে উন্নয়নকেই এগিয়ে রাখছেন। তারা বলছেন গত ১৪ বছরে জেলায় স্বাধীতার পরে সবচেয়ে দৃশ্যমান ও একাধিক মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। গৃহহীন ও ভূমিহীন কয়েক হাজার মানুষ স্থায় ঠিকানা পেয়েছে। তাছাড়া যোগাযোগ, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কারিগরিসহ নানা ক্ষেত্রে মাইল ফলক উন্নয়ন হয়েছে জেলায়। দল-নিরপেক্ষ মানুষ ভোটে উন্নয়কে মূল্যায়ণ করবে। তবে বিএনপি নেতাকর্মীরা উন্নয়নকে কিছুটা স্বীকার করে নিলেও তারা উন্নয়নের পাশাপাশি দুর্নীতি হয়েছে বলে মনে করেন। তাছাড়া দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটটে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা সরকারের ব্যর্থতা বলে মনে করেন তারা।
দিরাই উপজেলার চানপুর গ্রামের ভোটার তপু দাস বলেন, সরকার হাওরে কাঙ্খিত উন্নয়ন করেছে। সাধারণ মানুষ উন্নয়ন পেয়ে খুশি। কিন্তু এই উন্নয়নের ভাগও ক্ষমতাসীন দলের সুবিধাভোগী নেতাদের পকেটে চলে যায়। বিশেষ করে হাওরের ফসলরক্ষা বাধের বরাদ্দ আওয়ামী লীগ বিএনপি মিলেমিশে খায়। কৃষকদের স্বার্থ বিনষ্ট করে।
বিশম্ভরপুর উপজেলার মুুক্তিখলা গ্রামের ভোটার আয়শা বিবি বলেন, আমাদের এলাকায় রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নানা উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়ন পেয়ে আমরা খুশি। এখন আমরা ভয় নিয়ে ভোট কেন্দ্রে যেতে চাইনা। আমরা শান্তিতে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই। আমরা চাইনা আমাদের ভোটে কেউ বাধা দিক।
জেলা বিএনপির সহসভাপতি নাদির আহমদ বলেন, সুনামগঞ্জ-৪সহ জেলায় মূল উন্নয়ন হয়েছে বিএনপির সময়ে। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের সঙ্গে চরম লুটপাটও হয়েছে। তাছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষরা সরকারের প্রতি নাখোশ। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এই মানুষজন সরকারকে আস্তাখুড়ে নিক্ষেপ করে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাবে।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন বলেন, হাওরের সাধারণ মানুষ শেখ হাসিনা সরকারের কাছ থেকে বিপুল উন্নয়ন পেয়ে খুশি। তারা এই উন্নয়নের কারণে আবারও শেখ হাসিনাকে চায়। আগামীতে শেখ হাসিনার মাধ্যমেই হাওরের অসমাপ্ত উন্নয়ন হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, শেখ হাসিনা হাওরবাসীকে উন্নয়নে ভরে দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, টেক্সটাইল, বিটাক, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, উড়াল সড়ক, দিরাইশাল্লা আজমিরি ও রানীগঞ্জ জগন্নাথপুর আঞ্চলিক মহাসড়কসহ অনেকগুলো মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে হাওর বদলে গেছে। ভোটাররা এসব মাথায় নিয়েই আবারও শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিবেন।