জীবন সায়াহ্নে এসে এ জীবন আপনাদের সেবায় উৎসর্গ করতে চাই: মোহাম্মদ সাদিক
বিশেষ প্রতিনিধি::
শেষ নির্বাচনী জনসভায় জন্মভূমির মাটিতে আবেগঘন বক্তব্য দিয়েছেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কবি ড. মোহাম্মদ সাদিক। নির্বাচন করতে এসে সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা ঘুরে বঞ্চনা ও অবহেলার চিত্র দেখে নতুন করে জন্ম নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন। সভায় সুনামগঞ্জ বালুর মাঠি কানায় কানায় ভরে গিয়েছিল। দীর্ঘদিন পর এই মাঠে বিশাল জমায়েত দেখেছে জেলা শহরবাসী। বক্তব্যে ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, আমার জীবন সায়াহ্নে এসে আপনাদের জন্য এই জীবন উৎসর্গ করতে চাই। বৃহষ্পতিবার বিকেলে সুনামগঞ্জ ঐতিহ্যবাহী সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে স্মরণকালের বৃহত্তম নির্বাচনী জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মোহাম্মদ সাদিক তার বক্তব্যে বলেন, আমি এবার আশাউড়া থেকে মিয়ারচর, রঙ্গারচর থেকে গৌরারংসহ সুনামগঞ্জের উত্তর, পশ্চিমে ছুটে গেছি। কোন কোন জায়গায় গিয়ে আমি আপনাদের বঞ্চনা ও অবহেলার ইতিহাস দেখে আদ্র হয়েছি। আমি কবিতার মানুষ, সামান্য চাকুরি বাকুরি করেছি। আপনাদের দুঃখ দেখে মনে হলো আমি জীবনে কোন কাজই করিনি। যেখানে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের মানুষ একটি রাস্তা, সেতুর জন্য বছরের পর বছর শাস্তিভোগ করেন। বছরের পর বছর অন্ধকারে থাকেন। এসব দেখে আমার কষ্ট লাগে এখনো আমরা ৫০ বছর পিছিয়ে আছি। তিনি বলেন, সুরমা নদীতে ধারাগাও সেতু নির্মাণের জন্য আমিই প্রথম ডিও লেটার দিয়েছিলাম। তারও আগে কেউ না কেউ সংসদে কথা বলেছেন। আমার যতদূর মনে পরে আমাদের একজন সাবেক নারী সংসদ সদস্যও কথা বলেছিলেন সংসদে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের হটকারিতার কারণে ধারারগাওয়ে সেতু হয় নাই। আমি নির্বাচিত হলে প্রথম কাজ হবে ধারারগাওয়ে সেতু করা। পরে পৈন্দা নদীতে সেতু, সাতগাওয়ের রাস্তা, মিয়ারচরের বাধ, সুনামগঞ্জ শহররক্ষা বাধ, সুনামগঞ্জ শহরকে সম্প্রসারণ করে ডলুড়া পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কাজ হবে আমার লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক শত সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের স্মৃতি স্মরণ করে তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা একদিনে একশ সেতু উদ্বোধন করেছিলেন। আমি টিভিতে সেই খবর দেখে অশ্রুসিক্ত হই। আমার এলাকার ধারারগাও সেতু হয়না, পৈন্দা নদীতে, ফতেপুরে, বিশ্বম্ভরপুরে সেতু হয়না। সেতুর অভাবে এই এলাকার মানুষ ছিটমহলের মতো বসবাস করছে। এসব এলাকায় রাস্তা নেই, স্কুলে ভালো বিল্ডিং নেই। চেকপোস্ট নেই।
সুনামগঞ্জ শহর সুরমা নদী গিলে খাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ শহরের পাঁজর ভেঙ্গে যাচ্ছে। নদী শাসন না করলে শহরের অস্তিত্বস্ত¡ বিলীন হয়ে যাবে। কিন্তু কেউ সেদিকে থাকাচ্ছে না। সংসদে গিয়ে নিজেরা ভোগ করেছেন, আতœতৃপ্তিতে ছিলেন। তাদের কাছে আপনারা কৈফিয়ত চাইতেই পারেন। সদর-বিশ্বম্ভরপুরবাসীর দিকে তাদের থাকানোর সময় ছিলনা। তিনি বলেন, শহর রক্ষায় প্রকল্প নেওয়া না হলে জুবিলী স্কুল, লঞ্চঘাট, ডিসির বাংলো, জজের বাংলো হুমকিতে পড়বে। এমনটি হলে সুনামগঞ্জের অস্তিত্ব থাকবেনা।
ড. মোহাম্মদ সাদিক নৌকা প্রতীকে সুনামগঞ্জ-৪ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রসঙ্গে বলেন, ৯ মাস আগে এখানে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিল। নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ দাবি তুলেছিলেন এই আসনে নৌকার প্রার্থী দেওয়ার জন্য। নেত্রী সুনামগঞ্জের নেতাদের কথা রেখেছেন। নেত্রীর কাছ থেকে প্রতীক এনে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ হলো কথা রাখার, জনগণকে অঙ্গিকার করে অঙ্গিকার রাখার ইতিহাসের নাম। তাই আগামী ৭ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের উন্নয়নবঞ্চিত মানুষের উন্নয়নের জন্য নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে হবে। আমাকে পরীক্ষায় পাশ করাতে হবে। নির্বাচিত হলে অবহেলিত সুনামগঞ্জকে উন্নয়ন অভিযাত্রার ট্রেনের সঙ্গে সুনামগঞ্জের ট্রেনকে লাগিয়ে দেওয়ার অঙ্গিকার করে তিনি বলেন, ডাক্তারের জন্য রোগি মরে, প্রকৌশলী ভুল করলে দালান ভেঙ্গে পরে, ড্রাইভার ভুল করলে গাড়ি এক্সিডেন্ট করে। কিন্তু একজন জননেতা ভুল করলে জনগোষ্ঠীকে প্রায়শ্চিত্ব করতে হয়। সেই প্রায়শ্চিত্ব করছেন বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ সদরের ৩ লাখ ৪২ হাজার ভোটার। সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুরকে বঞ্চিত করে, জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে যারা ব্যক্তিগত অভিলাষে মেতেছিলেন তাদেরকে বর্জন করে আগামী ৭ জানুয়ারি উন্নয়নের প্রতীক নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, সারা পৃথিবী থাকিয়ে আছে আমাদের ম্যাজিক লীডার শেখ হাসিনার দিকে। তারা দেখতে চায় আগামী ৭ জানুয়ারি কিভাবে বাংলার মানুষ শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেয়। তিনি বলেন, সুনামগঞ্জের নেতারা গর্ব করে নৌকা নিয়ে এসেছেন। যদি ৭ জানুয়ারি নৌকার সম্মান না রাখেন তাহলে তারা লজ্জা পাবেন। তিনি বলেন, আমি লীডার হতে আসিনাই। এই মঞ্চে যারা আছেন তারা লীডার। আমি আপনাদের ওয়ার্কার হয়ে এসেছি। নেত্রী আমাকে ওয়ার্কারের স্বীকৃতি দিয়েছেন। এখন আপনারা আমাকে ৫ বছরের জন্য ওয়ার্কার করলে আমি কথা দিচ্ছি আপনাদের সুখে দুখে আনন্দ বেদনায়, দুঃখের ইতিহাস পিছনে ফেলে উন্নয়ন অভিযাত্রার বাংলাদেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জ-৪ আসনকে যুক্ত করব।
সুনামগঞ্জের প্রতি শেখ হাসিনা দরদী উল্লেখ করে তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা মায়ের মমতায় বাংলাদেশকে ভালোবাসেন। তিনি বলেছিলেন, গোপালগঞ্জের উন্নতি হলে সুনামগঞ্জের উন্নতি হবে। কিন্তু সুনামগঞ্জের দুঃখ বেদনার কথা, দুঃসহ যন্ত্রণার কথা শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরতে পারিনি আমরা। তিনি এসব দেখলে অবশ্যই আমাদের দুঃখ ভুলিয়ে দিতেন।
তিনি মাঠে উপস্থিত হাজার হাজার জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যাতে নৌকা প্রতীক না রাখতে পারেন গত মাসে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল নৌকা থাকবেনা। শত গুজবের মধ্যেও শেখ হাসিনা তার সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছেন আপনাদের জন্য। আপনারা আগামী ৭ জানুয়ারি তার এই সিদ্ধান্ত বহালের সিদ্ধান্ত দিবেন আজ। তিনি বলেন, আগামী সাত জানুয়ারি যদি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই আমার ঘরের দরোজা আপনাদের জন্য যেভাবে খোলা থাকবে আপনাদের ঘরের দরোজাও খুলো থাকবে। মনের দরোজাও খোলা থাকবে। আমি বারবার আপনাদের কাছে যাবো। আমার জন্য দরোজা খোলা রাখবেন। আমাকে আপনাদের সুখে দুখে পাবেন। আপনাদের বারান্দা, উঠোনে সুখে সুখে আনন্দ বেদনায় আমাকে পাবেন।