স্টাফ রিপোর্টার::
একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেন (৭৫) আর নেই। ২৮ মার্চ ভোররাতে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে মারা যান। তার মৃত্যুতে বিভিন্ন মহল শোক জানিয়েছে। বৃহষ্পতিবার বিকেলে সুনামগঞ্জ পুরাতন বাসস্টেশনে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান শেষ বিদায় জানায় প্রশাসন। এখানে তার প্রথম নামাজে যানাজা সম্পন্ন হয়। বিকেল ৫টায় নজির হোসেনের জন্মভিটা বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শাহপুর গ্রামে দ্বিতীয় জানাযা শেষে মা বাবার কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। তার জানাযায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পুরাতন বাসস্টেশনে অনুষ্ঠিত জানাযায় উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হোসেন জীবন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র নাদের বখত, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এডভোকেট মতিউর রহমান পীর, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন মিলন, সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নূরুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজি নূরুল মোমেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ, বিএনপি নেতা নাদির আহমদ, আবুল মনসুর শওকত, ফারুক আহমদ, শেরেনুর আলী, আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুর রহমান সিরাজ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান সেন্টু, জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি সেলিম আহমদ, ফজলে রাব্বী স্মরণ, এডভোকেট বুরহান উদ্দিন দোলন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি শামছুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক মোনাজ্জির হোসেন সুজন, জেলা যুবদল সভাপতি এডভোকেট মামুনুর রশিদ কয়েছ, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান রাজু, সৈনিক লীগ সভাপতি মেহেদি হাসান চৌধুরী রাসেল, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
নজির হোসেন ১৯৪৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন দিয়ে রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি সিলেট জেলা ছাত্র ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ সনে গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৬৯ সনের গণঅভ্যুত্থানে তিনি রাজপথের ছিলেন সক্রিয় এক ছাত্রনেতা। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধসহ গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। টেকেরঘাট সাবসেক্টরে গেরিলাদেরকে তিনি গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে অভিযান পরিচালনায় সহযোগিতা করতেন। গেরিলাদের সঙ্গে কয়েকটি বিশেষ অপারেশনেও তিনি যুক্ত ছিলেন।
টেকেরঘাট সাবসেক্টরের প্রতিষ্ঠাতা অধিনায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহকারি হিসেবে তিনি এই সাবসেক্টরে কাজ করেন। ট্যাকেরঘাট সাবসেক্টরের গেরিলা জোন গড়ে তোলার পিছনে তার অসামান্য অবদান রয়েছে বলে স্বীকার করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তবে যুদ্ধ শেষে তিনি সার্টিফিকেট গ্রহণ করেননি। কয়েক বছর আগে সহযোদ্ধাদের আহ্বানে তিনি স্বীকৃতির আবেদন করেছিলেন।
প্রথম জীবনে নজির হোসেন একজন প্রগতিশীল ধারার মেধাবী একজন প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। কমরেড হিসেবে দেশবাসী তাকে চিনতো। কমরেড পরিচয়েই ১৯৯১ সনে ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-১ আসনে সিপিবি থেকে আট দলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। তারপরই তিনি রাজনীতিতে ডানপন্থী দল হিসেবে পরিচিত জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিতে যোগ দেন। বিএনপির একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতায় পরিণত হন। ১৯৯৬ সনের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ও ২০০১ সনের জাতীয় নির্বাচনে তিনি বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি ওই সময় প্রবাসী ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালে তিনি সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।