বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ে লোকবল নিয়োগে চরম দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বঞ্চিত অর্ধ শতাধিক প্রার্থী লিখিত অভিযোগ করে ফলাফল পুনর্বিবেচনা করার আবেদন জানিয়েছেন। লিখিত পরীক্ষার সংশোধনী ফলাফল দুইবার ঘোষণা করায় স্বজনরা দুর্নীতির সন্তেহ করেছেন। এ ঘটনায় অনেক অভিভাবক মামলার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। এই অনিয়মে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দুর্নীতিবাজ একটি চক্র জড়িত বলে অভিযোগ স্বজনদের। তবে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে নিয়োগের ৭০ ভাগই কোটায় গেছে। বাকি ৩০ ভাগ সাধারণ কোটায় চাকুরি পেয়েছেন। তবে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর কোটা পূরণ হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১১ ডিসেম্বর ও ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট দুটি আলাদা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ২৩৬ জন কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগের আহ্বান জানানো হলে ৩৮ হাজার ৩১৪ জন পরীক্ষার্থী আবেদন করেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ১ হাজার ৫২ জন। এর আগে ২৬ ও ২৯ এপ্রিল সংশোধনীর কথা বলে ২বার লিখিত পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ গত ৭ মে ১৯৩ জনের নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে স্বাস্থ্যসহকারী, সাট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী, পরিসংখ্যানবিদ, টেকনিশিয়ান, স্টোরকিপার ও গাড়ি চালক রয়েছেন। ওয়ার্ড ভিত্তিক এই নিয়োগে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছাড়া অন্যদের নিয়োগ পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। কিন্তু চূড়ান্ত নিয়োগে এরকম একাধিক ব্যত্যয়ের ঘটনা ঘটেছে।
চূড়ান্ত নিয়োগে ফলাফলে অনিয়মের অভিযোগ এনে নিয়োগের পরদিন থেকেই বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত অন্তত অর্ধ শতাধিক চাকুরি প্রার্থী ও তাদের স্বজনরাা লিখিত অভিযোগ করেছেন। জানা গেছে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রথমে ২৫ এপ্রিল প্রকাশ করা হয়। পরে ২৬ এপ্রিল ও ২৯ এপ্রিল আবারও সংশোধনী ফলাফল ঘোষনা করা হয়। এভাবে দুইবার লিখিত পরীক্ষার সংশোধনী ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এ কারণেও অনেকে দুর্নীতি ও অনিয়মের সন্দেহ করছেন।
একাধিক লিখিত আবেদন থেকে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বাসিন্দা না হয়েও অনেকের চাকুরি হয়েছে। যা বিধি সম্মত নয়। তাই তারা এই বিষয়টি খতিয়ে দেখে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে যারা চাকুরি পেয়েছে তাদেরকে বাতিল করে সেখানে তাদেরকে নিয়োগের আকুতি জানিয়েছেন। আবেদনকারীদের অনেকেই জানিয়েছেন এটাই তাদের শেষ পরীক্ষা। চাকুরির বয়স শেষ হয়ে যাওয়ায় আর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই।
উলাফল পুননিরীক্ষার জন্য আবেদনকারী সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ঝরঝরিয়া গ্রামের খাদিজা আক্তার বলেন, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দাকে ২ নং ওয়ার্ডে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের প্রত্যয়ন জালিয়াতি করে এ ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে আমি ফলাফল পুনবিবেচনা করার লিখিত আবেদন করেছি।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামের সোয়েল দাস বলেন, আমার ওয়ার্ডে যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মনোজিত দাস নামের ওই প্রার্থী অন্য ওয়ার্ডের বাসিন্দা। জালিয়াতি করে আমাদের ওয়ার্ডের প্রার্থীদের বঞ্চিত করেছে। আমি ফলাফল পুনর্বিবেচনার জন্য লিখিত আবেদন করেছি।
তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কড়ইগড়া গ্রামের প্রার্থী তিলোত্তমা দিব্রা বলেন, আমার ওয়ার্ডে ২জন আদিবাসী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। সবচেয়ে ভালো লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়েছে আমার। কিন্তু আমাদের কারো চাকুরি হয়নি। এতে মনে হয়েছে আদিবাদী কোটা পূরণ করা হয়নি।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. আহমদ হোসেন বলেন, এর আগে যেহেতু নিয়োগ পরীক্ষায় ঝামেলা হয়েছিল তাই অনেক বছর পরে নিয়োগ পরীক্ষা অত্যন্ত সততা ও নিষ্টার সাথে নেওয়া হয়েছে। কোন অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়নি। তবে ওয়ার্ড ভিত্তিক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রার্থীরা কোন জালিয়াতি করলে তদন্ত করে তাদের চাকুরি বাতিল করা হবে। এবারের নিয়োগে ৭০ ভাগ কোটা ও সাধারণ ৩০ ভাগ কোটায় চাকুরি হয়েছে। এ কারণে অনেকে মনে করছেন সবচেয়ে ভালো পরীক্ষা দিয়েও চাকুরি না হওয়ায় অনিয়ম হয়েছে। এমন ঘটনাও ঘটেছে লিখিত পরীক্ষায় সবচেয়ে কম মার্ক পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়া প্রার্থীর চাকুরি হয়েছে।