হাসান মুরশেদঃ
উত্তরে মেঘালয়ের নীচে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর থেকে শুরু করে জামালগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা হয়ে নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জের বিশাল ভাটি এলাকার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রাণপুরুষ সালেহ চৌধুরী মারা গেছেন আজ সন্ধ্যায়।
পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, দৈনিক পাকিস্তানের সাব এডিটর কলম ছেড়ে অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন। টেকেরঘাট সাব সেক্টরে সম্পৃক্ত ছিলেন এরিয়া কমান্ডার পদমর্যাদায়। ভাটির মানুষ চিনতো তাকে ‘মেজর সাব’ নামে। তার সমন্বয়কেন্দ্র থেকেই নানা অপারেশনে যেতেন জগতজ্যোতি দাস তার দাসপার্টি নিয়ে।
আমার ক্ষুদ্র জীবনের সৌভাগ্য ‘দাস পার্টির খোঁজে’ লিখতে গিয়ে তাঁর সান্নিধ্যে আসা। বারবার ছুটে গিয়েছি, হাসিমুখে সময় দিয়েছেন। বারবার অনুরোধ করেছি- আপনার অভিজ্ঞতা লিখুন। বই লিখে গেছেন শেষ পর্যন্ত, সেখানে সস্নেহে এই আমার নাম ও উল্লেখ করেছেন।
আমার দুর্ভাগ্য 1971Archive এর জন্য তার ভিডিও ইন্টারভিউ নিতে পারিনি। মাস তিনেক আগে আমেরিকা যাবার আগে বলেছেন- ফিরে আসি তারপর। আমেরিকা থেকে ও ফোন করেছেন। সেখানেই ক্যান্সার ধরা পড়েছে। ক্যান্সার নিয়েই দেশে ফিরে এসেছেন।।দুর্বল হয়ে পড়েছেন দ্রুত। তবু আমাকে সময় দিয়েছিলেন এই ১৯ তারিখ। হায়! ঢাকায় গিয়ে ও আর পাইনি। এপোলো হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি তখন।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। কাঁধে স্টেনগান ঝুলিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে পায়ে হেঁটে ফিরছিলেন দিরাই। বিকেল বেলা রেডিওতে আত্মসমর্পনের সংবাদ শুনে কেটে নেয়া ধানের ক্ষেতে গড়িয়ে পড়ে কেঁদেছিলেন আপনি। আজ আপনার জন্য কাঁদবে আপনার বেঁচে থাকা সহযোদ্ধারা- সুনামগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা, আজমিরীগঞ্জে।
শুভ বিদায় কমান্ডার।
এমন মানুষ আর হবেনা!