হাওর ডেস্ক::
ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজার মধ্যাঞ্চলীয় আল-নুসেইরাত শরণার্থী শিবির ও সংলগ্ন এলাকা থেকে চার জিম্মিকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে ইসরায়েলি বাহিনী, এই অভিযানের জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে তারা।
ইসরায়েলিদের জন্য এই অভিযান স্বস্তি ও আনন্দ নিয়ে এসেছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের জন্য আরও দুর্ভোগ বয়ে এনেছে। গাজার মধ্যাঞ্চলের হাসপাতালগুলো জানিয়েছে, ঘন বসতিপূর্ণ নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে চালানো এই অভিযানে নারী ও শিশুসহ বহু মানুষ নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এই অভিযানের নাম দিয়েছিল ‘গ্রীষ্মের বীজ’। অভিযানটা অস্বাভাবিকভাবে দিনের বেলায় চালানো হয়। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছে, বিস্ময় তৈরির জন্যই তাদের স্পেশাল ফোর্সেস দিনের বেলায় অভিযানটি পরিচালনা করেছে।
বিবিসি বলছে, অভিযানটির জন্য মধ্য সকাল বেছে নেওয়ার অর্থ তখন নিকটবর্তী বাজারে লোকজন কেনাকাটা করতে থাকায় রাস্তাগুলোতে প্রচুর মানুষ ছিল। এটি ইসরায়েলি স্পেশাল ফোর্সেসের জন্যও বিরাট ঝুঁকির বিষয় ছিল, শুধু সেখানে প্রবেশ করার সময় না, বিশেষ করে বের হয়ে আসার বেলায়।
অভিযানে ইসরায়েলের স্পেশাল ফোর্সেসের এক কমান্ডার গুরুতর আহত হওয়ার পর হাসপাতালে মারা গেছেন বলে ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে।
“এটি এন্টেবের মতো একটি অভিযান ছিল,” ১৯৭৬ সালে উগান্ডায় অভিযান চালিয়ে ১০০ ইসরায়েলি জিম্মিকে উদ্ধার করার কথা উল্লেখ করে মন্তব্যটি করেন আইডিএফের শীর্ষ মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি।
গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ইসরায়েলি স্পেশাল ফোর্সেসের বিশেষজ্ঞ কমান্ডোরা ইসরায়েল থেকে গাজায় প্রবেশ করে আল-নুসেইরাতের দু’টি আবাসিক অ্যাপার্টমেন্টে একই সঙ্গে অভিযান চালায়। এই দুই অ্যাপার্টমেন্টেই জিম্মিদের রাখা হয়েছিল।
একটি অ্যাপার্টমেন্টে ২৬ বছর বয়সী নারী জিম্মি নোয়া আরগামানিকে রাখা হয়েছিল। অপরটিতে তিন পুরুষ জিম্মি আলমোগ মেইর জান (২২), আন্দ্রে কোজলোভ (২৭) ও স্লোমি জিভকে (৪১) রাখা হয়েছিল।
হাগারি জানান, জিম্মিদের কোনো গারাদে রাখা হয়নি, সশস্ত্র পাহারায় রুমে রাখা হয়েছিল। ইসরায়েলি কমান্ডোর সেখানে জোরপূর্বক প্রবেশ করে জিম্মিদের উদ্ধার করে, তারপর তাদের চারপাশ থেকে ঘিরে রেখে সুরক্ষা ঢাল দিয়ে আড়াল করে নিয়ে বাইরে থাকা সামরিক গাড়িতে তোলে। এলাকাটি থেকে বের হওয়ার সময় তারা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে।
হাগারি জানান, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এই অভিযান নিয়ে অনেক বিস্তারিত পরিকল্পনা করে, এমনকী প্রশিক্ষণের জন্য ওই দু’টি অ্যাপার্টমেন্টের অনুরূপ কাঠামোও তৈরি করেছিল।
সিবিএস নিউজ দুই মার্কিন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এই অভিযানের জন্য ইসরায়েলকে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করে সহায়তা করেছে।
ঘটনাস্থল থেকে আসা মোবাইল ফোনের ভিডিওতে দেখা গেছে, শিস দিয়ে চলে যাওয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও তুমুল গোলাগুলি থেকে বাঁচতে লোকজন ডাইভ দিয়ে আড়ালে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
পরে সামাজিক মাধ্যমে আসা ভিডিওগুলোতে রাস্তায় বহু ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
এই অভিযানে পরিষ্কারভাবে ড্রোন, যুদ্ধবিমানসহ ব্যাপক শক্তি ব্যবহার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামাসের গণমাধ্যম কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাগারির হিসাবে সংখ্যাটি একশরও কম হবে।
তবে শনিবার সকাল বেলা চালানো ইসরায়েলের এই অভিযান মোট কতোজন নিহত হয়েছেন তার সঠিক হিসাব নিশ্চিত করতে পারেনি বিবিসি, বিভিন্ন পক্ষের দাবি করা সংখ্যাগুলোও যাচাই করতে পারেনি।
আরও পড়ুন:
আল-নুসেইরাতে অভিযানকালে’কিছু জিম্মিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল’
ইসরায়েল ৪ জিম্মিকে উদ্ধার করেছে;হামাস বলছে,নিহত হয়েছে ২১০ জন
গাজা থেকে জীবিত ৪ জিম্মিকে উদ্ধারের দাবি ইসরায়েলি বাহিনীর