হাওর ডেস্ক::
‘নিয়ম তো… আইসিসি কী করেছে, এটা তো আমার হাতে নেই’- কিছুটা অসহায় কণ্ঠেই বললেন তাওহিদ হৃদয়। আম্পায়ারের একটি ভুল সিদ্ধান্তে ৪ রান কাটা পড়ায় ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর, নিয়মটি কি অন্যায্য কিনা সে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল হৃদয়ের কাছে। তরুণ ব্যাটসম্যান নিয়মের গভীরে যাননি তবে ক্রিকেট মহলে ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল, দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক পেসার মরনে মরকেল, পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ওয়াকার ইউনিসসহ আরও অনেকের মতে, আইসিসির উচিত নিয়মে পরিবর্তন আনা। কারণ আরও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দেখা যেতে পারে এর নেতিবাচক প্রভাব।
ঘটনা বাংলাদেশের ইনিংসের সপ্তদশ ওভারে। ওটনিল বার্টম্যানের করা তৃতীয় বলটি ছিল লেগ স্টাম্পের বাইরের ফুল টস ডেলিভারি। অন সাইডে খেলার চেষ্টায় ব্যাটে লাগাতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। বল তার প্যাডে ছোবল দিয়ে ফাইন লেগ দিয়ে চলে যায় সীমানার বাইরে। তবে এর আগেই প্রোটিয়াদের আধো আধো আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার।
রিভিউ নিতে দেরি করেননি মাহমুদউল্লাহ। রিপ্লেতে দেখা যায়, লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে চলে যেত ওই বল। ফলে বদলে যায় মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত। কিন্তু স্কোরবোর্ডে যোগ হয়নি ওই বাউন্ডারি। কারণ নিয়ম অনুযায়ী, আম্পায়ার আউট দেওয়া মাত্রই ‘ডেড’ হয়ে যায় বল এবং সেই সিদ্ধান্ত রিভিউয়ে বদলে গেলেও কোনো রান যোগ হয় না।
তখন ওই চার রান পেলে বাংলাদেশের বাকি থাকত ২২ বলে ২২ রান। কিন্তু চার না পাওয়ায় তা হয়ে যায় ২২ বলে ২৬। তখনও ৬ উইকেট বাকি রেখে, উইকেটে দুই সেট ব্যাটসম্যান থাকা অবস্থায় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল বাংলাদেশের হাতে। কিন্তু নাটকীয়ভাবে শেষ পর্যন্ত ওই ৪ রানেই হেরে যায় বাংলাদেশ।
ম্যাচ শেষে তাই আলোচনার তুঙ্গে আম্পায়ারের ওই সিদ্ধান্ত ও বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে যোগ না হওয়া ৪ রান। ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোর এক আয়োজনে তামিম বলেন, আইসিসি চাইলেই এই নিয়মের পরিবর্তন করে বিতর্ক এড়াতে পারে।
“আমি মনে করি, আপনার হাতে তো সময় আছে। আপনি ২ সেকেন্ড অপেক্ষা করে দেখতে পারেন বল কোথায় যাচ্ছে। বাউন্ডারি হলো কি হলো না সেটি দেখেও আপনি সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন। অন্য যা-ই হোক, ব্যাটসম্যান যদি নট আউট থাকে, তাহলে ওই বলে রান দেওয়া উচিত। ওই ৪ রান দিলে বাংলাদেশের ভাগ্য বদলে যেতে পারত।”
“আমি হয়তো সমর্থকদের মতো বলছি। তবে চিন্তা করলে এই ৪ রান খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে পারত। ধারাভাষ্যেও সবাই এটি নিয়ে কথা বলছিল। আমি মনে করি, আইসিসি এটির ব্যাপারে ভেবে দেখতে পারে। চাইলে এটি এড়ানো সম্ভব। এমন না যে খুব বড় কোনো পরিবর্তন তাদের করতে হবে।”
একই আলোচনায় থাকা সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান ফাস্ট বোলার মরকেলেরও ভাবনা অভিন্ন।
“আমিও (তামিমের সঙ্গে) একমত। এমনটা হলে ফিল্ডাররাও বাউন্ডারি বা এক-দুই রান ঠেকাতে চেষ্টা করবে। অবশ্যই খেলাটির খাতিরে কিছু একটা পরিবর্তন প্রয়োজন। আশা করি, বিশ্বকাপের পরে এটি নিয়ে ভাবা হবে।”
ম্যাচ শেষ হওয়ার পর থেকে সামাজিক মাধ্যমেও আম্পায়ারের ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছে নানান আলোচনা। পাকিস্তানের সাবেক পেসার ওয়াকার তো বাংলাদেশের হারের পেছনে সরাসরি ওই সিদ্ধান্তের দায়ই দিলেন।
“এলবিডব্লিউয়ে ডেড বলের বিতর্কিত নিয়ম নিয়ে পুনরায় ভাবা উচিত। এর কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি ছোট রানের থ্রিলার ম্যাচ হেরে গেল বাংলাদেশ।”
এই বিষয়ে ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজের ম্যাচ পরবর্তী আয়োজনে বিশদ আলোচনা করেন নিউ জিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার ও প্রখ্যাত ধারাভাষ্যকার সাইমন ডুল। বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এই নিয়মের কারণে কোনো দলের ক্ষতি হওয়ার আগেই এটি পুনর্বিবেচনার ডাক দেন তিনি।
“একবার কল্পনা করুন, ফাইনাল ম্যাচে এমন কিছু হলো এবং ভারত এর ভুক্তভোগী। আমি জানি পুরো খেলার নিয়ম বদলানো কঠিন তবে কিছু একটা পরিবর্তন দরকার। কারণ এটি সাংঘাতিক ভুল ছিল, খুব বাজে সিদ্ধান্ত ছিল। ওই বল কখনও স্টাম্পে লাগত না এবং আম্পায়ার খুব দ্রুত আঙুল তুলে দিয়েছিলেন অনেকটা বন্দুকের ট্রিগারের মতো। এটি খুব বাজে সিদ্ধান্ত ছিল। টুর্নামেন্টজুড়ে অনেক ভালো সিদ্ধান্ত দেখা গেছে কিন্তু এটি তা নয়। এর ফল হওয়া উচিত ছিল লেগ বাই থেকে ৪ রান। তা হয়নি। ধরুন বিশ্বকাপের শেষ বলে এমন হলো এবং একটি দল এমন বাজে সিদ্ধান্তের কারণে হেরে গেল।”
“এই ব্যাপারে কিছু একটা পরিবর্তন জরুরি। কারণ এটি ভাবনার চেয়ে বেশিই হচ্ছে। প্রতিবার টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আমি এই প্রশ্ন তুললে তাদের (আইসিসি) ভাবটা এমন থাকে, ‘আমরা এই বিষয়ে কিছুই করতে পারব না। খেলার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এমন কিছু হবে না।’ কিন্তু এটি এখন গুরুত্বপূর্ণ। সামনেও আরও হবে। আমি জানি না, তারা কীভাবে পরিবর্তন করবে। আমার কাছেও পুরোপুরি সমাধান নেই। তবে এই বিষয়ে কিছু একটা করতে হবে কারণ এখন এটি ম্যাচের ফলাফলে প্রভাব রাখছে।”