হাওর ডেস্ক::
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই যেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শুরু করলেন কুইন্টন ডি কক। আরেকটি ঝড়ো ফিফটিতে দলকে এনে দিলেন উড়ন্ত সূচনা। শুরুর ছন্দ ধরে রাখতে না পারায় সংগ্রহটা যদিও বড় হলো না দক্ষিণ আফ্রিকার। রান তাড়ায় সাদামাটা শুরুর পর হ্যারি ব্রুক ও লিয়াম লিভিংস্টোনের বিস্ফোরক জুটিতে আশা জাগায় ইংল্যান্ড। কিন্তু শেষে অনেকটাই সহজ হয়ে আসা সমীকরণ মেলাতে পারল না তারা। শেষ তিন ওভারের চমৎকার বোলিংয়ে জিতল প্রোটিয়ারা।
সুপার এইটে টানা দ্বিতীয় জয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে ওঠার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেন্ট লুসিয়ায় শুক্রবার তাদের জয় ৭ রানে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসকে ভাগ করা যায় দুই ভাগে। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে তাদের সংগ্রহ ছিল বিনা উইকেটে ৬৩ রান। পরের ১৪ ওভারে তারা তুলতে পারে কেবল ১০০ রান, উইকেট হারায় ৫টি।
দক্ষিণ আফ্রিকার ঠিক বিপরীত অবস্থা ছিল ইংল্যান্ডের। লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ১০ ওভারে তারা ৩ উইকেট হারিয়ে করতে পারে মাত্র ৬০ রান। ব্রুক ও লিভিংস্টোনের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর পর শেষ ১৮ বলে ৬ উইকেট হাতে রেখে তাদের প্রয়োজন দাঁড়ায় কেবল ২৫ রান; কিন্তু ১৭ রানের বেশি নিতে পারেনি গত আসরের চ্যাম্পিয়নরা। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫৬ রান করে তারা।
৪টি করে চার ও ছক্কায় ৩৮ বলে ৬৫ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা কিপার-ব্যাটসম্যান ডি কক।
এই মাঠেই একদিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৮০ রান ৮ উইকেট ও ১৫ বল হাতে রেখে পেরিয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। ৪৭ বলে অপরাজিত ৮৭ রানের ইনিংস খেলে ওই ম্যাচের নায়ক ফিল সল্ট এবার দ্বিতীয় ওভারেই বিদায় নেন ১১ রান করে। কাগিসো রাবাদার বলে দারুণ ক্যাচ নেন রিজা হেনড্রিকস।
ভালো করতে পারেননি জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলার ও মইন আলিও। একাদশ ওভারে ৬১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ড। সেখান থেকে দলকে টেনে নেন ব্রুক ও লিভিংস্টোন।
শেষ ৬ ওভারে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৭৭ রান। রাবাদার করা ১৫তম ওভারে লিভিংস্টোনের একটি ছক্কা ও ব্রুকের দুই চারে আসে ১৮ রান। আনরিক নরকিয়ার পরের ওভারে আসে ১৩।
১৭তম ওভারে ঝড় বইয়ে যায় ওটনিয়েল বার্টমানের ওপর দিয়ে। তার প্রথম ৩ বলে দুটি চার ও একটি ছক্কা মারে লিভিংস্টোন, শেষ বলে ব্রুকের ব্যাট থেকে আসে চার। এই ওভারে আসে মোট ২১ রান।
ম্যাচ তখন ইংল্যান্ডের মুঠোয়, ১৮ বলে দরকার ২৫, উইকেটে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা দুই ব্যাটসম্যান। কিন্তু বিস্ময়করভাবে বাকি ৩ ওভারে একটি চারের বেশি বাউন্ডারিই পায়নি ইংলিশরা।
১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে লিভিংস্টোনকে (১৭ বলে ৩৩) ফিরিয়ে ৪২ বলে ৭৮ রানের জুটি ভাঙেন রাবাদা, ওভারে তিনি দেন মাত্র ৪ রান। পরের ওভারে মার্কো ইয়ানসেন খরচ করেন কেবল ৭ রান।
শেষ ওভারে চাই ১৪। ব্রুক ছিলেন বলে আশা টিকে ছিল ইংল্যান্ডের। কিন্তু নরকিয়ার প্রথম বলে এইডান মার্করামের অসাধারণ ক্যাচে ব্রুক (৩৭ বলে ৫৩) বিদায় নিলে ইংলিশদের আশাও প্রায় শেষ হয়ে যায়। চতুর্থ বলে স্যাম কারান একটি চার মারলেও শেষ ৩ বলে আসে স্রেফ ১ রান।
এর আগে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ডি ককের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে এগোতে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাঁহাতি ওপেনার ফিফটি পূর্ণ করেন মাত্র ২২ বলে, এই আসরে যা যৌথভাবে দ্রুততম।
দশম ওভারে রিজা হেনড্রিকসকে ফিরিয়ে ৫৯ বলে ৮৬ রানের শুরুর জুটি ভাঙেন মইন। এরপর রানের গতিও কমে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার।
পাওয়ার প্লেতে এক ওভারে ২১ রান দেওয়া জফ্রা আর্চার দ্বাদশ ওভারে বোলিংয়ে ফিরে স্রেফ ৩ রান দিয়ে বিদায় করে দেন বিপজ্জনক ডি কককে।
কিপার বাটলারের দুর্দান্ত থ্রোয়ে রান আউটে ফেরেন হাইনরিখ ক্লাসেন। দ্রুত বিদায় নেন মার্করামও। প্রোটিয়ারা দেড়শ ছাড়াতে পারে মূলত ডেভিড মিলারের ২৮ বলে ৪৩ রানের সুবাদে।
বোলারদের নৈপুণ্যে লক্ষ্যটা নাগালে রাখতে পারলেও, ব্যাটিং ব্যর্থতায় জিততে পারল না ইংল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৬৩/৬ (হেনড্রিকস ১৯, ডি কক ৬৫, ক্লসেন ৮, মিলার ৪৩, মার্করাম ১, স্টাবস ১২*, ইয়ানসেন ০, মহারাজ ৫*; টপলি ৪-০-২৩-০, মইন ৩-০-২৫-১, আর্চার ৪-০-৪০-৩, কারান ৩-০-২৯-০, রাশিদ ৪-০-২০-১, উড ২-০-২২-০)
ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৫৬/৬ (সল্ট ১১, বাটলার ১৭, বেয়ারস্টো ১৬, মইন ৯, ব্রুক ৫৩, লিভিংস্টোন ৩৩, কারান ১০*, আর্চার ১*; ইয়ানসেন ৪-০-৩১-০, রাবাদা ৪-০-৩২-২, মহারাজ ৪-০-২৫-২, বার্টমান ৩-০-২৭-১, নরকিয়া ৪-০-৩৫-১, মার্করাম ১-০-৪-০)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: কুইন্টন ডি কক