হাওর ডেস্ক::
সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও পাহাড়ি ঢলের তোড়ে বিধ্বস্ত সড়কগুলো ক্ষতচিহ্ন নিয়ে ভেসে ওঠছে। এসব সড়কে যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রাথমিক হিসাবে, বন্যায় তাদের প্রায় ১২০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে; যা সংস্কার করতে ৩৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন।
অন্যদিকে সড়ক ও সেতু বিভাগ জানিয়েছে, তাদেরও প্রায় ১২০ কিলোমিটার রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। এগুলো মেরামত করতে অন্তত ১০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে।
দুই সংস্থার মোট ২৪০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এগুলো সংস্কার করতে প্রয়োজন হবে মোট ৩৬০ কোটি টাকা।
টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে গত কয়েকদিন ধরে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণার বিভিন্ন এলাকায় বন্যায় বিপর্যস্ত জনজীবন। তবে বৃষ্টিপাত কমে আসায় সিলেট বিভাগে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানির সমতল কমছে। এতে আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে।
তবে এসব এলাকায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসও রয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “১৭ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সুনামগঞ্জে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময় পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে গ্রামীণ সড়কসহ উপজেলার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী অনেক সড়কের অংশ বিশেষ ঢলের তোড়ে ধসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য সড়ক।
“আমাদের প্রাথমিক হিসাবে, ১১ উপজেলার মধ্যে দোয়ারাবাজার, ছাতক, সুনামগঞ্জ সদর ও তাহিরপুরসহ বন্যা কবলিত এলাকার প্রায় ১২০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধসে গেছে, ভেসে গেছে। এগুলো পরিপূর্ণভাবে সংস্কার করতে সরকারের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা প্রয়োজন।”
তবে বন্যার পানি একেবারে নেমে গেলে প্রকৃত ক্ষয়-ক্ষতির চিত্র পাওয়া যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, বন্যায় জেলা সদর, উপজেলা সদর, ইউনিয়ন, হাটবাজারের সঙ্গে সংযোগ সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন এসব সড়কে যাতায়াতে কষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষদের।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, “বন্যায় প্রাথমিক তথ্য মতে, আমাদের প্রায় ১২০ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো জরুরি মেরামত করতেই প্রায় ১০ কোটি টাকার প্রয়োজন।”
এ ছাড়া বিভিন্ন সেতু, কালভার্টের সংযোগ সড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি কমে গেলে ক্ষয়-ক্ষতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে বলে জানান প্রকৌশলী আশরাফুল।
দোয়ারাবাজার উপজেলার নিজগাঁও গ্রামের যুবক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “বন্যায় আমাদের সীমান্ত এলাকার সবগুলো গ্রামীণ সড়ক, উপজেলা সদরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী সড়কের অনেক ক্ষতি হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের প্রবল তোড়ে ভেসে গেছে অনেক সড়কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এসব সড়কে এখন চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা না হলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।”
তিনি বলেন, ১৬-১৭ জুনের মধ্যেই ছাতক ও দোয়ারাবাজারের সীমান্ত এলাকার গ্রামীণ সড়কগুলোকে পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোত ছিন্নভিন্ন করে দেয়।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বৈঠাখালী গ্রামের ব্যবসায়ী মো. আব্দুল আজিজ বলেন, “আমাদের গ্রামের রাস্তাটি সুরমা নদীর পশ্চিম পাড়ে। সড়কটি বন্যায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এখন যাতায়াত করার উপযোগী নেই। রড, পাথর, কনক্রিট ভেসে ওঠছে।”
কুতুবপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার বলেন, “রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। এখন বাড়ি থেকে বের হওয়া যায় না। বাড়িঘরও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তাঘাট ভেঙেচুরে গেছে। আমাদের চলাফেরায় এখন অনেক সমস্যা হচ্ছে।”
আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছে মানুষ
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, “আশ্রয়কেন্দ্রে আসা বানভাসীদের প্রায় সবাই চলে গেছেন নিজেদের বাসাবাড়িতে। রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৫২৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৩ হাজার ৬৪৯ জন অবস্থান করছিলেন। তবে বিকালে সবগুলো আশ্রয়কেন্দ্র থেকে অধিকাংশ বন্যার্তই চলে গেছেন।”
বন্যা কবলিত এলাকা থেকে পানি নেমে যাওয়ায় যাতে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা না দেয় তার জন্য প্রায় তিন লাখ পানিবিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবার জন্য জেলায় ১০১টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। এ পর্যন্ত জেলায় এক হাজার ৯৫ মেট্রিকটন চাল, ২২ লাখ টাকা, পাঁচ হাজার ২৮৩ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং গোখাদ্য ও শিশুখাদ্যের জন্য প্রায় ১৭ লাখ টাকার বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবোর সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, রোববার সন্ধ্যা ৬টায় সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতক পয়েন্ট এখনও বিপৎসীমার উপরে থাকলেও ২৪ ঘণ্টায় ২১ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। এই পয়েন্টে ৪৮ ঘণ্টায় ৪৮ সেন্টিমিটার পানি কমেছে।