হাওর ডস্ক::
যুক্তরাজ্যের আগাম নির্বাচনে লেবার পার্টি যখন বড় জয়ের সুবাস পাচ্ছে, তখন ভোটের আগে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে অর্থনৈতিক স্থবিরতা, স্বাস্থ্য, আবাসন সংকট, জীবনযাত্রার ব্যয়, অভিবাসন ও বৈদেশিক নীতির মত বিষয়গুলো।
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচন ঘিরে ভোটের প্রচারে রয়েছে ৯৫টি দলের চার হাজারের বেশি প্রার্থী; এর মধ্যে স্বতন্ত্র ১১ জনসহ মোট ৩৪ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী হয়েছেন।
জনমত জরিপগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক আর বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনসহ পাঁচ নেতার অধীনে টানা এক দশকের বেশি সময় কনজারভেটিভদের শাসনের পর এবারের ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি।
যেসব দল ভোটের মহারণে অবতীর্ণ হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের রয়েছে নির্বাচনি ইশতেহার, সেখানে ‘প্রতিশ্রুতির ঝুলঝুরি’ দেখা গেছে।
তবে বিভিন্ন দাবিতে ভোটারদের মধ্যে ‘বিভাজন’ এবং অন্য দলের দিকে ঝুঁকে যাওয়ার একটি আবহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবার। যুক্তরাজ্যের জাতীয় এবং আন্তজার্তিক বিভিন্ন বিষয় ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলছে।
দলগুলোর ইশতেহারের দিকে তাকাচ্ছেন ভোটাররা। দলের প্রতিশ্রুতি আর জাতীয় স্বার্থকে মিলিয়ে নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার ব্যালটে তার প্রতিফলন ঘটবে।
শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় যারাই আসুক, ভোটারদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা সাতটি চ্যালেঞ্জ নিয়েই তাদের সামনে এগোতে হবে।
আলজাজিরা লিখেছে, জনমত জরিপ সংস্থা ‘ইউগভ’ যুক্তরাজ্যের ভোটের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে একটি সাপ্তাহিক জরিপ করেছে।
সেখানে দেখা গেছে, ৫২ শতাংশ ভোটার অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। এরপর স্বাস্থ্যে ৫০ শতাংশ, অভিবাসন ও আশ্রয়ে ৪০ শতাংশ, আবাসনে ২৪ শতাংশ, পরিবেশে ২০ শতাংশ, অপরাধে ১৮ শতাংশ, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তায় ১৫ শতাংশ, শিক্ষায় ১৪ শতাংশ, ব্রেক্সিটে ১৩ শতাংশ এবং কর ইস্যুতে ১৩ শতাংশ ভোটার গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন।
অর্থনীতি
ইনস্টিটিউট ফর ফিসক্যাল স্টাডিজের (আইএফএস) হিসাবে, গত দেড় দশকে যুক্তরাজ্যে আয় বেড়েছে সবচেয়ে ধীরগতিতে।
প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী পরিচালক টম ওয়াটার্স গত মে মাসের শেষের দিকে বলেন, “এটি ধনী-দরিদ্র, বয়স্ক-তরুণ সবার জন্যেই একটি ধীরগতির বৃদ্ধি। এর মানে আয় বৈষম্য স্থিতিশীল থাকার পরও প্রকৃত দারিদ্র্য হ্রাসের গতি অনেক কম।”
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি এবং বেতন না বাড়ায় ব্রিটেনের জনগণ তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় সংকুলানে হিমশিম খাচ্ছে। অর্থনীতিকে ঠিকঠাক করতে তাই ভিন্ন ভিন্ন পথ বাতলে দিয়ে ভোটের প্রচারে রয়েছে প্রধান দুই দল কনজারভেটিভ ও লেবার পার্টি।
বিবিসি বলছে, লেবার নেতা কিয়ার স্টারমার দলীয় ইশতেহারে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস), আবাসন, জ্বালানি ও অন্যান্য প্রধান বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। এসব খাতে বিনিয়োগের জন্য তার দল ৭৪০ কোটি পাউন্ড কর বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
অন্যদিকে নাগরিকদের বেতনের ওপর বাধ্যতামূলক ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্সের কর হার ২ শতাংশ পয়েন্ট কমানোসহ বছরে ১ হাজার ৭০০ কোটি পাউন্ড কর কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি।
আবাসন সমস্যা
আলজাজিরা লিখেছে, যুক্তরাজ্যে আবাসন সংকটের পেছনে কারণ হল সম্পত্তির দাম ও ভাড়া বৃদ্ধি এবং নতুন ভবন নির্মাণের খরচ বৃদ্ধি।
স্থানীয় সরকার সমিতির হিসাবে, ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ১০ বছরে সামাজিক আবাসনের ঘাটতির কারণে অস্থায়ী বাসস্থানের সংখ্যা বেড়েছে ৮৯ শতাংশ।
২০১০ সালে কনজারভেটিভ ও লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টি জোট করে ক্ষমতায় আসে। তখন সরকারের বাজেট ঘাটতি কমিয়ে নাগরিকদের ওপর চাপ কমানোর চেষ্টা করা হয়। সেজন্য সরকার যে কঠোর পদক্ষেপ নেয়, তার চাপ তীব্র হয় স্থানীয় কাউন্সিলগুলোর ওপর।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক ভূগোলের অধ্যাপক মিয়া গ্রে আলজাজিরাকে বলেন, “মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে আবাসনের সংকট রয়েছে ব্রিটেনে। এর কারণগুলো জটিল। কিন্তু স্থানীয় সরকারের বাজেটে বিশেষ করে কঠিন পদক্ষেপের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
“আমরা জানি ২০২০-২০২১ সালে ‘লেভেলিং আপ, হাউজিং অ্যান্ড কমিউনিটি’ বিভাগ মাত্র ৫২ শতাংশ বাজেট দেয়। প্রকৃত অর্থে ২০০৯-২০১০ সালে এই পরিমাণ বাজেট দেওয়া হয় কেবল নতুন আবাসনসহ স্থানীয় কমিনিউটিগুলোর জন্য। এটি সত্যিই আশ্চর্যের বিষয়।”
আবাসন খাতের সংকটের এ পরিস্থিতিতে কনজারভেটিভরা নির্বাচনে জয় পেলে ১৬ লাখ নতুন বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
অবশ্য লেবার পার্টির নেতারা বলছেন, আবাসনে সমস্যার মধ্যে ২০২৩ সালে বাড়ি নির্মাণের যেসব কর্মযজ্ঞ বাতিল হয়েছিল, এবারের নির্বাচনে জয় পেলে তারা সেই কাজগুলো ফের চালু করবেন। সামনের বছরগুলোতে ১৫ লাখ ঘরবাড়ি নির্মাণের লক্ষ্য রয়েছে তাদের।
স্বাস্থ্য
জনমত জরিপ সংস্থা ‘ইউগভ’ এর জরিপে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলো যুক্তরাজ্যের এবারের ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে, তার মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে স্বাস্থ্য খাত। তাদের একটি জরিপের ৩৪ শতাংশ উত্তরদাতা ‘জীবনযাত্রার ব্যয়ের’ পরই স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
চলতি বছর এপ্রিলে এনএইচএসে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষমাণ মানুষের সংখ্যা ছিল ৭৬ লাখ, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরের রেকর্ড ৭৮ লাখ থেকে সামান্য কম।
দুর্ঘটনা ও জরুরি বিভাগে চিকিৎসকের সাক্ষাৎ পেতে চার ঘণ্টার বেশি সময় হাসপাতালে অপেক্ষা করা মানুষের অনুপাত ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ১৪ বছরে ক্রমাগতভাবে বেড়েছে। এটি জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতি যাচাইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষমাণ নাগরিকের সংখ্যা ২০১১ সালে ছিল ৬ শতাংশ। ২০২২ সালে তা দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। আর এখন তা কিছুটা কমে ৪২ শতাংশ হয়েছে।
কনজারভেটিভ পার্টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে- জয়ী হলে তারা এনএইচএসের জন্য বাজেট বাড়াবে। কিন্তু অন্য দলগুলো এ ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিতে তেমন জোর দেয়নি।
লেবার পার্টি এনএইচএসে রোগীদের অপেক্ষার সময় কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে ভিন্ন কৌশলে। এনএইচএসে সপ্তাহে ৪০ হাজার অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসার বিনিময়ে তাদের অপেক্ষার পালা কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দলটি। এ ছাড়া ক্যান্সার স্ক্যানারের সংখ্যা বাড়িয়ে ক্যান্সার রোগীদের অপেক্ষার সময় কামানোর ঘোষণাও দিয়েছে তারা।
যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের গত মার্চের তথ্য বলছে, ক্যান্সার চিকিৎসায় সরকার নির্ধারিত ৬২ দিনের যে সময়সীমা, সেটিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পূরণ হচ্ছে না।
ভোটের আগে স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসক সংখ্যা ও সেবিকাদের বেতর বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে লিবারেল ডেমোক্র্যাটসরা ।
অপরদিকে এনএইচএস ও সামাজিক সেবার সামনের সারির কর্মীদের কর কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রিফর্ম পার্টি। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা করমুক্ত করার কথাও বলে রেখেছে তারা।
অভিবাসন
স্কাই নিউজের জন্য পরিচালিত ‘ইউগভ’ এর একটি জরিপে দেখা গেছে, ব্রিটেনের ৪৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন, অভিবাসনের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। আর ইতিবাচক প্রভাবের পক্ষে সায় দিয়েছে ৩৫ শতাংশ মানুষ।
অভিবাসনের জন্য যুক্তরাজ্যে মাঝেমধ্যে বা অনিয়মিতভাবে যারা আসেন, তাদের ঠেকাতে জোর দিয়ে আসছে কনজারভেটিভরা। যেমন- ছোট ছোট নৌকায় ফ্রান্স থেকে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাজ্যে ঢোকে অনেক মানুষ। কনজারভেটিভ পার্টি এমন অভিবাসন বন্ধের কথা বলে আসছে।
আলজাজিরা লিখেছে, ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে গত ১৯ জুন দেশটিতে ৮৮২ জন প্রবেশ করেছে, যা ২০২২ সালের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দৈনিক অনুপ্রবেশ।
অবৈধ বা কাগজপত্রহীন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের যুক্তরাজ্য থেকে রুয়ান্ডায় পাঠানোর একটি ‘বিতর্কিত’ পরিকল্পনা নিয়েছে ঋষি সুনাকের সরকার। ওই উদ্যোগ এর আগে আদালত কয়েকবার আটকে দিয়ে বলেছিল, এটা অনৈতিক।
২০২২ সালের ১৪ এপ্রিল যুক্তরাজ্য রুয়ান্ডা সরকারের সঙ্গে ‘মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট’ (এমইডিপি) নামে একটি চুক্তির পরিকল্পনা ঘোষণা করে। পরে এর নাম হয় ‘ইউকে-রুয়ান্ডা অ্যাসাইলাম পার্টনারশিপ’।
সুনাক সরকারের পরিকল্পনায় যুক্তরাজ্যে এসে আশ্রয় চাওয়া বিদেশিদের প্রথমে রুয়ান্ডায় পাঠানো হবে, সেখান থেকে তারা আশ্রয় বা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবে। যাচাই-বাছাই করে যারা আশ্রয়ের যোগ্য, তাদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে। বাকিদের রুয়ান্ডা থেকে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে পরিকল্পনা ঘোষণার দুই বছরেও এখন পর্যন্ত রুয়ান্ডায় কোনো ফ্লাইট যায়নি।
প্রধানমন্ত্রী সুনাকের ঘোষণা অনুযায়ী, আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে প্রথম ফ্লাইটটি রুয়ান্ডায় যাওয়ার কথা ২৪ জুলাই। তবে তার আগেই হচ্ছে নির্বাচন। টোরিরা (কনজারভেটিভ পার্টি) পরাজিত হলে এ পরিকল্পনা আর আলোর মুখ দেখবে না; কারণ এরই মধ্যে লেবার পার্টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা ক্ষমতায় গেলে রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বাতিল করবে।
অবশ্য লেবার পার্টিও অভিবাসীর সংখ্যা কমানোর ওপর জোর দিয়েছে। তারা বলছে, কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের বিমানবন্দর থেকেই তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। তবে পরিকল্পনাটি এখনও স্পষ্ট নয়।
নাইজেল ফারাজের কট্টর জাতীয়বাদী দল ‘রিফর্ম ইউকে’ পার্টি গতবারের নির্বাচনে ভালো ফল দেখিয়েছিল। দলটি তখন ‘ব্রেক্সিট পার্টি’ নামে পরিচিত ছিল। অভিবাসনকে ঘিরে কঠোর নীতি প্রণয়ন করার পক্ষে দীর্ঘদিন প্রচার চালিয়ে আসছে ফারাজের দল। যুক্তরাজ্যে সামাজিক সমস্যার জন্য অভিবাসনকেই দায়ী করে থাকেন উগ্র জাতীয়বাদী এ নেতা।
ফারাজের মত অভিবাসন কমানোর পক্ষের অন্যান্য দলও মনে করে, ব্রেক্সিটের পর থেকে যুক্তরাজ্যে ‘নেট মাইগ্রেশন’ সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।
মাইগ্রেশন অবজারভেটরির হিসাব বলছে, ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে ‘নেট মাইগ্রেশন’ ৬ লাখ ৮৫ হাজার ছুঁয়েছে। বিভিন্ন কাজ বা পড়ালেখার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আসা মানুষের চেয়ে অভিবাসন বেড়েছে যুদ্ধাক্রান্ত ইউক্রেইনীয় আশ্রয়প্রার্থীদের কারণে।
ইউক্রেইন প্রসঙ্গ
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে ইউক্রেইনের প্রতি অটল সমর্থন দিয়ে আসছে ঋষি সুনাকের যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা বিশ্ব।
সম্প্রতি ইতালিতে গ্রুপ অব সেভেন বা জি-সেভেন সম্মেলনে সুনাক পশ্চিমা নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘যাই হোক না কেন’, যুক্তরাজ্য ইউক্রেইনের সঙ্গেই রয়েছে।
সম্মেলনে রাশিয়ার প্রতি যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান রাখেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সুনাক।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ১ হাজার ২৫০ কোটি পাউন্ড সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইউক্রেইনকে; এর মধ্যে সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি রয়েছে ৭৬০ কোটি পাউন্ড।
লেবার পার্টি বলছে, ইউক্রেইনের প্রতি তাদের সমর্থন হবে ‘সুনির্দিষ্ট’। দলটির ভাষ্য, তারা কূটনৈতিকভাবে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করতে এবং ইউক্রেইনের শিল্প উত্পাদনকে বাড়াতে সাহায্য করতে কিইভের সঙ্গে কাজ করবে।
নেটোর সদস্য পদ পেতেও ইউক্রেইনের জন্য একটি স্পষ্ট পথ তৈরি করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে লেবার পার্টি।
গাজা সংকট
গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি স্থাপনের দাবিতে আট মাস ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে ব্রিটেনের অধিকাংশ নাগরিক। ৪ জুলাইয়ের ভোটে তারা তাদের মতের প্রতিফলন ঘটনানোর সুযোগ পাবেন।
গত মে মাসে ইউগভের এক জরিপে দেখা গেছে, ব্রিটেনের ৭০ শতাংশ মানুষ জরুরি ভিত্তিতে গাজার যুদ্ধ বন্ধ চান। এর মধ্যে ৬৭ শতাংশ কনজারভেটিভ পার্টির এবং ৮৬ শতাংশ লেবার পার্টির সমর্থক।
তবে প্রধান দুটি দলের কেউই তাৎক্ষণিকভাবে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে জোরালো অবস্থান দেখায়নি।
আলজাজিরা লিখেছে, ফিলিস্তিনের সমর্থক লেবার পার্টির কিছু ভোটার গাজা প্রশ্নে পার্টির অবস্থানের কারণে তাদের দল ত্যাগ করতে পারেন বলে ধারণা করা হলেও দলটির ওপর এর প্রভাব কতটা পড়বে, সেটি স্পষ্ট নয়।
কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, লেবার পার্টির সমর্থক যখন বাড়ছে, তখন কিছু কর্মী দল ত্যাগ করলেও ভোটে এর প্রভাব খুব একটা পড়বে না।
এবারের ভোটে বার্মিংহাম সেলি ওকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্রিটিশ-ফিলিস্তিনি অধ্যাপক কামাল হাওয়াশ বলেন, লেবার পার্টির নেতা স্টারমার যখন ‘গাজায় পানি ও বিদ্যুৎ বন্ধের অধিকার ইসরায়েলের রয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন, তখনই তিনি তার দল ছাড়ার সিন্ধান্ত নেন।
স্টারমারের বক্তব্য ঘিরে সমালোচনা হলে পরে তিনি বলেন, ওই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি আসলে বোঝাতে চেয়েছেন ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। তবে অনেক মুসলিম ভোটার তার ওই মন্তব্যের বিরুদ্ধে অবস্থান জানিয়েছেন।
এখন শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে বলছে লেবার পার্টি, যার মানে ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান’।
যুক্তরাজ্যে তাহির তালাতি নামে এক ইমাম আলজাজিরাকে বলেন, তার কমিউনিটির বেশিরভাগই এখন বলছেন, তারা লেবার পার্টিকে ভোট দেবেন না।
“যেহেতু (গাজায়) গণহত্যা হয়েছে, স্টারমারেরও উচিত একে গণহত্যা বলা।”
‘ডিভলভড’ ও ‘রিজার্ভড’ ইস্যু
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে প্রভাব ফেলা এসব বিষয় ছাড়াও কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোকে বলা হয় ‘ডিভলভড ইস্যু’। স্কটল্যান্ড, ওয়েলস, নর্দান আয়ারল্যান্ডের জন্য স্থানীয় এসব ইস্যু খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা এবারের জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নীতি পরিকল্পনায় প্রভাব রাখছে।
ডিভলভড ইস্যুগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, বিচার ও পুলিশিং, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পরিবেশ। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার।
অপরদিকে রিজার্ভড ইস্যুগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তা, বৈদেশিক বিষয়, অভিবাসন, বাণিজ্য ও মুদ্রা। এসব বিষয় কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টের অধীনে নির্ধারিত হয় এবং সে অনুযায়ী সরকার চলে।
যুক্তরাজ্য পার্লামেন্ট রাজ্যগুলোর জন্য ডিভলভড ইস্যুগুলোতে নীতি সহায়তা ও বরাদ্দ দিয়ে থাকে। ফলে ৪ জুলাইয়ের ভোটে এ বিষয়গুলোও প্রভাব ফেলবে।
আর রিজার্ভড বিষয়গুলোও এবার স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও নর্দান আয়ারল্যান্ডে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে গাজা যুদ্ধকে ঘিরে।
যুক্তরাজ্যের রাজ্যগুলোর পরিষদ, যাকে ‘জাতীয় পরিষদ’ বলা হয়, তারা তাদের নিজস্ব নীতি নির্ধারণ ও নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার অধিকার রাখে। তবে রাজ্যগুলোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নেওয়া নীতি ও বরাদ্দ রাজ্যের ভোটারদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ৪ জুলাইয়ের ভোটে রাজনৈতিক দলগুলোর ডিভলভড ইস্যুতে নেওয়া পরিকল্পনা দেখেই আইনপ্রণেতা নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেবেন ভোটাররা; যা বিভিন্ন জনমত জরিপে উঠে এসেছে।
উদাহরণ দিয়ে বিবিসি লিখেছে, স্কটল্যান্ড তার সীমানার মধ্যে নাগরিকদের জন্য কীভাবে সেবা দেবে, তার ওপর হয়ত সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলছে না ৪ জুলাইয়ের ভোট। তবে স্কটিশ পার্লামেন্টের জন্য নেওয়া যুক্তরাজ্য সরকারের নীতি ইস্যুগুলো এবারের ভোটের প্রচারে বিশাল প্রভাব ফেলেছে।