হাওর ডেস্ক::
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে পুকুরে ডুবে হিন্দু পরিবারের দুই শিশুর মৃত্যুর পর লাশ স্থানীয় শ্মশানে সমাধিস্থ করা হয়। পরে গ্রামের পঞ্চায়েত কমিটির চাপের মুখে স্বজনরা শিশু দুটির লাশ সমাধি থেকে তুলে নদীতে ভাসাতে বাধ্য হন। এর ছয় দিন পর থানায় অভিযোগ দেন এক শিশুর বাবা।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুরের মাহমুদপুর গ্রামে গত ২৯ জুন ঘটনাটি ঘটে।
নিহতরা হল, ওই গ্রামের গোবিন্দ দাসের ছেলে প্রলয় দাস (৭) এবং একই গ্রামের রুবেল দাসের ছেলে সূর্য দাস (৬)।
শুক্রবার বিকালে নিহত প্রলয় দাসের বাবা গোবিন্দ দাস বাদী হয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষসহ সাতজনের নামে আজমিরীগঞ্জ থানায় অভিযোগটি দায়ের করেন বলে ওই থানার ওসি মোহাম্মদ ডালিম আহমেদ জানান।
গোবিন্দ দাস বলেন, “আমার ছেলের শ্রাদ্ধকার্যের পর আজ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। আমার বিশ্বাস, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনবেন প্রশাসন।”
থানায় দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, গত ২৯ জুন বাড়ির পাশের মাঠে ফুটবল খেলা শেষে মাঠ সংলগ্ন পুকুরে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় গোবিন্দ চন্দ্র দাসের পুত্র প্রলয় দাস ও একই গ্রামের রুবেল দাসের পুত্র সুর্য দাসের।
ওইদিন বিকালে প্রলয় ও সূর্যের লাশ পাহাড়পুর মহাশ্মশানে সমাধিত করার পর গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির নেতাদের তোপের মুখে পড়ে শিশু দুটির পরিবার।
কমিটির নেতারা শ্মশানের পরিবেশ রক্ষা ও পরিচ্ছন্নতার দোহাই দিয়ে শিশু দুটির লাশ সেখান থেকে তুলে নদীতে ফেলার নির্দেশ দেয় পরিবারকে।
এ অবস্থায় গ্রাম প্রধানদের দ্বারস্ত হয়ে ‘পায়ে ধরে কান্নাকাটি’ করলেও গোবিন্দ দাসের কোনো অনুরোধই শুনেননি মাতব্বরেরা।
গ্রাম পঞ্চায়েতের চাপে সমাধিস্থ করার ঘণ্টা ছয়েকের মাথায় বাধ্য হয়ে নিজের সাত বছরের শিশুর লাশ উত্তোলন করে বস্তাবন্দি করে কুশিয়ারার শাখা কালনী নদীতে ফেলতে বাধ্য হন গোবিন্দ দাস।
এ অবস্থায় গ্রাম্য মাতব্বরদের সিদ্ধান্তে শিশু সূর্য দাসের পরিবারও তাদের শিশু সন্তানের লাশ শ্মশান এলাকা থেকে তুলে একইভাবে নদীতে ভাসিয়ে দিতে বাধ্য হন।
এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে গত বুধবার আজমিরীগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সোহেল ভূঁইয়া স্বপ্রণোদিত হয়ে ঘটনার তদন্ত করে আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে আজমিরীগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
আজমিরীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ ডালিম আহমেদ বলেন, “গোবিন্দ দাস অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এদিকে, জানতে চাইলে পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীপেশ চন্দ্র সরকার বলেন, “যেহেতু শ্মশানটি নতুন, সেখানে সমাধি দেওয়া হলে পরবর্তীতে এলাকাবাসী ভয় পেতে পারেন, এ শঙ্কা থেকেই শ্মশানে মৃতদেহ সমাহিত না করার জন্য তাদের অনুরোধ করা হয়েছিল।”
কমিটির কোষাধ্যক্ষ অসিত দাস বলেন, “পঞ্চায়েত কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন শ্মশানটিতে এখনো পর্যন্ত কোনো মরদেহ সমাধি করা হয়নি। সেখানে শুধু মরদেহ দাহ করা হয়। তাদের মরদেহ তুলে অন্যত্র সমাহিত করার জন্য বলা হয়েছে। পরে তারা মরদেহ উত্তোলন করে কী করেছেন, সেটা আমাদের জানা নেই।”