হাওর ডেস্ক::
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার ‘প্রত্যয়’ স্কিমের বাস্তবায়ন এক বছর পিছিয়েছে সরকার।
রোববার জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ এর ১৪ (২) ধারা অনুযায়ী, ১ জুলাই ২০২৪ বা তার পরে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগদানকারী সব কর্মচারী বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যয় স্কিমের আওতাভুক্ত হবেন। অর্থমন্ত্রীও তার বাজেট বক্তৃতায় বিষয়টি বলেছিলেন।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে চান না। তারা এর প্রতিবাদে কর্মবিরতি শুরু করেছে। পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দলের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের একটি বৈঠকে এই স্কিমের বাস্তবায়ন এক বছর পেছানোর সিদ্ধান্ত হয়।
তবে এরপরেও শিক্ষকদের একটি অংশ কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেনশন স্কিমে কিছু সংশোধন আনার পরিকল্পনার কথা বলেছেন, যদিও তার ভাবনা প্রকাশ করেননি।
প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের দিনেই জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত জানাল।
কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সরকার এ মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ও তার অঙ্গসংগঠনের প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীরাও সরকারি কর্মচারীদের ন্যায় যারা নতুন কর্মচারী হিসেবে ১ জুলাই ২০২৫ সাল বা তার পরবর্তী সময়ে চাকরিতে যোগদান করবেন তারা বাধ্যতামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আসবেন।”
কর্মবিরতিতে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে শুক্রবার আলোচনায় বসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেদিনই ‘প্রত্যয়’ স্কিম এক বছর পেছানোর কথা বলেন সড়ক মন্ত্রী।
চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে যারা সরকারি চাকরিতে যোগ দেবেন, তারাও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আসবেন। তবে তাদের স্কিম কেমন হবে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
বর্তমানে চারটি পেনশন স্কিম আছে, যেখানে মাসে ১০০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমানোর সুযোগ আছে। কারও বছর ৬০ হওয়ার পর তিনি আজীবন পেনশন পাবেন।
হতদরিদ্রদের যে এক হাজার টাকার স্কিম আছে, সেখানে ৫০০ টাকা সরকার দেবে। বাকি তিনটি স্কিমের পুরো টাকা পেনশন গ্রহণে আগ্রহীরা জমা করবেন।
তবে প্রত্যয় স্কিমে কর্মচারী-কর্মকর্তারা তাদের মূল বেতনের ১০ শতাংশ অথবা ৫ হাজার টাকার নিচে যেটা কম, সেটা জমা করবেন, সমপরিমাণ টাকা দেবে প্রতিষ্ঠান।
তবে আন্দোলনে গিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন বলছে, শিক্ষকদের প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ‘বৈষম্যমূলক’।
যুক্তি হিসেবে তারা বলছে, এখন যে আনুতোষিক পাওয়া যায়, প্রত্যয় স্কিমে তা নেই। চাকরিজীবী এবং তার নমিনি এখন আজীবন পেনশন পান, প্রত্যয়ে যুক্ত হলে সেটাও কমবে।
বর্তমান নিয়মে পেনশনাররা মাসে চিকিৎসা ভাতা, দুটো উৎসব ভাতা পান, একটি বৈশাখি ভাতা পান, প্রত্যয়ে সে ব্যবস্থা নেই। এখনকার মত ইনক্রিমেন্টও নেই।
বর্তমানে দেশে ৪০৩টি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৯০টির মত প্রতিষ্ঠানে পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড (সিপিএফ) এর আওতাধীন। সিপিএফ সুবিধার আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীরা এককালীন আনুতোষিক পান, পেনশন পান না।