1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পিটুনিতে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছে কোটাবিরোধীরা

  • আপডেট টাইম :: মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪, ১২.০৯ পিএম
  • ২৭ বার পড়া হয়েছে

হাওর ডেস্ক::
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের পর কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের পিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে ছাত্রলীগ।

সোমবার বিকালে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে এই সংঘর্ষের মধ্যে আহত শতাধিক শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

আহতদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তারা চার হলেন- মাহমুদুল হাসান (২৩), ইয়াকুব (২১), রাকিব (২৪) ও মাসুদ (২৩)। তারা সবাই ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের বিভিন্ন হলের ছাত্র।

আহত মাহমুদুল জানান, বিজয় ৭১ হলের সামনে বিকাল ৩ টার দিকে ইট পাটকেল ও লাঠির আঘাতে আহত হন তারা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে দুই পক্ষই এদিন রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল, যা নিয়ে উত্তেজনা চলছিল সকাল থেকেই।

দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকেই বিক্ষোভ সমাবেশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হতে থাকেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা।

ছাত্রলীগ একই জায়গায় বিকাল ৩টায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিলেও কোটাবিরোধীরা ওই জায়গা দখল করে রাখায় সরকার সমর্থক সংগঠনটির নেতাকর্মীরা জড়ো হন মধুর ক্যান্টিনে।

এর মধ্যেই বিকাল সোয়া ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল এবং মাস্টারদা সূর্যসেন হলের কাছে দুই পক্ষের মধ্যে ঢিল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়।

এরপর আন্দোলনকারীদের একটি অংশ লাঠিসোঁটা নিয়ে মল চত্বরে অবস্থান নেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগের কর্মীরা অবস্থান নেন মধুর ক্যান্টিন, বিজয় একাত্তর ও সূর্যসেন হলের ভেতরে।

বিকাল পৌনে ৪টার দিকে মধুর ক্যান্টিন ও বিভিন্ন হল থেকে বেরিয়ে এসে ছাত্রলীগ কর্মীর মল চত্বর থেকে আন্দোলকারীদের ধাওয়া দিয়ে ভিসি চত্বরে নিয়ে যায় এবং পিটুনি শুরু করে।

হামলার মুখে কোটা আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশ দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে। অন্যদিকে ছাত্রলীগ কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ভিসি চত্বরসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশে অবস্থান নেয়।

সংঘর্ষের পর কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছাত্রলীগ আমাদের উপর ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। আমাদের নারী শিক্ষার্থীদের তারা বেধড়ক পিটিয়েছে।এই হামলায় অন্তত দুইশত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অনেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের শিক্ষার্থী সুলতানা আক্তার বলেন, “আমরা কখনো ভাবি নাই ছাত্রলীগ এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করবে। আমরা নারী শিক্ষার্থীরা অনেকে দৌড়ে পালাতে পারি নাই। ছাত্রলীগের কর্মীরা হেলমেট পরে আমাদেরকে বেধড়ক মারধর করেছে, লাঠিপেটা করেছে। নিজের ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীরা কতটা অসহায়, ছাত্রলীগ আজকে প্রমাণ করল।”

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের নেতাকর্মীদের তারা উসকে দিয়েছে। আমরা খুব দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছি। আজকে তাদেরকে আমরা ৫ মিনিটে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছি।

“সাধারণ শিক্ষার্থীদের আমরা বলব, আপনারা আন্দোলন থেকে সরে যান। আপনারা ২০ পার্সেন্ট সরে গেলে, দেখা যাবে বাকি ৮০ শতাংশ পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিস্ট। পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিস্টদের কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়, সেটা আমরা জানি।”

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শয়ন বলেন, “ওরা সাধারণ শিক্ষার্থী নয়, তারা বিএনপির ইশরাকের (বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন) কর্মী। আপনারা গণমাধ্যম অন্ধ হয়ে গেছেন। এই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থী ১০ থেকে ২০ শতাংশ। বাকি ৮০ শতাংশ শিবির-ছাত্রদলের অ্যাক্টিভিস্ট।

“জামায়াত-শিবির, ছাত্রদলকে আমরা যুগে যুগে পরাজিত করেছি। তারা কোনো কিছুই করতে পারে নাই। এবারও কিছু করতে পারবে না।”

সংঘর্ষের সময় ছাত্রলীগের তিন থেকে চারজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে মাজহারুল কবির শয়নের ভাষ্য।

২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা দুই সপ্তাহ ধরে টানা আন্দোলন চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতেই ফয়সালা করতে হবে।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে সরকারপ্রধান বলেন, “কোটা আন্দোলন করার আগে তো তোদের রেজাল্টগুলো দেখা উচিত ছিল যে- কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে! দ্বিতীয়টি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি পুতিরা (চাকরি) পাবে?

“মুক্তিযোদ্ধাদের অপরাধটা কী? নিজের জীবন বাজি রেখে, নিজের পরিবার সংসার সব বাদ দিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, খেয়ে না খেয়ে, কাদা মাটিতে রোদ বৃষ্টি ঝড় সব উপেক্ষা করে যুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করেছে। মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় এনে দিয়েছিল বলেই সবাই উচ্চপদে আসীন, আজকে বড় গলায় কথা বলতে পারছে। নইলে পাকিস্তানিদের বুটের লাথি খেয়ে মরতে হত।”

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে ‘মর্মাহত’ হয়ে রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষালয়ে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ দেখান; যেখানে স্লোগান দেওয়া হয়, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার; কে বলেছে কে বলেছ, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “স্বাধীন বাংলাদেশে সবাই রাজাকারকে সবাই ঘৃণা করে, আমাদেরকে রাজাকার বলে সম্বোধন করা হয়েছে। ২ পারসেন্ট ছাড়া বাকি ৯৮ পারসেন্ট রাজাকার? এটা ছাত্রদের আহত করেছে।”

মিছিলে অংশ নেওয়া হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর মুখে এ ধরনের কথা আমরা কখনোই প্রত্যাশা করিনি। তিনি কোটা আন্দোলনকারীদের রাজাকারের নাতিপুতি বলেছেন, এর চেয়ে জঘন্য কথা আর কী হতে পারে?

“হাজার হাজার শিক্ষার্থী কোটা আন্দোলনে স্বেচ্ছায় অংশ নিয়েছে। সবাই কি রাজাকারের নাতিপুতি?”

রাত ১টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর টিএসসি এলাকায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খানসহ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের দেখা যায়। পরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রলীগ।

মিছিলে ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা’ প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়। রাত ৩টার পর রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ছাত্রলীগ সমাবেশ করে। সমাবেশ থেকে সোমবার বেলা ৩টায় রাজু ভাস্কর্যে প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।

তিনি বলেন, “বাঙালির মহান স্বাধীনতাকে কটাক্ষ, একাত্তরের ঘৃণিত গণহত্যাকারী রাজাকারদের প্রতি সাফাই এবং আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীলতা তৈরির প্রতিবাদে এ সমাবেশ হবে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরাও সমাবেশে অংশ নেন।

এ সময় তারা নিজেদের দাবির পক্ষে স্লোগান, প্রতিবাদী গান ও কবিতায় কর্মসূচি চালিয়ে যান।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ‘কে বলেছে রাজাকার, ধিক্কার ধিক্কার’, ‘তুমি নও, আমি নই, রাজাকার রাজাকার’, ‘আমি কেন রাজাকার, জবাব চাই জবাব চাই’, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে’, ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারও বাপের না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম সমাবেশে বলেন, ”গতকাল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের উদ্দেশ্য করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যা বলেছেন, তা আমাদেরকে আশাহত করেছে। আমাদের দাবির বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর উপর আস্থা রেখেছিলাম। কিন্তু গতকাল তিনি যা বলেছেন, এতে আমাদের আস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আমরা চাই, অবিলম্বে তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন।

“আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের যেভাবেই ব্লেম দেওয়া হোক না কেন, আমাদের উদ্দেশ্য একটিই, সেটা হল কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার। এই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।”

তিনি বলেন, “উন্নত, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার কোনো বিকল্প নাই। ৫৬ শতাংশ কোটা উন্নত বাংলাদেশের সঙ্গে যায় না। ৫৬ শতাংশ কোটা কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না।”

২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছে। তারা প্রথমে সেই পরিপত্র ফিরিয়ে আনা অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার দাবি জানালেও পরে সংস্কারের দাবি তুলেছে।

গত সপ্তাহে মঙ্গলবার বাদ দিয়ে প্রতিটি কর্মদিবসেই তারা বাংলা ব্লকেড নামে অবরোধ কর্মসূচি পালন কলে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে। বুধবার পর্যন্ত তারা নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন করলেও বৃহস্পতিবার থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়, একাধিক এলাকায় বাধাও দেওয়া হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কোটা নিয়ে হাই কোর্টের রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন না করে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার এবং আদালতে এসে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।

তবে শিক্ষার্থীরা সংসদ অধিবেশন ডেকে কোটার বিষয়ে ফয়সালা চাইছেন, আর ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন।

রোববার শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি মেনে নিতে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দেন। এতে জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে কোটা সংস্কারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলে নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন।

পরে বিকালে প্রধানমন্ত্রী চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “কোটার বিষয়টি ফয়সালা হবে আদালতেই। আর রাস্তায় ধ্বংসাত্মক কিছু হলে আইন নিজস্ব গতিতে চলবে।”

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!