হাওর ডেস্ক::
ঢাকার যাত্রাবাড়ীর কাছে শনির আখড়ায় পুলিশের ওপর ‘একদল লোক’ অতর্কিতে হামলা করার পরিপ্রেক্ষিতে দুই ঘণ্টার সংঘাতে শিশুসহ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ছয়জন, যারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছেন।
আহত শিশুটির বয়স দুই বছর। বাড়ির গেটের ভেতরে থাকা অবস্থায় তার গায়ে গুলি লাগে।
পুলিশ বলছে, হামলাকারীরা কোটা সংস্কারের আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থী বলে মনে হয়নি তাদের কাছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের এডিসি মো. আলাউদ্দীন বলেন, উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শনির আখড়া এলাকায় বিকাল সোয়া ৫টার দিকে হঠাৎ করে কিছু ‘উচ্ছৃঙ্খল লোক’ এসে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের চার সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন।
এডিসি আলাউদ্দীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, সংঘাত সৃষ্টির পর শনির আখড়ায় অতিরিক্ত পুলিশ গেলে ‘হামলাকারী’দের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে থেমে থেমে সংঘাত চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
সংঘাতে পুলিশ ও হামলাকারী ছাড়াও কয়েকজন পথচারী আহত হয়েছেন বলে শুনেছেন এডিসি আলাউদ্দীন।
পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডিসি ইকবাল হোসাইন বলছেন, “শনির আখড়ায় যারা সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে, তারা কেউ শিক্ষার্থী নন। তারা কোটা সংস্কারে দাবিতে এমনটা করেছেন, সেটাও মনে করার কোনো কারণ নেই। ”
যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাকির হোসেন বলছেন, পুলিশের ওপর হামলা ছাড়াও হামলাকারীরা বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর করে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে আহত সাতজন ঢামেক হাসপাতালে এসেছেন। তাদের মধ্যে দুই বছরের একটি শিশুও রয়েছে।
ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য আসা ব্যক্তিরা হলেন সোহাগ (২৭), ইমরান (২৭), মাহিম আহামেদ পিয়াস (১৭), মনিরুল (২০), শিশু রহিদ (২) ও তার বাবা কাঁচামাল ব্যাবসায়ী বাবু মিয়া (৪০)।
ইমরানের গুলি লেগেছে মাথায়। রাত সাড়ে ১১ টায় অস্ত্রোপরারের পর তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে।
বাবু মিয়া বলেছেন, শনির আখড়ায় পাঁচতলা বাড়ির নিচতলায় থাকেন তারা। সংঘাতের সময় তার ছেলে কান্নাকাটি শুরু করলে তিনি ছেলেকে নিয়ে বাড়ির কেঁচি গেটের (কলাপসিবল গেট) কাছে এসে দাঁড়ান। ওই সময় বাইরে থেকে ছররা গুলি এসে তার মুখে ও তার ছেলে রহিদের বুকে লাগে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে মঙ্গলবার সারা দেশে কোথাও কোথাও আন্দোলনকারী এবং সরকার দলীয় সংগঠন ও পুলিশের ত্রিমুখী সংর্ঘের মধ্যে ছয়জন নিহত হন। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষার্থীরা হল ছাড়া শুরু করেন।
এর মধ্যেই মঙ্গলবার নিহতদের স্মরণে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো বুধবার ঢাকায় গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি পালন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও গায়েবানা জানাজা ও প্রতীকী কফিন মিছিল করার সময় তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়।
বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোটা সংস্কারের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জন্য অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
এরপর রাত পৌনে ৮টার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে খুনের দায়ে জড়িতদের বিচার ও সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে বৃহস্পতিবার সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা আসে আন্দোলনকারীদের পক্ষে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ তার ফেসইবুক প্রোফাইলে এ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন। একই বার্তা তিনি সাংবাদিকদের কাছেও পাঠিয়েছেন্।