হাওর ডেস্ক::
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য শিগগিরই বিদেশে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দোয়ার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, “ম্যাডামের জন্মদিনে একটা সুসংবাদ দিতে চাই আমি। আল্লাহ যদি রহম করেন, ম্যাডামকে অতি শগগিরই আমরা বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
“আমরা উনার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করব, পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যেন আমাদের মাঝে ফিরে আসেন।”
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থারাইটিস, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের অক্টোবরে হাই কোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। ওই বছরের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন খালেদা। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন।
এরপর থেকে পরিবারের আবেদনে প্রতি ছয় মাস পরপর বিএনপি নেত্রীর মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে আসছিল শেখ হাসিনার সরকার। প্রতিবারই তাকে দুটি শর্ত দেওয়া হচ্ছিল। তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।
সাময়িক মুক্তির পর তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পরিবারের তরফ থেকে বেশ কয়েকবার আবেদন করা হলেও ওই শর্তের যুক্তি দিয়েই বার বার তা প্রত্যাখ্যান করেছে শেখ হাসিনার সরকার।
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিনই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন।
গত ২৩ জুন এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে ‘পেসমেকার’ বসানো হয়।
এর আগে গতবছরের অক্টোবরে তার লিভার সিরোসিস রোগের চিকিৎসা দিতে ঢাকায় আসেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত জনস হপকিন্স হাসপাতালের তিন চিকিৎসক।
এরপর গত ৮ জুলাই থেকে আবার বসুন্ধরার এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তার চিকিৎসা চলছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে নিয়ে এক মাস ৮ দিন এভাকেয়ার হাসপাতালে আছেন ম্যাডাম। গত দুইদিন যাবত উনার অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল বলা যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তাকে থাকতে হয়। এখন সিসিইউর সুবিধা সমেত কেবিনে তার চিকিৎসা চলছে।”
বিদেশে মাল্টিপল সেন্টারে উনাকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকার এটায় কর্ণপাত করেনি। এখন সেই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটেছে। অন্তর্কতীকালীন সরকার এসেছে, ম্যাডাম মুক্তি পেয়েছেন। আমরা এখন তাকে বিদেশে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।”
শুক্রবার নয়া পল্টনে বিএনপির মিলাদ মাহফিলে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও আশু সুস্থতা কামনা এবং চলমান আন্দোলনে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করে মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নেসারুল হক।
খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৫ অগাস্ট।
বিএনপি নেতাকর্মীরা এক সময় ১৫ অগাস্ট ঘটা করে কেক কেটে তাদের নেত্রীর জন্মদিন পালন করতেন। ২০১৬ সাল থেকে তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু দিন জাতীয় শোক দিবসের দিন ঘোষণা করার পর থেকে দলীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি না দিয়ে পরদিন মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করে আসছে বিএনপি।
চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে খালেদা জিয়া চতুর্থ। বাবা এস্কান্দর মজুমদার, মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। পৈত্রিক নিবাস ফেনীর ফুলগাজী হলেও তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরে বাবার কর্মস্থলে।
১৯৮১ সালের ৩০ মে স্বামী সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর রাজনীতির অঙ্গনে পা রাখেন গৃহবধূ খালেদা। প্রথমে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৪ সালে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন তিনি।
১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ মেয়াদে দুই দফা বিএনপি সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন খালেদা জিয়া।