স্টাফ রিপোর্টার::
আমি বাংলা মায়ের ছেলে, শোষক তুমি হও হুশিয়ার, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, কেন পীরিত বাড়াইলারে বন্ধুসহ অসংখ্য গণসঙ্গীত ও বাউল গানের রচয়িতা বাউল স¤্রাট শাহ আবদুল করিমের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। জারি, সারি, মুর্শিদী, দেহতত্ব, প্রেম, বিচ্ছেদ ও জাগরণের গান গেয়ে জীবদ্দশায়ই তিনি কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। বিশেষ করে জাতীয় জাগরণ, বৈশ্বিক জাগরণ নিয়ে তিনি সর্বহারা মানুষের জন্য অনেক গান রচনা করে অমর হয়ে আছেন। গবেষকরা তাকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ট জাগরণ শিল্পী হিসেবে অভিহিত কেেরছন।
নানা কারণে এই বাউল মহাজনের স্মৃতি আজ হুমকির মুখে। একটি স্মৃতি সংগ্রহশালার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে তার জীবদ্দশার স্মৃতি বিজড়িত অনেক উপকরণ। তার সৃষ্টি চর্চা ও স্মৃতি সংরক্ষণে বাউল শীষ্যরা দাবি জানিয়েছেন।
বাউল স¤্রাট শাহ আবদুল করিমের ধ্যানের উজানধলের আকাশে এখন শরতের শ্বেতশুভ্র মেঘ। বরাম হাওর ও কালনী নদী তীরের গ্রামঘেরা বাড়িতে সব সময়ই আসেন ভক্ত-শীষ্য। বাউলের বসতঘরের বিছানা এখন পড়ে থাকে শুন্য। দেওয়ালে ঝুলানো ছবি, বিভিন্ন সময়ে পাওয়া সম্মাননা ক্রেস্টগুলো জানান দিচ্ছে তার শ্রেষ্টত্বের। বসতঘর লাগোয়া তার সমাধীর পাশেই অবহেলায় পড়ে আছে জীবদ্দশার একমাত্র স্বপ্ন ‘শাহ আবদুল করিম সঙ্গীতালয়’। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যাক্তিরা বাউলের মৃত্যুর আগে পড়ে বিভিন্ন সময়ে সঙ্গীত বিদ্যালয়টি চালুর পৃষ্টপোষকতার ঘোষণা দিলেও কেউ কথা রাখেননি। বাউলের স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার ভক্ত-শীষ্যরা। বাউল স¤্রাটের সৃষ্টি ধরে রাখতে ও স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রয়ারি দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম বাউল স¤্রাট শাহ আবদুল করিমের। দেশ বিদেশের কোটি কোটি সঙ্গীতানুরাগীর সম্মানসহ রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার একুশে পদকসহ নানা পুরস্কার। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, গণঅভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন সংগ্রামে বাঙ্গালি তার গানে প্রেরণা পেয়েছে। গান গেয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহচর্য্য পেয়েছেন। সারা জীবনই তিনি সর্বহারা শ্রেণিকে গানে গানে শক্তি ও সাহস জুগিয়েছেন।
জীবদ্দশায় বাউল আবদুল করিমের একমাত্র স্বপ্ন সঙ্গীত বিদ্যালয় চালু ও তার স্মৃতি রক্ষায় স্মৃতি সংগ্রহশালা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে এমনটাই প্রত্যাশা বাউল ভক্ত-শীষ্যদের।
বাউলপুত্র শাহ নূরজালাল বলেন, বাবার একমাত্র স্বপ্ন ছিল তার সঙ্গীত বিদ্যালয়টি চালু হবে। কিন্তু সরকারি বেসরকারি অনেকেই প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরে কোন খবর রাখেননি। শাহ আবদুল করিমের সৃষ্টি রক্ষায় তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এদিকে এই সঙ্গীত মহাজনের মৃত্যুবার্ষীকী উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করেছেন শাহ আবদুল করিম স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদ। এছাড়াও বাউলের বাড়িতে আলোচনাসভা ও মিলাদের আয়োজন করা হয়েছে।