অনলাইন::
সাম্প্রতিক রাখাইন পরিস্থিতিতে জাতিগত দ্বন্দ্ব নাটকীয় পর্যায়ে উত্তীর্ণ দাবি করে উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুয়েতেরেজ। রাখাইনে চলমান সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে তাদের শরণার্থী হিসেবে মর্যাদা দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এসব কথা বলেন তিনি।
গত তিন সপ্তাহে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশের হাতে প্রায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ১ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান জেইদ রা’দ আল ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞের পাঠ্যপুস্তকীয় দৃষ্টান্ত’ আখ্যা দিয়েছেন। মহাসচিব গুয়েতেরেজ এরআগে প্রশ্ন রেখেছেন, এক তৃতীয়াংশ মানুষ দেশ থেকে উচ্ছেদ হলে তাকে জাতিগত নিধন ছাড়া আর কী নামে ডাকা যায়।
জাতিসংঘ অধিবেশনে গুয়েতেরেজ বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত দ্বন্দ্ব নাটকীয় মাত্রায় পৌঁছার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। নির্যাতন-নিপীড়ন, সামাজিক বৈষম্য, চরমপন্থা এবং সহিংস দমন প্রক্রিয়ার কারণে এরইমধ্যে ৪ লাখেরও বেশি মানুষ দেশ ছেড়েছে। এতে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ঝুঁকির মুখে পড়েছে।’
টেলিভিশনে প্রচারিত জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সু চি মঙ্গলবার বলেন, রাখাইনের সব জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগ গভীরভাবে অনুভব করে তার সরকার। সেখান থেকে মুসলমানদের পালিয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার খবরে তার সরকার উদ্বিগ্ন। মুসলমানরা কেন পালাচ্ছে, তা সরকার খুঁজে বের করতে চান বলেও তিনি জানান। সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানান। প্রতিশ্রুতি দেন দ্রুত আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করবেন। প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিব জানান, তিনি সু চির আজকের বক্তৃতায় নজর রেখেছিলেন। সু চি দ্রুত আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে চান বলে মনে করছেন তিনি।
ক্লিয়ারেন্স অপারেশন জোরদার হওয়ার পর থেকেই মিলতে থাকে বেসামরিক নিধনযজ্ঞের আলামত। পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশতে শুরু করে মৌসুমী বাতাসে। মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ে দেয় সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হয় তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় মানুষকে।
জাতিসংঘ মহাসচিব সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে বলেন, অবিলম্বে মিয়ানমারে সেনা অভিযান বন্ধ করতে হবে। রাখাইনে মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের ক্ষোভের জায়গাটা বুঝতে হবে।
এর আগে এক বিবৃতিতে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ‘জাতিগত নিধন’ রুখতে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে মিয়ানমারের শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। এজন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের নেতৃত্বে নিরাপত্তা পরিষদে উন্মুক্ত আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। তবে নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে দ্রুত মিয়ানমারের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও প্রস্তাব দিয়েছে তারা।