1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
জামালগঞ্জে নবাগত জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভা সিলেটে শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসারকে অপসারণের দাবিতে গণস্বাক্ষর কার্যক্রম ২৫০ শয্যা হাসপাতালে সেবার মান বাড়ানোর দাবিতে মতবিনিময় সুনামগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও মিলাদ বন্যার্তদের সহায়তায় সুনামগঞ্জে শিল্পকলা একাডেমির ব্যতিক্রমী ছবি আঁকার কর্মসূচি জগন্নাথপুরে শিক্ষিকা লাঞ্চিত: দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সকল কালাকানুন বাতিলের দাবি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পান্নার মরদেহ হস্থান্তর করলো মেঘালয় পুলিশ কাদের সিদ্দিকী বললেন: বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এক নয় বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বন্যায় ২০ লাখ শিশু ঝুঁকিতে : ইউনিসেফ

সুনামগঞ্জ সীমান্তের রক্তরাঙা শিমুল বাগানে মুগ্ধ পর্যটক

  • আপডেট টাইম :: বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮, ২.০৬ পিএম
  • ৫২৫ বার পড়া হয়েছে

শামস শামীম:
‘নারী হয় লজ্জাতে লাল/ ফালগুনে লাল শিমুল বন/ এ কোন রঙে রঙিন হলো বাউল মন, মনরে’/ অথবা ‘ও পলাশ ও শিমুল কেন এমন তুমি রাঙালে’ বাংলা গীতি-কবিতায় চিত্তে দোলা দেওয়া এমন অনেক পঙ্কতির দেখা মিলে। বহুবর্ষজীবী ন্যাড়ামাথা শিমুলবনের ডালে ঝুলে থাকা রক্তলাল আগুনফুল তাই তপ্ত মনের চিরন্তন এক বিরহকে কোথায় যেন উড়িয়ে নিয়ে যায়; এক নিঃশুন্য অঞ্চলে। সেই অঞ্চলে রঙিন মন ওড়ে বেড়ায়, ঘুরে বেড়ায়। এক অন্তহীন সুখ মনের সমূহ অসুখকে একপাশে ফেলে প্রেয়সীকে নিয়ে অনন্তের পথে হেঁটে যেতে ইচ্ছে করে।
গত বৃহষ্পতিবার তাহিরপুর সীমান্তের দুর্গম গ্রাম মানিগাঁওয়ে শিমুল বাগানে মন হারিয়ে এসবই ভাবছিলাম। পাহাড়-নদী বিধৌত প্রকৃতিসুন্দর এমন একটি স্থানে সারি সারি শিমুল গাছ দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। সারি সারি গোলাকার গাছ, চিকন ডাল, ন্যাড়া মাথায় ঝুলে থাকা ফুলগুলো এক অন্যরকম আবহ তৈরি করে রেখেছে। মন কেমন করা আবেশে মাতিয়ে রাখছে চারপাশ।
যিনি এই বাগানের কারিগর তাঁর পছন্দ আছে বলতেই হবে। নাহলে কেন এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে লাখ লাখ টাকা খরচ করে তিনি এমন এক নান্দনিক বাগান তৈরি করলেন। অনুসন্ধানী মন সলুকসন্ধান করতে চায়। জানা গেল এই বাগান তৈরির সুন্দর মানুষটি হলেন বাদাঘাট ইউনিয়নের প্রয়াত সাবেক চেয়ারম্যান সোহালা গ্রামের হাজী জয়নাল আবেদিন। এই বৃক্ষপ্রেমি এলাকায় স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠার পাশপাশি টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় লক্ষাধিক হিজল কড়চের গাছ লাগিয়েছিলেন। এলাকার বিভিন্ন গ্রামীণ রাস্তাগুলোকেও বৃক্ষে বৃক্ষে সবুজের তোড়ণ করেছিলেন। সারি বৃক্ষই তার স্মৃতির স্মারক হয়ে আছে।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জলমহাল ব্যবসায়ী হাজী জয়নাল আবেদিনের নিয়ন্ত্রিত টাঙ্গুয়ার হাওরটি হাতছাড়া হয়ে যায়। তিনি এসময় অন্য কিছু ভাবেন। একদিন মানিগাও গ্রামের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। রুক্ষ বালুভূমি। এর মধ্যে মাহরাম নদীর কিনারে দেখলেন তিনটি লম্বাটে শিমুল গাছ। ফুলগুলো খুব সুন্দর। তার বিষণœ মন ভালো হয়ে যায়। উদ্যোগ নেন তিনি দেশের সর্ববৃহৎ শিমুল বাগান করবেন। যে চিন্তা সেই কাজ। এক প্লটে জায়গা কিনতে শুরু করলেন। কিনতে কিনতে প্রায় ৩৩ একর কিনে ফেললেন। পরে বিভিন্ন পরিবেশ সচেতন মানুষ ও নার্সারি মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিকল্পিত একটি শিমুল বাগান করার উদ্যোগ নেন। মাটিতে হাঁটু সমান সারি সারি গর্ত করতে থাকেন রোজ কামলা দিয়ে। রোদে পোড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে সেই কাজ তদারকি করেন তিনি। গর্তে দেওয়া হয় গোবরসহ বিভিন্ন প্রজাতির সার। একটি নলকুপ বসান। স্ট্যান্ড বানিয়ে বিরাট একটি পানির টেংকি বসিয়ে চারা লাগানোর পর সেচ দেওয়া শুরু করেন। প্রায় ২০০০ হাজার শিমুল বৃক্ষ লাগান তিনি। সেই বৃক্ষে তার উপস্থিতিতেই নিয়মিত সেচ দেওয়া হতো। বাগান করতে তার ১২-১৫ লাখ টাকা খরচ হয় এককালীন। বাগান করার পর যখন পত্রপল্লবে ছেয়ে গেল চারপাশটা তখন তার আনন্দ দেখে কে। নানা পরিকল্পনা নিতে থাকেন। বাগানের পাশের বড়গোপ টিলা, (বারেকের টিলা) মেঘালয় পাহাড় ও রূপের নদী যাদুকাটার সৌন্দর্য্যকে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পিত রিসোর্ট করার পরিকল্পনাও ছিল তার। কিন্তু সেটা হয়নি আর। বাগানে মুগ্ধতা বিছানো ফুল দেখে যেতে পারেননি তিনি। ঢাকা থেকে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান এই বৃক্ষপ্রেমিক ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিটি। তবে তিনি মারা গেলেও তার মনের সৌন্দর্যের খবর ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ঘুরতে আসা মানুষজন যখন টাঙ্গুয়ার হাওরে সারি সারি হিজল কড়চের বাগান দেখেন, যখন যাদুকাটা তীরের খাসিয়া পাহাড়ঘেঁষা শিমুল বাগানে প্রবেশ করেন তখন তাঁর বৃক্ষপ্রেমের কারণে তাকে অতল শ্রদ্ধা জানান।
শিমুল বাগানটির পশ্চিমে এক সময়ের ভেঙ্গে যাওয়া মাহরাম গ্রাম। উত্তরে ভরাট হয়ে যাওয়া শীর্ণ মাহরাম নদী ও বড়গোপ টিলা (বারেকের টিলা এবং খাসিয়া পাহাড়। বাগানটির নিচেই খাসিয়া পাহাড় থেকে নেমে আসা রূপের নদী যাদুকাটা। বাগানঘিরে থাকা প্রকৃতিসুন্দর এমন অনন্য স্থান পরিকল্পিত এই বাগানটিকে আরো অনন্য করে তোলছে। তাই শিমুল বাগান দেখতে আসা লোকজন বাগান মালিকের প্রশংসা না করে পারেন না। বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে বসন্তের শুরুতে বাগানের সবগুলো গাছে রক্তরাঙা ফুল ফোটায় দৃষ্টিননন্দন বাগানটির কথা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। অন্তর্জাল দুনিয়ায় ব্যস্ত মানুষের মন কেড়ে নেয় এক একটি আগুনরাঙা ছবি। ছবি দেখে নিরন্তর অন্তর্জাল স্ক্রিনে থাকা ঝাঁপসা দু’চোখ মুহুর্তে সতেজ হয়ে ওঠে তাদের। সময় সুযোগ করে তারা ছুটে আসেন সপরিবারে, সবান্ধবে। একে অন্যের হাত ধরে আগামীর স্বপ্নে বুদ তরুণ জুটি ছুটে আসে মন রাঙাতে। মুগ্ধ হয়ে হাত ধরে হাঁটেন, চোখের ভাষায় কী বলে তাহারা!
বাগানের এমাথা ওমাথা হাটা শেষে তারা বাগানের পূর্ব ও উত্তরের কিনারে দাড়িয়ে অপলক চোখে দেখেন কাছের খাসিয়া পাহাড়ের নিঝুম সীমান্ত। যাদুকাটা নদীর যাদুতে মন দোলে ওঠে। স্বচ্ছতোয়া জলের নদীটি মুখর করে রাখা সারি সারি বারকি নৌকা, পা-ুর শ্রমিকের মুখ দেখে মায়া উথলে ওঠে মনে। মন চায় পাশের বড়গোপটিলার গারো বসতিতে গিয়ে তাদের সরলতায় মুগ্ধ হতে। অনেকে এমনটা ভাবেন এবং করেনও।
বাগানে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসা কয়েকজন তরুণ তরুণির লগে কথা হয়। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাবিভাগের শিক্ষার্থী খালেদ হাসান। তার সঙ্গে বন্ধু রোমান, নিশু, তিষাসহ কয়েকজন। তারা নিচে পড়ে যাওয়া ফুলগুলো কুড়িয়ে দুর্বাঘাসের ক্যানভাসে একটি গীটারের অবয়ব দেওয়ার চেষ্টা করছিল। সারি সারি বসে খুনসুটি করছিল তারা। খালেদ জানালো এমন সময়ে এমন একটি জায়গায় এলে মনের অসুখ সেরে যায়। অন্তর্জালে বুদ নাগরিক চোখও বড্ড আরাম পায়। এখানে এসে আমি শুধু সারি সারি শিমুলের গাছ বা রক্তলাল শিমুল ফুলই দেখিনি, কাছের পাহাড় ও সুন্দর যাদুকাটা নদীটিও দেখছি। কলেজ ছাত্রী ত্বিষা জানালো, গত কয়েক বছর ধরেই সপরিবারে এখানে ঘুরতে আসে তারা আমরা। বাগানের ফুল কুড়ায়, আনন্দ করে। মনটা ভালো হয়ে যায়। সময়টা যাপন করা যায়।
তাদের কথার প্রতিধ্বনী লক্ষ্য করা আশপাশে থাকা অগুনতি মানুষ দেখে। স্বামী, স্ত্রী, সন্তানসহ ঘুরছেন তারা। বন্ধুরা মিলে হল্লা করছে। দূরন্ত বালকেরা সাইকেল চালিয়ে এমাথা ওমাথা করছে। ক্ষণিকের সুখ ধরতে যেন সবাই বিভোর!
পাশেই পেয়ে গেলাম বাগান মালিক রাকাব উদ্দিনকে। তিনি তাঁর প্রয়াত বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন। বললেন তাঁর বাবা বড় শখ করে বাগানটি করেছিলেন। কিন্তু রক্তরাঙা ফুলে ¯œাত হওয়ার আগেই তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তিনি জানালেন তাঁর বাবা আন্তর্জাতিক রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওরেও এক লক্ষ হিজল কড়চ লাগিয়েছিলেন। তিনি যখন জনপ্রতিনিধি ছিলেন তখন স্থানীয় রাস্তাগুলোকেও সুশোভিত বৃক্ষে বৃক্ষে সবুজের তোড়ণ করেছিলেন। শিক্ষা ও বৃক্ষপ্রেমে এক অনন্য মানুষ ছিলেন তিনি। তার বাবার শখের এই বাগানে একটি সাধারণ মানুষের রিসোর্ট ও ঘুরতে আসা মানুষের জন্য বাথরুমের চেষ্টা করছেন বলে জানালেন।
শিমুল নিয়ে অল্প কথা:
দক্ষিণ এশিয়ার মোটামুটি অধিকাংশ দেশেই এই বহুবর্ষী পাতাঝরা শিমুল গাছের দেখা মিলে। সরল ও বৃত্তাকার গাছগুলোর শাখা প্রশাখাও কম। তুলা উৎপাদক এই উদ্ভিদপ্রজাতির
গাছটির ইংরেজি নাম ঝরষশ Silk Cotton Tree. আমাদের বাংলায় এর সমনাম: শমিুল, লালশমিুল ও রক্তশমিুল। বজ্ঞৈানকি নাম : B.ceiba।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!