স্টাফ রিপোর্টার:
সুনামগঞ্জ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ২৮ জন কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির সম্মুখে ‘আমরা সুনামগঞ্জবাসী’র ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়। এছাড়া নিয়োগবঞ্চিতরা আজ বুধবার নিয়োগ বাতিলের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে।
নিয়োগবঞ্চিতদের দাবি, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১৪টি পদের বিপরীতে ২৮ জন কর্মচারী নিয়োগের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন রাতেই নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হলেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী ‘যোগ্যতাস¤পন্ন স্থানীয় প্রার্থীদের অগ্রাধিকার’ দেয়ার বিষয়টি আমলে নেননি নিয়োগ প্রদানে সংশ্লিষ্টরা।
তারা অভিযোগ করেন, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সংশ্লিষ্টরা স্বজনপ্রীতি করে বাইরের জেলার বেশিরভাগ ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছেন। স্বজনপ্রীতির এই নিয়োগ বাতিলের করে পুনঃনিয়োগের দাবি জানান তারা।
অ্যাড. এনাম আহমদ-এর পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু, মুক্তিযোদ্ধা হাজী নুরুল মোমেন, অ্যাড. রবিউল লেইস রোকেশ, দৈনিক সুনামগঞ্জ প্রতিদিনের সম্পাদক মো. কামরুজ্জমান চৌধুরী শাফি, অ্যাড. সালেহ আহমদ, অ্যাড. মাসুক আলম. অ্যাড. আইনুল ইসলাম বাবলু, অ্যাড. বদর উদ্দিন, অ্যাড. স্বপন কুমার দাস রায়, অ্যাড. জহুর আলী, অ্যাড. আবুল মাজন তালুকদার, অ্যাড. মো. শাহাবুদ্দিন চৌধুরী, অ্যাড. আবুল আজাদ, অ্যাড. হানিফ সুলেমান, অ্যাড. মলয় বিকাশ চৌধুরী, অ্যাড. মো. শামছুদ্দিন, অ্যাড. হাসান মাহমুদ সাদি, অ্যাড. হুমায়ুন কবির, অ্যাড. আনোয়ার হোসেন, অ্যাড. গিয়াস উদ্দিন, অ্যাড. নাসিরুল হক আফিন্দী, অ্যাড. মোশাহিদ আলী, অ্যাড. আব্দুস সালাম, অ্যাড. রুহুল তুহিন, অ্যাড. চান মিয়া, অ্যাড. বুরহান উদ্দিন দোলন, অ্যাড. কামাল হোসেন, অ্যাড. জিয়াউর রহমান, অ্যাড. অলক ঘোষ চৌধুরী, অ্যাড. মণীষ কান্তি দে মিন্টু, অ্যাড. অরুণাভ দাস সন্দীপ, অ্যাড. আব্দুল হক, অ্যাড. বজলুল রশিদ, পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী নিমাই সরকার, সাংবাদিক মানব চৌধুরী, উদীচী’র সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সাধারণ মানুষ যাদের কাছ থেকে নিরপেক্ষ বিচারের আশা রাখে সেখানে যদি দুর্নীতি হয়, সেখানে যদি অনিয়ম হয় তাহলে মানুষ যাবে কোথায়? বিগত বছরে ১৫৪টি হাওর পানিতে তলিয়ে গেছে। সুনামগঞ্জের মানুষের ঘরে কোনো খাবার নাই। তাদের সন্তানদের কষ্ট করে লেখাপড়া করিয়েছেন। এই সুনামগঞ্জের ছেলে-মেয়েরা তাদের টাকা খরচ করে একদিন দুইদিন সুনামগঞ্জে থেকে তারা পরীক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষাতে কোনো সিট প্ল্যান ছিল না, কোনো ছাপানো প্রশ্নপত্র ছিল না। যা খুশি তাই হচ্ছে। তারা কোনো নীতিমালা মানেন নাই। আমরা বিচার বিভাগের কাছে এটা আশা করি না। সুনামগঞ্জের ছেলেরা চাকরি পায় নাই। বেশিরভাগ পদই চলে গেছে সুনামগঞ্জের বাহিরে। মুক্তিযোদ্ধার ছেলেরা চাকরি পায় নাই। যেখানে ৮টা পদ মুক্তিযোদ্ধাদের পাওয়ার কথা সেখানে পেয়েছে মাত্র একজন। প্রতিবন্ধী, উপজাতি কোটায় একজনকেও দেওয়া হয় নাই।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, নিয়োগ পরীক্ষায় বলা হয়েছে নিজ জেলার মানুষরা প্রধান্য পাবেন কিন্তু সুনামগঞ্জে নিয়োগে বিচার বিভাগে স্বজনপ্রীতি হয়েছে। তারা কোনো নীতিমালা না মেনেই নিয়োগ দিয়েছেন। বাইরের জেলা থেকে আসেন এবং কিছুদিন থেকে পরে নিজ এলাকায় চলে যান। চাকরি পদশূন্য হলেও আমাদের জেলা মানুষরা চাকরি পায় না। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। আগে সংখ্যায় কম ছিল এখন তা হচ্ছে যাচ্ছেতা। এই নিয়োগ পরীক্ষায় যারা প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় হয়েছে তাদেরকে চাকরি না দিয়ে অযোগ্য বহিরাগত জেলার লোকদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। কোনো ফলাফলই পাওয়া যায় নাই এই নিয়োগ পরীক্ষায়।
বক্তারা বলেন, আমরা এই নিয়োগের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবো। আপনাদের সবাইকে নামতে হবে এবং অনতিবিলম্বে ২০১৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত চিফ জুুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করতে হবে এবং নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম করায় হাইকোর্টের কোনো বিজ্ঞ বিচারক দিয়ে এই পরীক্ষার সুষ্ঠু তদন্ত করাতে হবে। তাছাড়া নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি করায় দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ নতুন করে সরকারি নীতিমালা মেনে নতুন নিয়োগ প্রদান করতে হবে।
এছাড়া নিয়োগ পরীক্ষায় ‘অনিয়মে’র প্রতিবাদে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।