স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জের নিভৃতচারী বাউল ফকির শামছুল (৭৬) মারা গেছেন। মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার দরাদরপুর ড়ুভপসা বাড়িতে বার্ধক্যজনিত রোগে ভোগে মারা যান নিভৃতচারী এই বাউল। সুনামগঞ্জের মরমী ধারার ইতিহাসে তাকে তাঁর সময়ের সবচেয়ে উজ্জ্বল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে মারা যান। বুধবার বেলা সাড়ে ৩টায় গ্রামের মাঠে যানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের সাংষ্কৃতিক অঙ্গনের লোকজন। তারা শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
ফকির শমছুল ১৩৪৮ বাংলায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার আক্তাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা লাল মোহাম্মদ, মাতা সোনাভান বিবি। পাঁচ বছর বয়সে তিনি মাতৃহারা হন। প্রথম যৌবনেই সংসারের মায়া ত্যাগ করে পিরে কামিল শাহ নয়ান ভানু আহমেদ আলীকে মুর্শিদ হিসেবে বরণ করে সাধনা শুরু করেন। ওই সময়েই তিনি মাসিং নদীর পূর্বতীরে হাওরের পাড়ে ঘর বাঁধেন এবং এখানেই তিনি সাধনায় আত্মমগ্ন হন। নিভৃতচারী বাউল সঙ্গীত সাধনার পাশাপাশি নানা প্রজাতির পশুপাখি পালন করে তাদের সঙ্গে কথা বলতেন। শেষ বয়সে তিনি বিয়ে করেন।
ফকির শমছুল প্রায় ৬০০ গান রচনা করেছেন। ১৯৭২ সালে তাঁর গীতিগ্রন্থ ‘আশিকের রতœ’ প্রথম খ- প্রকাশিত হয়। এর পরে এই শিরোনামেই প্রথম ও দ্বিতীয় (দ্বিতীয় ও তৃতীয় খ- একত্রে) প্রকাশিত ১৯৮১ ও ১৯৮৪ সালে। ২০০৫ সালে ‘মাসিং নদীর তীরে’ (চতুর্থ খন্ড) প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে সবগুলো গান নিয়ে ‘আশিকের রতœ সমগ্র’ প্রকাশিত হয়। আশিকের রতœ সমগ্র চাহিদার কারণে দ্বিতীয় সংস্করণও প্রকাশিত হয়। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সুনামগঞ্জ জেলা তার বেশ কিছু গান সিডিতে সংরক্ষণ করে রেখেছে। তার অনেক গান দেশ বিদেশের মূলধারার বাউলদের কণ্ঠে শোনা যায়। আজীবন তিনি সঙ্গীত সাধনার মাধ্যমে মানবতার আরাধনা করে গেছেন।