অনলাইন ডেক্স:
বরিশালে সাংবাদিক সুমন হাসানকে অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের আট সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে রিপোর্ট অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) গোলাম রউফ।
মঙ্গলবার দুপুরে দক্ষিণ চকবাজারের পুরাতন বিউটি হলের সামনে ডিবি পুলিশ একটি বাসায় মাদকের অভিযান চালালে সাংবাদিক সুমন হাসান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। অভিযানের বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আট পুলিশ সদস্য মিলে সুমনের ওপর চড়াও হয়।
এসময় সুমনকে বেধড়ক মারধর ও অণ্ডকোষ চেপে ধরে অজ্ঞান করে ফেলে। পরবর্তীতে ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে জ্ঞান ফিরলে পুনরায় তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়। পরে খবর পেয়ে বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিকরা উপ পুলিশ কমিশনার গোলাম রউফকে অবহিত করলে তিনি বিষয়টি সমাধানের জন্য সকলকে তার কক্ষে নিয়ে আসেন।
এসময় সুমনের সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন ও সুমনের কাছে নির্যাতনের কথা শুনে উপ পুলিশ কমিশনার (ডিবি) উত্তম কুমার পাল ও (দক্ষিণ) গোলাম রউফ দুঃখ প্রকাশ করেন। তারা নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ডিবি পুলিশের এসআই আবুল বাশার ও তার টিমকে তাৎক্ষণিক ক্লোজড ও ওই টিমের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে রিপোর্ট অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও জানান তারা।
নির্যাতনের শিকার বেসরকারি টেলিভশন চ্যানেল ডিবিসি নিউজের ক্যামেরাপার্সন সুমন হাসান বলেন, বিউটি হল সংলগ্ন একটি বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় পুলিশের কাছে অভিযানের বিষয়টি জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের এসআই আবুল বাসার, তার টিমের সদস্য সাইফুল, মাসুদ ও আলতাফসহ ওই টিমের সকলে আমার সঙ্গে চড়াও হয়। এসময় আমি সাংবাদিক পরিচয় দিলে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আমার ওপর। একপর্যায়ে তারা আমাকে বেধড়ক মারধর শুরু করে এবং ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর জবরদস্তি করতে থাকে।
তিনি বলেন, এসময় ডিবি পুলিশ আমার বাসায় মাদক দিয়ে ধরিয়ে দেয়াসহ ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়া হয়। তবে আমি বিনা অপরাধে সেখানে না যাওয়ার জন্য বললে তারা আমার বিশেষ অঙ্গ চেপে ধরলে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। তারপর আমাকে ডিবি অফিসে নিয়ে বুকের ওপর লাথি দেয়াসহ নানা কায়দায় নির্যাতন শুরু করা হয়।
এদিকে সুমনকে নির্যাতনের খবর শুনে বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিকরা ডিবি অফিসে গেলে কতিপয় অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যর সঙ্গে সেখানে বসে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। একপর্যায়ে কয়েকজন সংবাদকর্মীকে লাথি, কিল-ঘুষিও দেয়া হয় যা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও প্রমাণ পেয়েছেন। তবে এত ঘটনার পরেও সবকিছুই অস্বীকার করেছেন ডিবি পুলিশের ওই টিমের প্রধান এসআই আবুল বাশার। তিনি জানিয়েছেন, সুমনের শরীরে কোনো হাত দেয়া হয়নি। উল্টো সুমন আমাদের মারধর করেছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার নাসির উদ্দিন মল্লিক জানান, বিষয়টি অতীব দুঃখজনক। প্রাথমিকভাবে নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়ায় এসআই আবুল বাশারসহ তার টিমের মোট আট সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে। যার মধ্যে দুইজন এএসআই ও বাকিরা কনস্টেবল।
এদিকে এই ঘটনায় বরিশালের সাংবাদিকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বরিশাল প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ সকল সাংবাদিক সংগঠন তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও বুধবার সাংবাদিক সুমন হাসানের উপর হামলার ঘটনায় বরিশাল ফটো সাংবাদিক ঐক্য পরিষদ সকালে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন।