অনলাইন::
আজ সেই ১৭ মার্চ। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিন, জাতীয় শিশু দিবস। ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড ায শেখ লুৎফুর রহমান এবং সায়রা বেগমের ঘরে জন্ম নেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুল ও কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে পড়াশনা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয থেকে স্নাতক পাশ করেন। ১৮ বছর বয সে বেগম ফজিলাতুন্নেসার সাথে তাঁর বিয়ে হয়। তাদের ২ মেয়ে- শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তিন ছেলে- শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল।
অল্পবয স থেকেই তাঁর রাজনৈতিক প্রতিভার প্রকাশ ঘটতে থাকে। ১৯৪০ সালে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগের ছাত্র সংগঠন নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। কট্টরপন্থী এই সংগঠন ছেড়ে ১৯৪৩ সালে যোগ দেন উদারপন্থী ও প্রগতিশীল সংগঠন বেঙ্গল মুসলিম লীগে। এখানেই সান্নিধ্যে আসেন হুসেইন শহীদ সোহরাওয ার্দীর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে রক্ষণশীল কট্টরপন্থী নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কর্তৃত্ব খর্ব করতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগ।
ভাষা আন্দোলনের সময় রাজনৈতিক নেতা হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন শেখ মুজিব। ১৯৪৮ সালে ভাষার প্রশ্নে তাঁর নেতৃত্বেই প্রথম প্রতিবাদ এবং ছাত্র ধর্মঘট শুরু হয় যা চূড ান্ত রূপ নেয ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে।
পঞ্চাশের দশক তাঁর রাজনৈতিক উত্থানের কাল। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেন দূরদর্শীতা এবং প্রজ্ঞাসম্পন্ন এক কুশলী রাজনৈতিক নেতা। এসময শেখ মুজিব মুসলিম লীগ ছেড়ে দেন এবং হোসেন সোহরাওয ার্দী এবং মাওলানা ভাসানীর সাথে মিলে গঠন করেন আওয ামী মুসলিম লীগ। তিনি দলের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদকের দাযি ত্ব পান। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয ী হয়ে যুক্তফ্রন্ট সরকারের কৃষি মন্ত্রী হন মুজিব। ১৯৫৬ সালে কোয ালিশন সরকারের মন্ত্রিসভায শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাযি ত্ব পান তিনি।
১৯৬৬ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর জাতীয সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। এই ছয দফা ছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায ত্ত্বশাসনের রূপরেখা।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময দানে এক ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দেন। রেসকোর্সের জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। ঐতিহাসিক এ ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে শৃংখল মুক্তির আহ্বান জানিয়ে ঘোষণা করেন, “রক্ত যখন দিযে ছি, রক্ত আরো দেবো। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড বো ইনশাল্লাহ্। … প্রত্যেকে ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো। যার যা কিছু আছে তাই নিয়েই শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে”।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ এবং সরকারী ছুটি ঘোষণা করে। যথাযোগ্য মর্যাদায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবেই পালন করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ বিনির্মাণের দৃপ্ত শপথ নিয়ে কৃতজ্ঞ বাঙালি আজ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
এদিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ শনিবার সকালে সুনামগঞ্জ কালেক্টরেট চত্বরে ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলকে’ অস্থায়ীভাবে নির্মিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, র্যালি, শিশু সমাবেশ, বেলা ১১টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুরস্কার বিতরণী, দুপুরে শিশু সদন ও শিশু পরিবারে উন্নতমানের খবার পরিবেশন, মসজিদ ও বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও প্রার্থনা, বাদ যোহর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আয়োজনে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও আলেঅচনা সভা, বিকাল ৩টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন সময়ের স্থিরচিত্র নিয়ে ছবি প্রদর্শনী, সন্ধ্যা ৬টায় সুনামগঞ্জ ঐতিহ্য জাদুগর প্রাঙ্গণে পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শনী।
এদিকে শুক্রবার বিকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মাধ্যমিক পর্যায়ে চিত্রাংকন ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, সন্ধ্যা ৬টায় সুনামগঞ্জ ঐতিহ্য জাদুগর প্রাঙ্গণে পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।